সুপ্রভাত ডেস্ক :
দেশে গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রেকর্ড সংখ্যক ৪৫ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। এই পর্যন্ত এ ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন ৯৭৫ জন।
রোববার ও সোমবার এই দুইদিনই একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুও রেকর্ড ছিল। ওই দুইদিন ৪২ জন করে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। শনাক্ত বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আগের দিনও এই হার ছিল ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
এ দিকে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭১ হাজার ছাড়িয়েছে। বর্তমানে দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত ৭১ হাজার ৬৭৫ জন রোগী রয়েছেন। গত ২৪ ঘন্টায় সর্বাধিক ১৪ হাজার ৬৬৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩ হাজার ১৭১ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এটি এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। এর আগে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড ছিল ২ জুন। ওইদিন ২ হাজার ৯১১ জনের দেহে এই ভাইরাসটির উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছিল।
আজ দুপুওে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
গতকালের চেয়ে আজ ৪৩৬ জন বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল আক্রান্ত হয়েছিল ২ হাজার ৭৩৫ জন।
নমুনা পরীক্ষায় আজ আক্রান্তের হার ২১ দশমিক ৬২ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২১ দশমিক ১৩ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ আক্রান্তের হার শূন্য দশমিক ৪৯ শতাংশ বেশি।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৫ হাজার ৩৩৬ জন। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন সুস্থ হয়েছেন ৭৭৭ জন। আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ দশমিক ৪০ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি।
তিনি জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৫৫টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৪ হাজার ৬৬৪টি। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১২ হাজার ৯৪৪টি। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ১ হাজার ৭২০টি বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে মোট ৪ লাখ ২৫ হাজার ৫৯৫টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
তিনি জানান, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৩৩ জন পুরুষ এবং ১২ জন নারী। বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৮ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৩ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১৫ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৫ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ২ জন এবং ১১ থেকে ২০ বছরের ২ জন রয়েছেন। অঞ্চল বিবেচনায় এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১ জন, সিলেট, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে ২ জন করে রয়েছেন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৫৫৭ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ৭ হাজার ৮৯৩ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ২১৬ জন। এখন পর্যন্ত মোট ছাড়পত্র পেয়েছেন ৪ হাজার ৫৩৫ জন। দেশে মোট আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ১৩ হাজার ২৮৪টি। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ৭ হাজার ২৫০টি এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ৬ হাজার ৩৪টি শয্যা রয়েছে। সারাদেশে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৩৯৯টি এবং ডায়ালাইসিস ইউনিট রয়েছে ১১২।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ২ হাজার ৬০২ জনকে। এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৬ হাজার ২৭ জনকে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড়পত্র পেয়েছেন ২ হাজার ৩৬ জন, এখন পর্যন্ত ছাড়া পেয়েছেন ২ লাখ ৪৯ হাজার ৩৮৯ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫৬ হাজার ৬৩৮জন।
দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) এ পর্যন্ত সংগ্রহ ২৫ লাখ ৯ হাজার ১৪২টি। ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ৮ হাজার ৬শ’টি এবং এ পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ২২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৭৫টি। বর্তমানে ২ লাখ ৫১ হাজার ২৬৭টি পিপিই মজুদ রয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৩৭টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ২ লাখ ৯৭ হাজার ৭৫৪টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ২৯৫ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। ২৪ ঘন্টায় আরও ৪ জন চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ১৩৯ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ১১ হাজার ৬৬৭ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৮ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ৬৫৪ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৬ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ২৯৮ জন এবং এ পর্যন্ত ৯ হাজার ৯৭০ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৮ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৩১ হাজার ২৯৬ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৬৯ লাখ ৩১ হাজার। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ হাজার ৬৬৯ জন এবং এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৮৫৭ জন।
বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে মজুদ না করার অনুরোধ জানিয়ে অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘করোনা চিকিৎসায় অক্সিজেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বর্তমানে পরিলক্ষিত হচ্ছে, অনেকেই বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে মজুত করছেন করোনা চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য। যা ঠিক নয়। কারণ অক্সিজেন থেরাপি একটি কারিগরি বিষয়। দক্ষ চিকিৎসক ব্যতীত অন্য কেউ অক্সিজেন রোগীকে প্রয়োগ করলে তা রোগীর জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।’
তিনি বলেন, করোনা চিকিৎসার অনেক ক্ষেত্রে হাই ফ্লো অক্সিজেন দিতে হয়। যা বাসায় দেয়া সম্ভব নয়। তাই জনসাধারণের নিকট অনুরোধ, আপনারা অযথা বাসায় অক্সিজেন কিনে মজুত করবেন না। কারণ তা বাজারে অক্সিজেন সিলিন্ডারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করবে এবং হাসপাতালের মুমূর্ষু রোগী অক্সিজেন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন, যা কাম্য নয়।
আপনার সুস্থতা আপনার হাতে উল্লেখ করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইওে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি-বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।