দেশে করোনা সংক্রমণের হার আবারও বাড়ছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে খবর আসছে। গত ৯ মার্চ কোভিড-১৯ শনাক্তের পরীক্ষার সংখ্যা বিবেচনায় নিলে এ সংক্রমণ ৫ শতাংশের ওপরে উঠেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে টানা ৪৯ দিন পর সংক্রমণের এমন পরিস্থিতির চিত্র ওঠে এলো।
গত এক বছর ধরে এ অতিমারি ক্ষিপ্ত হায়েনার মতো বিশ্বের মানুষের পিছু নিয়েছে। সারাবিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে এর অনাকাক্সিক্ষত ছোবলে। মানুষের আয়-রোজগারের জায়গায় থাবা বসিয়ে কোটি-কোটি মানুষকে নিঃস্ব ও সহায়-সম্বলহীন করেছে এ অদৃশ্য ঘাতক। তারপরও গত বছরের জুলাই-আগস্টের দিকে এর সংক্রমণের মাত্রা কিছুটা কমে এলে এবং বিজ্ঞানীদের হাতে কোভিড-১৯ এর প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হলে মানুষ আশার আলো দেখতে পেয়েছিল। এবং দেশে এর প্রয়োগে সরকারের তৎপরতা ও সাফল্যে মানুষ অনেকটাই ফিরে গিয়েছিল তাদের কাজের ক্ষেত্রগুলোতে। এই অবস্থায় গণমাধ্যমগুলোতে স্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য সচেতনমহলের বরাত দিয়ে নতুন করে আসছে সংক্রমণের এ খবর। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কোনো দেশে পরীক্ষার তুলনায় সংক্রমণ শনাক্তের হার টানা অন্তত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ৫ শতাংশের নিচে থাকলে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরে নেয়া যায়।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে করোনার সংক্রমণ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। ওই সভায় প্রধানমন্ত্রী তিনটি নির্দেশনা দেন। নির্দেশনা তিনটি হলো : করোনার টিকা নিক বা না নিক সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে, সকল ক্ষেত্রে যথাসম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং জনসমাগম হয়, এমন জায়গায় অতিরিক্ত মানুষ যাতে জড়ো না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জনসমাগমের জায়গায় অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে জোর দিতে হবে।
এ অবস্থায় সামনে আসছে পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর। গত বছর মানুষ এ দুটি ধর্মীয় বিধির চিরাচরিত আবহ থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। সেই স্মৃতি নিয়ে মানুষ যেন পরোয়াহীন হয়ে জনসমাগম ও বিপণিবিতানগুলোতে অতিরিক্ত ভিড় সৃষ্টি না করে প্রশাসনকে সেদিকে সবিশেষ নজর রাখতে হবে। এছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষার দিকেও বিশেষ তদারকির প্রয়োজন রয়েছে।
কোভিড-১৯ এর এই আশঙ্কা জাগানো পরিস্থিতি আমাদের মধ্যে সচেতনতা জাগিয়ে তুলুক। আগামী এপ্রিল, মে ও জুন এই তিন মাসের দিকে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সংস্থা ও অধিদপ্তরগুলোর তীক্ষè নজর রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, গত গ্রীষ্মকালেই কিন্তু এদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েছিল।
সুতরাং সবক্ষেত্রে স্বাস্থবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই।
মতামত সম্পাদকীয়