করোনা পরিস্থিতি এখন বিপজ্জনক মোড় নিয়েছে। গত ২দিন এ যাবতকালের সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, ৫ হাজারেরও বেশি। গত দুইদিনে মৃত্যুর সংখ্যা ৪৫, গত ৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। জনগণের স্বাস্থ্যবিধি না মানা, অসচেতনতা, সরকারি প্রশাসনের অনেকটা গাছাড়া ভাব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সকল সময়ের সক্রিয়তার অভাবের কারণে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনা পরিস্থিতির অবনতিশীল অবস্থা চলেছে, করোনার নতুন ধরণও মারাত্মক শারীরিক বিপদ নিয়ে দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় চিকিৎসাসেবার বিষয়টিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া উচিত ছিলো, এখন দেখা যাচ্ছে হাসপাতালগুলোতে ঠাঁই নেই অবস্থা। আইসিইউতে জায়গা নেই অথচ গুরুতর অসুস্থ রোগীদের আইসিইউ প্রয়োজন। আইসোলেশন বেডে চিকিৎসা দিতে শয্যা বর্তমান চাহিদার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে রোগীরা নগরীর হাসপাতালগুলিতে আসছেন চিকিৎসা নিতে। নগরীর রোগীরাও এই সাথে দৌড়ঝাঁপ করছেন এ হাসপাতাল থেকে ওই হাসপাতালে। সরকারি হাসপাতাল মাত্র ২টি। আমরা মনে করি সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড শয্যা সংখ্যা, আইসিইউ বাড়াতে হবে। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সকল সংস্থার সরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্র এবং নির্মীয়মাণ সরকারি ভবনগুলিতে করোনা চিকিৎসা প্রয়োজনে চালু করতে হবে, সে জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। স্বাস্থ্য অধিদফতর কেবল কতগুলি পরিসংখ্যান দিচ্ছে, যারা ঘরে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের মধ্যে কতজন মারা গেলেন তার হিসেব কি আসছে। শনাক্তরা কোথায়, কিভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন তাও জানা যাচ্ছে না। বিদেশ ফেরতদের ব্যাপারে স্বাস্থ্য পরীক্ষা কখনো শিথিল করা যাবে না।
করোনা পরিস্থিতির অবনতিতে সরকার ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি পালন অত্যাবশ্যক। রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় সমাবেশ এবং হাটবাজার, পার্ক, বিনোদন কেন্দ্রে জনসমাগম সীমিত রাখার কথা বলা হয়েছে। বাস, ট্রেনে যাত্রী সংখ্যা ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক করার কথা বলা হয়েছে। বাসে ভাড়া ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না পরিবহন কর্তৃপক্ষ কিংবা চালক-যাত্রী। যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের দেশগুলি থেকে আসা যাত্রীদের ১৪দিনের কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক, অন্য দেশ থেকে আসা প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাদের বাধ্যতামূলক করোনা টেস্ট করতে হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখতে হবে। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের ২৯টি জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বেশি সংক্রমিত এলাকায় আংশিক লকডাউনের বিষয় বিবেচনা করার কথা বলছেন। তাঁরা রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠন, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সকলকে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জনগণকে সচেতন ও প্রশাসনকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছেন। করোনার সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যাতে স্থিতিশীল ও সহনীয় থাকে সে ব্যাপারে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ওষুধের দাম যাতে মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। বিগত দিনে যেভাবে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে ওষুধ ও নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছিলো এবার যেন তা না হয়। বিপদের সময় জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে তার মোকাবেলা করতে হবে, মানুষের অসহায় অবস্থায়, দুঃখÑদুর্দশা নিয়ে মুনাফাবাণিজ্য করা উচিত নয়। বেসরকারি হাসপাতালগুলির চিকিৎসা ব্যয় সরকার বেঁধে দেবে বলেছিল, তার কি হল? জনগণকে সচেতন হতে হবে এটা প্রয়োজন কিন্তু সরকারি প্রশাসনের গজেন্দ্রগামিতার অবসান হবে কখন?
করোনা থেকে মুক্তির পথ ভ্যাকসিন গ্রহণ, এ ব্যাপারে জনগণের অনীহা কিংবা টিকা সংগ্রহে বিলম্ব কোনটাই কাম্য নয়। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট টিকা সরবরাহ স্থগিত করেছে এটি দুঃখজনক, আমাদের অন্যান্য উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের চেষ্টা জোরদার করতে হবে।
মতামত সম্পাদকীয়