বিবিসি বাংলা :
আমেরিকায় কোভিড-নাইনটিন শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা বিশ্বে সর্বাধিক সেটা একটা “সম্মানের নিদর্শন” বলে যুক্তি দেখিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
“আমি এটাকে একটা সম্মান হিসাবে দেখছি, এটা একটা ভাল লক্ষণ, কারণ এর মানে আমাদের পরীক্ষা অনেক ভাল হচ্ছে,” হোয়াইট হাউসে একথা বলেছেন মি. ট্রাম্প।
জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির হিসাব অনুযায়ী আমেরিকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ লাখ। দেশটিতে ভাইরাসে মারা গেছে প্রায় ৯২ হাজার মানুষ।
আমেরিকার পরেই রয়েছে রাশিয়া। সেখানে নিশ্চিতভাবে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় তিন লাখ।
মি. ট্রাম্প কী বলছেন?
আমেরিকায় করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব শুরু হবার পর সোমবার মি. ট্রাম্প তার মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক করেন।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “দেখুন, আপনারা যখন বলেন আমেরিকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি, তার কারণ কিন্তু আমরা অন্য সব দেশের তুলনায় সবেচয়ে বেশি পরীক্ষা করছি।”
“কাজেই আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত, আমার কাছে এটা কোন খারাপ বিষয় নয়,” তিনি বলেন, ”আমার চোখে এটা একটা কৃতিত্বের ব্যাপার, একটা ভাল জিনিস, কারণ আমাদের পরীক্ষার কাজটা সবার থেকে ভাল হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন: ”কাজেই আমার মতে একটা সম্মানের নিদর্শন। আসলেই একটা সম্মানের নিদর্শন।”
”আমাদের পরীক্ষা ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন পেশার কর্মীরা যেসব কাজ করছেন তার প্রতি একটা বিশাল সম্মানের বিষয় এটা।”
আমেরিকার কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল জানাচ্ছে তারা মঙ্গলবার পর্যন্ত ১ কোটি ২৬ লক্ষ মানুষকে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করেছে।
মি. ট্রাম্পকে সাংবাদিকরা প্রশ্নে করেছিলেন তিনি লাতিন আমেরিকা থেকে ভ্রমণের পর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বিবেচনা করছেন কি না, বিশেষ করে ব্রাজিলে। কারণ আমেরিকা আর রাশিয়ার পর এখন করোনাভাইরাস আক্রান্তের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্রাজিল। এই প্রশ্নের উত্তরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওই মন্তব্য করেন।
ডেমোক্রাটিক ন্যাশানাল কমিটি মি. ট্রাম্পের ওই মন্তব্যের সমালোচনা করে এই টুইট বার্তায় বলেছে আমেরিকায় ১৫ লাখ মানুষ কোভিড আক্রান্ত হওয়াটা “নেতৃত্বের সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয়।”
আমেরিকায় কি পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা হয়েছে?
যদিও সংখ্যার হিসাবে আমেরিকা অন্য সব দেশের তুলনায় বেশি পরীক্ষা চালিয়েছে, কিন্তু জনসংখ্যার মাথা পিছু হিসাবে আমেরিকায় সর্বাধিক সংখ্যক পরীক্ষা হয়নি। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিজ্ঞান সাময়িকী আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটার তথ্য এই খবর দিচ্ছে।
তাদের চার্ট অনুযায়ী প্রতি ১০০০ জনের মধ্যে পরীক্ষার হিসাবে আমেরিকা ১৬তম স্থানে রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার থেকে এই হিসাবে আমেরিকা এগিয়ে। কিন্তু আইসল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া এবং ক্যানাডা জনসংখ্যার আনুপাতিক হিসাবে পরীক্ষা চালানোর ব্যাপারে আমেরিকার থেকে ওপরে রয়েছে।
গত সপ্তাহে আমেরিকা প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চার লাখ মানুষের কোভিড নাইনটিন পরীক্ষা করেছে বলে জানাচ্ছে কোভিড ট্র্যাকিং প্রকল্প নামে স্বেচ্ছাসেবীদের একটি উদ্যোগ।
তবে হার্ভাড গ্লোবাল হেলথ ইনস্টিটিউট নামে একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আশীষ ঝা গত সপ্তাহে কংগ্রেসের এক শুনানির সময় জানান: “আমেরিকায় সব কিছু আবার নিরাপদে খুলে দেবার জন্য প্রতিদিন নয় লাখের বেশি মানুষকে পরীক্ষা করা প্রয়োজন। এখন আমরা মাত্র এর এক তৃতীয়াংশ করছি।”
করোনাভাইরাসের পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে আমেরিকায়। যদি দেশটির জনসংখ্যার মাথাপিছু আনুপাতিক হিসাবে আমেরিকার স্থান ছয় নম্বরে। জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী আমেরিকার ওপরে রয়েছে বেলজিয়াম, ব্রিটেন এবং ফ্রান্স।
আমেরিকায় করোনাভাইরাসের পরীক্ষা নিয়ে দুই দলের মধ্যেই সমালোচনা হয়েছে।
গত সপ্তাহে সেনেটের এক শুনানিতে রিপাবলিকান পার্টির মিট রমনি আমেরিকায় পরীক্ষার রেকর্ড-এর সমালোচনা করে বলেন, ”এই পরীক্ষা নিয়ে বড়াই করার কিছু নেই” কারণ তিনি বলেন, ”ফেব্রুয়ারি ও মার্চে আমরা কিছুই করিনি।”