১৯৬৯ সালে ঢাকা-লাকসাম কর্ডলাইন নির্মাণে পরিকল্পনা ও সমীক্ষা সম্পন্ন হয়। এতে বলা হয়, লাকসাম থেকে নারায়ণগঞ্জ হয়ে ঢাকা পর্যন্ত কর্ডলাইন নির্মাণ হলে ঢাকা-চট্টগ্রামে মাত্র ২ ঘণ্টায় ভ্রমণ সম্ভব। কিন্তু বর্তমানে রেল অবকাঠামোতে চট্টগ্রাম থেকে একটি আন্তঃনগর ট্রেন কুমিল্লা, লাকসাম, আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আশুগঞ্জ, ভৈরব, নরসিংদী, টঙ্গী, বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন হয়ে বৃত্তাকার পথে ঘুরে ঢাকায় পৌঁছতে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা সময় লাগে। ঢাকা-লাকসাম কর্ডলাইনটি নির্মাণ হলে বর্তমান গতিতে ট্রেন চললেও সময় লাগবে মাত্র ৩ ঘণ্টা। কর্ডলাইনে সর্বোচ্চ ১৬০ কিলোমিটার গতি নিয়ে ট্রেন চলতে পারবে। এতে ২ ঘণ্টারও কম সময় লাগবে। কর্ডলাইনের সঙ্গে লাকসাম থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত লাইন ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন করে নিলেই হবে, যা ওই পথে চলমান লাইনকে খুব সহজে কর্ডলাইনে পরিণত করা সম্ভব।
রেলওয়ে পরিকল্পনা দপ্তর সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০০৬ সালে ঢাকা-লাকসাম কর্ডলাইন নির্মাণ সমীক্ষা সম্পন্ন করে এসএম এএমইসি ইন্টারন্যাশনাল পিটি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এতে বলা হয়- এ লাইন নির্মাণে ২৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা (৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার) ব্যয় হবে। ব্রডগেজ ডিজাইন স্পিড ১৬০ কিলোমিটার হবে। এতে যাত্রী ও মালবাহী উভয় ট্রেন চলাচল করতে পারবে। অথচ হাইস্পিড লাইন নির্মাণ করতে হলে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
এদিকে, রেলওয়ে পরিকল্পনা দপ্তরের তৈরি একটি ছকে দেখানো হয়েছে-একই রুট হয়ে হাইস্পিড লাইনে চলাচল করতে মাত্র সোয়া ঘণ্টা (৭৫ মিনিট) সময় লাগবে। তবে এটি নির্মাণ করতে ১০ থেকে ১২ বছর সময় লাগতে পারে। অর্থের জোগানও অনিশ্চিত। নতুন রোলিং স্টক লাগবে এবং এর মেরামত কারখানা নির্মাণ করতে হবে। স্ট্যান্ডার্ড গ্যারেজের জন্য নতুন রোলিং স্টকেরও প্রয়োজন হবে। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনে কার্বন নিঃসরণ হবে। হাইস্পিড লাইনে মালবাহী ট্রেন পরিচালনা করা যাবে না।
অপরদিকে কর্ডলাইনে চলাচল করলে সময় লাগবে প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। নির্মাণ করতে সময় লাগবে সাড়ে তিন থেকে
চার বছর। এডিবি থেকে অর্থের সংস্থান হবে। যাত্রী ও মালবাহী উভয় ট্রেন চালানো যাবে। কর্ডলাইন হলে ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে একই ট্রেন দিয়ে ডাবল ট্রিপ দেওয়া যাবে। ফলে বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ যাত্রী পরিবহন করা যাবে। বর্তমানের চেয়ে যাত্রীদের কম ভাড়াও গুনতে হবে। এছাড়া এ পথে বৈদ্যুতিক ইঞ্জিন চালানো সম্ভব। কর্ডলাইনে ঘণ্টায় ১৬০ কিমি গতিতে ট্রেন চালানো যাবে। বর্তমানে ঘণ্টায় ৩৪ থেকে ৬৬ কিলোমিটার গতি নিয়ে ট্রেন চলে।
রেলওয়ে পরিকল্পনা, প্রকৌশল, বাণিজ্যিক, অবকাঠামো দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে নিরাপদ ও কম সময়ের মধ্যে ট্রেন চালাতে কর্ডলাইনের কোনো বিকল্প নেই। প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা ব্যয়ে হাইস্পিড লাইন তৈরির দিকে যাওয়া কোনমতেই উচিত হবে না। আর এত অল্প দূরত্বে হাইস্পিড লাইন পৃথিবীর কোনো দেশে নেই।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আরও জানান, হাইস্পিড লাইন রক্ষণাবেক্ষণে বছরে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। এ লাইনে টিকিটের দাম হবে বিমান ভাড়ার কাছাকাছি। ফলে হাইস্পিড ট্রেনে আশানুরূপ যাত্রী কখনোই পাওয়া যাবে না। বিমানের সমান ভাড়া হলে হাইস্পিড ট্রেনে সাধারণ যাত্রীদের যাতায়াত কিছুতেই সম্ভব হবে না। কর্ডলাইন হলে বর্তমান ভাড়ার চেয়ে আরও কম মূল্যে যাত্রীরা যাতায়াত করতে পারবেন। হাইস্পিড লাইন প্রকল্পে বড় বিনিয়োগ করলে রেল আরও লোকসানের মুখে পড়বে। বর্তমানে রেল বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা লোকসান গুনছে।
রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বর্তমান সরকার রেল উন্নয়নে আমূল পরিবর্তন আনছে। আমরা রেলকে অত্যাধুনিকভাবে সাজাচ্ছি। তিনি বলেন, ঢাকা-লাকসাম কর্ডলাইনের কোনো বিকল্প নেই। এটি নির্মাণে আমরা বিশেষভাবে কাজ করছি। তবে ২০০৬ সালে যে সমীক্ষা হয়েছে তা আপডেট করা হচ্ছে।
রেলপথমন্ত্রী সুজন আরও বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড লাইন নির্মাণ প্রকল্পের সমীক্ষা শেষ হলেও আমরা এ মুহূর্তে হাইস্পিড লাইন নির্মাণের দিকে যাচ্ছি না। কারণ এতে ব্যয় অনেক বেশি। অর্থায়নেও অনিশ্চয়তা রয়েছে। কর্ডলাইন নির্মাণে অর্থের জোগান পাওয়া যাবে। আমরা এখন এদিকেই এগোচ্ছি। আরও অনেক আগেই কর্ডলাইন নির্মাণের প্রয়োজন ছিল বলে তিনি মন্তব্য করেন।