নতুন করে প্রস্তুতি নিতে কমপক্ষে এক মাস সময় দিতে হবে#
পর্যাপ্ত সময় রেখে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা: আন্তঃশিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান#
ভূঁইয়া নজরুল:
‘মাত্র আট দিন পরেই ছিল উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষা। কিন্তু তখনই ঘোষণা দেয়া হলো পরীক্ষা স্থগিতের। আমরা পরীক্ষার প্রস্তুতির চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিলাম। আর করোনা পরিস্থিতির কারণে তা স্থগিত হয়ে যাওয়ায় আমাদের ক্যারিয়ারও যেনো স্থগিত হয়ে গেল।’ কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এবারের পরীক্ষার্থী রিদওয়ান মাহমুদ। শুধু রিদওয়ান মাহমুদই নয়, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডসহ সারাদেশের প্রায় সব পরীক্ষার্থীর অভিব্যক্তি এমনই।
শিক্ষার্থীদের এই মতের সাথে একমত পোষণ করেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ন চন্দ্র নাথ বলেন, ‘শিক্ষাজীবনে এইচএসসি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এই পরীক্ষার ফলাফলের উপর অনেকের ক্যারিয়ার কোন দিকে যাবে তা নির্ভর করে। কিন্তু এই পরীক্ষাটির অনিশ্চয়তায় অবশ্যই শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে প্রভাব পড়বে। কবে নাগাদ পরীক্ষা হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। করোনা এবছরের পরীক্ষার্থীদের জন্য দুর্ভাগ্যই বয়ে আনলো।’
এদিকে করোনার কারণে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১৬ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা এর আগেই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বিদায় নিয়ে নেয়। এতে অনেক শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানের আওতাভুক্তও নয়। বিধি অনুযায়ী, এসব শিক্ষার্থী বোর্ডের আওতাভুক্ত। দীর্ঘ সময় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে থাকায় শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে অবশ্যই ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
এবিষয়ে ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ লে. কর্নেল মঈনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বোর্ডের আওতাভুক্ত হলেও আমরা অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে তাদেরকে নেটওয়ার্কের আওতায় রেখেছি। প্রতিনিয়ত তাদেরকে বিষয়ভিত্তিক গাইডলাইন দেয়া হচ্ছে। তবে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে করোনা পরিস্থিতিতে পরীক্ষার মাত্র কিছুদিন আগে পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যাওয়া অবশ্যই প্রস্তুতিগত সমস্যায় পড়বে শিক্ষার্থীরা।’
তিনি আরো বলেন, এই পরিস্থিতিতে অন্ততপক্ষে পরীক্ষা শুরুর এক মাস পূর্বে পরীক্ষার পরিবর্তিত রুটিন দিয়ে দেয়া প্রয়োজন। যদি একমাস সময় পায় তাহলে শিক্ষার্থীরা আবারো পরীক্ষার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করে নিতে পারবে।
ইস্পাহানি কলেজের অধ্যক্ষের এই বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মুহম্মদ জিয়াউল হক বলেন, ‘এটা ঠিক করোনার কারণে পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু এতে তো কিছু করার নেই। একইসাথে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আবার শুরু হয়েছে বন্যা। তবে পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতির বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা তাদের প্রস্তুতির পর্যাপ্ত সময় দিয়ে পরীক্ষা নিবো। তাই এতে টেনশন করার কোনো কারণ নেই।’
পরীক্ষার্থীদের প্রতি পরামর্শ কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন যেহেতু বাসায় থাকা হচ্ছে, তাই তারা যাতে তাদের প্রস্তুতি নেয়া অব্যাহত রাখে।’
পরীক্ষার এই অনিশ্চয়তা শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জানিয়ে চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের অধ্যাপক জাহিদ মোহাম্মদ জিন্নাহ বলেন, ‘বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো টার্গেট নেই। আর টার্গেটবিহীন প্রস্তুতি নেয়া যায় না। একধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকায় পড়ালেখায় তাদের মন বসছে না। এই পরিস্থিতিতে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়বে।’
গ্রামের পরীক্ষার্থীদের চিত্র ভয়াবহ
যথাসময়ে পরীক্ষা না হওয়া ও দেশের এই পরিস্থিতিতে এবার অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়তে পারে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির সহ-সম্পাদক এবং পটিয়া খলিল মীর কলেজের অধ্যক্ষ এস এম মিজবাহ-উর-রহমান। তিনি বলেন, ‘গ্রামের ছেলেরা এমনিতেই কষ্ট করে ফরম পূরনের টাকা জমা দেয়। তারপরও বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকেই শিক্ষা থেকে দূরে সরে গেছে, অনেকে হয়তো প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতেও আসবে না। এছাড়া মেয়েদের অবস্থা আরো খারাপ।’
কি ধরনের খারাপ জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলে অভিভাবকদের প্রথম টার্গেট থাকে মেয়েদের বিয়ে। তাই অনেক মেয়ের শিক্ষাজীবন ঝরে যাবে। ইতিমধ্যে আমাদেরকে অনেক মেয়ে তা ফোন করে জানাচ্ছেও।
একই মত পোষণ করে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ন চন্দ্র নাথ বলেন, ‘এবারের পরীক্ষায় অনেক কিছুই ঘটতে পারে। অনেকে পরীক্ষা দিতে পারবে না, অনেকের বিয়ে হয়ে যাবে, অনেকের প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলাফল করতে পারবে না প্রভৃতি। অনিশ্চিত এই পরীক্ষায় এই ব্যাচকে রক্ষা করতে অবশ্যই পর্যাপ্ত সময় দিয়ে পরীক্ষা নিতে হবে।’
উল্লেখ্য, গত ১ এপ্রিল থেকে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন বন্ধ রয়েছে তেমনিভাবে এইচএসসিস পরীক্ষাও স্থগিত রয়েছে। তবে কবে নাগাদ পরীক্ষা হবে সেবিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।