নিজস্ব প্রতিবেদক :
পৃথিবী গভীর থেকে গভীরতর অসুখে অক্রান্ত। সেই গভীর অসুখে আক্রান্ত ঝুমা। গভীর অসুখটা গভীরতর হয়ে ওঠে যখন পৃথীবিতে নতুন শিশুর অগমনে শঙ্কা জেগে ওঠে। সেই গভীরতর অসুখটাকে গভীরতর আনন্দে ভরিয়ে দিল একদল চিকিৎসক ও নার্স। আগ্রাবাদের মা ও শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের প্রচেষ্টায় করোন ওয়ার্ডে গত বৃহস্পতিবার রাত নয়টায় জন্ম নেয় একটি সন্তান।
ঝুমা আক্তার (২৩) আগ্রাবাদের মা ও শিশু হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। তাকে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার মাধ্যমে ঘণ্টায় ৬০ লিটার করে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছিল। তিনি ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা। হঠাৎ তার প্রসব বেদনা উঠে।
মা ও শিশু হাসপাতালের আইসিইউর চিকিৎসক ফাহিম রেজা, ডা. আফরা, ডা. মাকসুদা হক মিতা, ডা. রিহুল, ডা. ইমরান, সিনিয়র স্টাফ নার্স ইনচার্জ রূপনা বড়ুয়া, সিনিয়র নার্স রোকেয়া, মিডওয়াইফ সেতু, আইরিন, সালমাসহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক চেষ্টায় আইসিইউতে বিশেষ ব্যবস্থায় অনাগত সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখান। শেষ পর্যন্ত হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের প্রচেষ্টায় নরমাল ডেলিভারি সম্ভব হয়েছে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে মেয়ে সন্তানের মা হন ঝুমা। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ফাহিম আলী রেজা বলেন, রোগীর অবস্থা খুব খারাপ ছিল। তাকে ৬০ লিটার করে অক্সিজেন দিতে হয়েছিল। এ পরিস্থতিতে সন্তান জন্ম দেওয়াটা একটি কঠিন কাজ । আমরা খুব উদ্বিগ্ন ছিলাম। অস্ত্রোপচার করতে হলে ঝুঁকি বেড়ে যেত। হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের প্রচেষ্টায় নরমাল ডেলিভারি সম্ভব হয়েছে। জন্ম নেওয়া নবজাতকটি ভালো আছে। নবজাতকের ওজন প্রায় আড়াই কেজি। শিশুটি বর্তমানে তার অভিভাবকদের কাছেই আছে। করোনা আক্রন্ত মায়ের শিশুর জন্ম দেওয়াতে আনন্দিত আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডের চিকিৎসক ও নার্সরা। তারা হাসপাতালে মা ঝুমা আক্তার ও শিশু সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে বিজয় চিহ্ন দেখিয়ে ছবি তোলেন । চট্টগ্রামের মিরসরাই এলাকার মানসী ভিলায় থাকেন আব্দুল মোতালেবের স্ত্রী ঝুমা আক্তার (২৩)। আবদুল মোতালেবের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। গর্ভবতী ঝুমা আক্তারের জ্বর ও কাশিসহ করোনার লক্ষণ ছিল। চিকিৎসার জন্য তাকে মিরসরাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক তাকে চট্টগ্রাম নগরীতে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন। ২৮ জুন তাকে ভর্তি করা হয় চট্টগ্রাম নগরীর মা ও শিশু হাসপাতালে। পরীক্ষায় করার পর তার করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতালটির করোনা ইউনিটের আইসিইউ ওয়ার্ডে নেওয়া হয়। তাকে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা দিয়ে ঘণ্টায় ৬০ লিটার অক্সিজেন দিতে হয়েছে। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে তার প্রসব বেদনা শুরু হয়। মা ও শিশু হাসপাতালে দুই মাস আগেও করোনা পজিটিভ এক নারীর সন্তান নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে ভূমিষ্ট করানো হয়েছিল।