বে টার্মিনাল : ধীরে চল নীতি কেন

চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরের চাপ কমিয়ে আনতে বে টার্মিনালে কনটেইনার ডেলিভারি ইয়ার্ড নির্মাণের জন্য প্রায় এক বছর আগে মাটি ভরাটের কাজ শুরু হলেও এখন বন্ধ। দুটি ব্লকে মাটি ভরাটের কাজ অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। সহসা পরবর্তী কাজ শুরু হওয়ার কোনো লক্ষণও নেই। এমনকি গত বছরের মে মাসে কনটেইনার ডেলিভারি ইয়ার্ড নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে ডিপিপি (বিস্তারিত প্রকল্প প্রস্তাবনা) পাঠালেও তা আলোর মুখ দেখেনি। এখন আবার নতুন করে শুরু হবে ডিপিপি তৈরির কাজ।

২০১৮ সালের আগস্টে বে টার্মিনালের ৬৭ একর ভূমি বরাদ্দ পেয়েছিল। ইপিজেড থেকে দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনিঘাট পর্যন্ত সাগরের ভেতরের প্রায় ২৩০০ একর জায়গায় নির্মিত হওয়ার কথা এই বে টার্মিনালের। জোয়ার-ভাটা, দিন-রাত, বাঁকা চ্যানেল কিংবা ড্রাফটের বিবেচনা কর্ণফুলী নদীর জেটিতে ভিড়লেও বে-টার্মিনালের ক্ষেত্রে সেই সীমাবদ্ধতা নেই। বর্তমানে কর্ণফুলী নদীর জেটিতে পৌঁছাতে একটি জাহাজকে ১৫ কিলোমিটার ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। কিন্তু বে টার্মিনাল নির্মাণ করা হলে তা শূন্য কিলোমিটারের মধ্যেই বার্থিং করতে পারবে। যেকোনো দৈর্ঘ্য ও প্রায় ১২ মিটার ড্রাফটের জাহাজ এখানে ভিড়তে পারবে। এখানে ২৪ ঘণ্টা জাহাজ পরিচালনা করা যাবে। বিদ্যমান পোর্ট জেটিতে একসাথে ১৬টি জাহাজ বার্থিং করা গেলেও বে টার্মিনালে গড়ে প্রায় ৫০টি জাহাজ একইসাথে বার্থিং করা যাবে।

আমাদের গভীর সমুদ্রবন্দর নেই বলে অনেক ধরনের অসুবিধা পোহাতে হয়। বড় জাহাজ সরাসরি জেটিতে  ভিড়তে না পারার কারণে সময় ও অর্থের অপচয় হয়। এসব বিবেচনা করে মহেশখালীতে গড়ে তোলা হচ্ছে গভীর সমুদ্রবন্দর। এ নিয়ে  আমাদের দ্বিমত নেই। এর আগে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর করার উদ্যোগ নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৪ শ কোটি টাকা ওই বন্দরের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল। অথচ বে টার্মিনাল নির্মিত হলে গভীর সমুদ্রবন্দরের অনেক সুবিধা এখান থেকেই পাওয়া যেত।

এখন বে টার্মিনালের জন্য পরামর্শক নিয়োগের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়েছে। দরপত্র জমা দেয়ার তারিখ আগামী ২২ জুলাই। দরপত্র জমা দেয়ার পর তা যাচাই বাছাই করে একটি প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করতে আরো প্রায় চার থেকে পাঁচ মাস সময় লাগতে পারে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান। এবিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, আন্তর্জাতিক দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগে কিছু সময়ের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই সময়গুলো অতিক্রম করার পর চূড়ান্ত নকশা পেতে আগামী জুন-জুলাই পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

দেখেশুনে মনে হচ্ছে  বে টার্মিনাল নিয়ে ধীরে চল নীতি গ্রহণ করা হয়েছে নতুবা বছরের পর বছর অতিবাহিত হলেও টার্মিনাল নির্মাণে আন্তরিক প্রয়াস লক্ষ করা যাচ্ছে না। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।  আমরা আশা করব, দেশের স্বার্থে, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে বে টার্মিনাল নির্মাণ ত্বরান্বিত করা হবে।