সুপ্রভাত ডেস্ক :
কর্ণফুলী নদী রক্ষায় চট্টগ্রাম বন্দরের তহবিল থেকে অর্থ খরচের তাগাদা দিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন।
গতকাল শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ‘কর্ণফুলী নদীকে দখল ও দূষণমুক্ত করার’ দাবিতে আয়োজিত সাম্পান শোভাযাত্রা শুরুর আগে এ আহ্বান জানান তিনি। খবর বিডিনিউজের।
সাবেক মেয়র নাছির বলেন, ‘এই কর্ণফুলী নদীকে বাঁচাতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে চট্টগ্রাম বন্দর। তাদের বার্ষিক আয় ৩২ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
‘তাদের তহবিল থেকে একটি ন্যূনতম অংশ যদি কর্ণফুলী রক্ষায় ও চট্টগ্রাম উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ হয় তাহলে কর্ণফুলী বাঁচবে এবং চট্টগ্রাম নগরীর চেহারা পাল্টে যাবে।’
নাছির বলেন, ‘এই বন্দর জাতীয় অর্থনীতির হৃৎপি-। অথচ যেই নদীটির তীরে চট্টগ্রাম বন্দর গড়ে উঠেছে, তাকে চেতন বা অবচেতন মনে প্রতিদিন হত্যা করে চলেছি। প্লাস্টিক ও পলিথিন আগ্রাসনে এবং নানা ধরনের অপচনশীল বর্জ্যে কর্ণফুলী নদীর প্রায় ২০ ফুট গভীরতা কমে গেছে।
‘এই পলিথিন স্তুরের কারণেই নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং চালানো দুরুহ হয়ে পড়েছে। নদীর তীরবর্তী প্রায় ৮০ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে গড়ে ওঠা ৩০০টিরও বেশি কলকারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের দূষিত তরল বর্জ্য এই নদীতেই ফেলা হচ্ছে। তাই এই নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে উঠেছে।’
তিনি বলেন, ‘নদীতে মাছের বিচরণের পরিবেশ নেই বললেই চলে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন চট্টগ্রাম ওয়াসার সুয়ারেজ সিস্টেম কর্ণফুলী নদীমুখী হবে কেন? আরেকটি প্রশ্ন, নদীর ধারণ ক্ষমতা নেই কেন? তাই জোয়ারের পানিসহ বর্ষা মৌসুমে চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা লেগেই থাকে।
‘কর্ণফুলী শুধু একটি নদী নয় জাতীয় অর্থনীতির প্রাণ প্রবাহ। কর্ণফুলী বাঁচাতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আমাদের সচেতনতা। কর্ণফুলী নদীতে যাতে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠতে না পারে এবং নদী ভরাট করে দখল না হয় এবং আমরা কেউ যেন সামান্য পরিমাণও কর্ণফুলী নদীকে দূষিত না করি। তাহলে কর্ণফুলী নদী রক্ষা উদ্যোগ অনেকাংশে সফল হবে।’
নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘কর্ণফুলী না বাঁচলে চট্টগ্রাম বন্দর বাঁচবে না। চট্টগ্রাম বন্দর না বাঁচলে, বাংলাদেশের বেঁচে থাকার কোন অর্থ হয় না। তাই কর্ণফুলীকে বাঁচানো শুধু চট্টগ্রামবাসী নয়, রাষ্ট্র-সরকার ও দেশের ১৮ কোটি মানুষের একটি পবিত্র নৈতিক দায়িত্ব।
‘কর্ণফুলী, বুড়িগঙ্গা নদীসহ অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নদনদীগুলোকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন তার শতভাগ বাস্তবায়ন চাই। কর্ণফুলী বাঁচাতে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন দল-মত নির্বিশেষে একটি সামাজিক আন্দোলন। এ আন্দোলন কারও বিরুদ্ধে নয়, তবে যারা কর্ণফুলী নদী দখল করে রেখেছেন এবং নানাভাবে দূষণ করে চলেছেন তাদের বিরুদ্ধে।’
নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদের সঞ্চালনায় এ সময় বক্তব্য রাখেন নগর কমিটির উপদেষ্টাম-লীর সদস্য সফর আলী, সম্পাদকম-লীর সদস্য মশিউর রহমান চৌধুরী, মোহাম্মদ হোসেন, আবু তাহের, কর্ণফুলী গবেষক অধ্যাপক মো. ইদ্রিস আলী, কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি ফেডারেশনের সভাপতি এস এম পেয়ার আলী, মাঝি কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, জাফর আহমদ প্রমুখ।
‘মুজিব শতবর্ষ’ উপলক্ষে আয়োজিত এই সাম্পান শোভাযাত্রাটি অভয়মিত্র ঘাট থেকে শুরু হয়ে কর্ণফুলী তৃতীয় সেতু পর্যন্ত গিয়ে আবার অভয়মিত্র ঘাটে ফিরে আসে। এতে ১০০টি সাম্পান অংশ নেয়।
এ মুহূর্তের সংবাদ