নিজস্ব প্রতিবেদক :
করোনা ভাইরাসের জিনোম বিন্যাস উন্মোচন করলেন চট্টগ্রামের গবেষকরা। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) ল্যাবে চট্টগ্রামের একদল গবেষক সাতটি নভেল করোনা ভাইরাসের জিনোম বিন্যাস উন্মোচন করেছেন। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ^বিদ্যালয় (সিভাসু) এবং বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই)-এর বিজ্ঞানীদের যৌথ প্রচেষ্টায় করোনাভাইরাসের জিনোম বিন্যাস উন্মোচিত হ’ল। এই কর্মকা-ে আরো সহযোগিতায় ছিলেন- বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) চট্টগ্রামের সংশ্লিষ্ট গবেষকবৃন্দ।
জিনোম বিন্যাস উন্মোচন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গবেষক দলের সদস্য চট্টগ্রামে ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সাইয়েন্সস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি এন্ড প্যারাসাইটোলজি বিভাগের প্রফেসর ড. জুনায়েদ ছিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা ৭টি করোনা ভাইরাসের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করেছি। এসব পরীক্ষা চলছে পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের ল্যাবে। আমরা চট্টগ্রাম থেকে নমুনা সরবরাহসহ বিভিন্ন সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছি। আরো ১২টি করোনা ভাইরাসের জিনোম রহস্যের উন্মোচন করা হবে।’
প্রতিটি করোনা ভাইরাসের জিনোম কি ভিন্ন ভিন্ন হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই ভিন্ন হবে। কোন ভাইরাসটি কোথা থেকে এসেছে? মধ্যপ্রাচ্য না চীন থেকে এসেছে তা জানতে পারবো। চট্টগ্রাম আর ঢাকার আক্রান্তের বৈশিষ্ট্য ভিন্ন হতে পারে। এছাড়া চট্টগ্রামের সব এলাকার রোগীদের শরীরে থাকা করোনা ভাইরাসও ভিন্ন ভিন্ন থাকতে পারে। ’
তিনি আরো বলেন, এই গবেষণার মাধ্যমে চট্টগ্রাম এলাকার করোনা ভাইরাস সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যাবে। আর এই ধারণার ভিত্তিতে করোনা চিকিৎসা এবং করোনার টিকা তৈরিতেও সহায়তা পাওয়া যাবে। যতো বেশি নমুনার জিনোম বিন্যাস করা যাবে ততো বেশি ফলাফল পাওয়া যাবে।
জানা যায়, গবেষণা দলে ছিলেন, সিভাসু’র প্যাথলজি এন্ড প্যারাসাইটোলজি বিভাগের প্রফেসর ড. জুনায়েদ ছিদ্দিকী, মাইক্রোবায়োলজি এন্ড ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ বিভাগের প্রফেসর ড. পরিতোষ কুমার বিশ^াস, ডা. ইফতেখার আহমেদ রানা, ডা. সিরাজুল ইসলাম, বিআইটিআইডি-এর পরিচালক প্রফেসর ডা. এম.এ. হাসান চৌধুরী, প্রফেসর ডা. শাকিল আহমেদ এবং বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের ড. মো. শহীদুল ইসলাম, সাব্বির হোসেন প্রমুখ।
কতোদিন ধরে এই গবেষণা চলছে জানতে চাইলে প্রফেসর ড. জুনায়েদ ছিদ্দিকী বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে আমরা এই কাজ করছি। গবেষকবৃন্দ বিআইটিআইডি’র ল্যাবে প্রাপ্ত নমুনাসমূহ সংগ্রহ পূর্বক বিভিন্ন জেলার ১২টি নমুনা ঢাকাস্থ বিজেআরআই-এর জিনোম সিকোয়েন্স ল্যাবে প্রেরণ করেন। এই পদ্ধতিতে ইলুমিনা নেক্সটসেক প্লাটফর্মে প্রায় ২৩ গিগাবাইট জিনোম ডেটা সংগৃহীত হয়। পরবর্তীতে বায়োইনফরমেটিক্স এনালাইসিস এর মাধ্যমে মানব কোষের আরএনএ এবং করোনাভাইরাসের আরএনএ পৃথক করা হয়। এরপর সবগুলো সিকোয়েন্সকে জিনোম এসেম্বলী সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিশ্লেষণপূর্বক নভেল করোনাভাইরাসের জিনোম বিন্যাস উদঘাটন করা হয়।
জানা যায়, চট্টগ্রাম এবং পাশ^বর্তী জেলাসমূহে বিভিন্ন করোনা পজেটিভ রোগী কোন ধরনের ভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছে তা এই গবেষণার ফলে ১ম বারের মত জানা সম্ভব হবে। অধিকতর তথ্য উদঘাটনের জন্য সিভাসু আরো ২০টি নমুনা বিজেআরআই-তে প্রেরণ করেছে, যা এক সপ্তাহের মধ্যে আন্তর্জাতিক ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটাবেজে জমা দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বিস্তারলাভ করেছে করোনা। দিন দিন বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।
এ মুহূর্তের সংবাদ