সুপ্রভাত ডেস্ক :
ভারতের পুনে-ভিত্তিক সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, কোভিড-১৯র জন্য অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বানানো টিকা তারা শিল্প উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত।
বিশ্বের বৃহত্তম টিকা প্রস্তুতকারী এই সংস্থাটি অক্সফোর্ডের ওই প্রকল্পে অন্যতম প্রধান পার্টনার বা অংশীদার হিসেবে কাজ করছে।
সংস্থার প্রধান আদার পুনাওয়ালা বলেছেন, তারা ভারতে ওই টিকার ক্লিনিকাল ট্রায়ালের জন্য সরকারের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার কাছে আবেদন করছেন – পাশাপাশি বিপুল সংখ্যায় ওই টিকা উৎপাদনের জন্য তাদের অবকাঠামোও পুরোপুরি তৈরি। খবর বিবিসি বাংলার।
তবে সেরাম ইনস্টিটিউটের বানানো টিকা দেশের বাজারে ঠিক কখন আসতে পারে, তা নিয়ে দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও নানা মত আছে।
সবেমাত্র সোমবারেই ঘোষণা করা হয়েছে যে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির উদ্ভাবিত কোভিড-১৯ টিকা মানবশরীরের জন্য নিরাপদ এবং এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উজ্জীবিত করতে পারে বলে প্রাথমিক পরীক্ষায় প্রমাণিত।
এই টিকার ১০ কোটি ডোজের জন্য ব্রিটিশ সরকার তাদের চাহিদা ইতিমধ্যেই জানিয়ে রেখেছে – আর এটির লার্জ স্কেল বা বিপুল সংখ্যায় উৎপাদনের জন্য অক্সফোর্ড বিশ্বের যে সাতটি সংস্থার
মি. পুনাওয়ালা আরও বলেন, “এই টিকা উৎপাদনের জন্য আমরা অক্সফোর্ডের প্রধান অংশীদারদের একজন – এবং ভারতে আমরাই একমাত্র সংস্থা যারা এই দায়িত্ব পেয়েছে।”
“আমি আগেই একটা বিবৃতিতে জানিয়েছি, আমরা কিন্তু সম্পূর্ণ নিজেদের খরচে ও নিজেদের ঝুঁকিতে এই টিকার উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছি।”
“ক্লিনিকাল ট্রায়াল ব্যর্থ হলে সেই উদ্যোগ হয়তো জলে যাবে।”
“কিন্তু আমাদের বিশ্বাস একটা ইতিবাচক ফলাফল নিশ্চয় পাওয়া যাবে এবং সে ক্ষেত্রে আমরা কিন্তু প্রায় ছসাত মাস সময় বাঁচাতে পারব … এই টিকা বাজারে আনার ক্ষেত্রে একটা ‘হেডস্টার্ট’ পাব বা অনেক এগিয়ে থেকে শুরু করব।”
স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে একটা নতুন রোগের টিকা বানাতে দশ বছর সময়ও লেগে যেতে পারে – কারণ সেখানে গবেষণা ও উদ্ভাবন ছাড়াও ক্লিনিকাল ট্রায়ালের অনেকগুলো ধাপ জড়িত থাকে।
কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারি সারা দুনিয়াকে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে, তাই কয়েক বছরের প্রক্রিয়াটাকে কয়েক মাসের মধ্যে ‘ফাস্ট ফরোয়ার্ড’ করার চেষ্টা চলছে বহু দেশেই।
দিল্লির হিন্দুস্তান টাইমসের স্বাস্থ্য-বিষয়ক সম্পাদক সঞ্চিতা শর্মা মনে করছেন, এই পটভূমিতে বছর শেষ হওয়ার আগেই সিরাম ইনস্টিটিউটের টিকা বাজারে চলে আসবে এই প্রত্যাশা করা যেতেই পারে।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির উদ্ভাবিত টিকার ট্রায়ালে প্রাথমিক সাফল্য ঘোষিত হয়েছে ২০শে জুলাই
তিনি বলছিলেন, “পুনের সিরাম ইনস্টিটিউট ইতিমধ্যেই এই টিকার উৎপাদন শুরু করে দিয়েছে।”
“এখন আমার জানা মতে, সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের মধ্যে যদি ভারতের ট্রায়ালের ফলাফল চলে আসে এবং সেটা ইতিবাচক হয় – তাহলে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পুনের এই সংস্থাটি অন্তত ১০ লক্ষ টিকা উৎপাদনে সক্ষম।”
“সারা দুনিয়ায় এখন কোভিডের টিকা উদ্ভাবনে শতাধিক প্রকল্প চলছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও প্রায় বছরখানেক সময় লাগার কথা বলছে।”
“তবে আমার ধারণা, অক্সফোর্ডের এই টিকা নিয়ে যে গতিতে কাজ চলছে তাতে বাকি সব ঠিকঠাক চললে সেরাম ইনস্টিটিউটের বানানো টিকা ২০২০ সালের মধ্যেই বাজারে চলে আসা উচিত”, বলছেন মিস শর্মা।
তবে ইন্ডিয়ান পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সঙ্ঘমিত্রা ঘোষ মনে করেন, একটা নতুন রোগের টিকা এত তাড়াতাড়ি বাজারে আনা প্রায় অসম্ভব।
বিবিসিকে তিনি বলছিলেন, বিশ্বের বৃহত্তম টিকা প্রস্তুতকারক হিসেবে সেরাম ইনস্টিটিউটের সামর্থ্য নিয়ে হয়তো প্রশ্ন নেই – কিন্তু ক্লিনিকাল ট্রায়ালের এমন কতগুলো ধাপ থাকে যে সময়টা কিছুতেই বাঁচানো সম্ভব নয়।
ড: ঘোষের কথায়, “সেরাম ইনস্টিটিউটের সেই ক্ষমতা আছে এবং নিশ্চয় তারা ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে পারবে। কিন্তু যে কোনও ভ্যাকসিনেরই কার্যকারিতা আসলে নির্ভর করে সেটার ট্রায়ালের ওপর।”
“অর্থাৎ আমরা যেটাকে ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বলি আর কী! ভ্যাকসিনে শরীরে অ্যান্টিবডি তো নিশ্চয় তৈরি হবে, কিন্তু তৈরি হওয়ার পর সেটা কতদিন থাকবে সেটা দেখাটাই আসল ব্যাপার – আর সে জন্যই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল।
“আর সেই ক্লিনিকাল ট্রায়ালের জন্যই সেরাম ইনস্টিটিউটকে ভ্যাকসিনটা এখানে তৈরি করতে হবে, ট্রায়ালের জন্য ভলান্টিয়ারদেরও বেছে নিতে হবে।”
“আর এই ভলান্টিয়ার বাছাইয়েরও একটা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া আছে। তাদের বয়স, লিঙ্গ, অন্যান্য অসুস্থতার বিবরণ বা কোমর্বিডিটি সে সব দেখে ভলান্টিয়ার বাছতে হবে এবং সেটা খুবই সময়সাপেক্ষ একটা প্রক্রিয়া।”
“বাজারে ভ্যাক্সিন এসে গেল এবং আমরা সবাইকে দিতে শুরু করে দিলাম, সেটা হয়তো পরের বছরের মাঝামাঝি হলেও হতে পারে”, বলছিলেন সঙ্ঘমিত্রা ঘোষ।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি তাদের টিকার হিউম্যান ট্রায়াল শুরু করেছিল গত ২৩শে এপ্রিল, সে পরীক্ষার ফলাফল জানতেও প্রায় তিন মাস সময় লেগেছে।
ভারতে ওই টিকা বানানোর আগে সেরাম ইনস্টিটিউটকেও যথাযথ অনুমতি নিয়ে এদেশেও সফল ট্রায়াল সম্পন্ন করতে হবে – তারপরই তারা সেটা বাজারে ছাড়তে পারবে।
তবে ট্রায়াল শুরু হওয়ার আগেই তারা ওই টিকার লার্জ স্কেল প্রোডাকশনের মহড়া সেরে রেখেছে, যেখানে অনেকে বেশ কিছুটা সময় বাঁচানোর ভরসা দেখছেন।