সুপ্রভাত ডেস্ক »
চট্টগ্রামের সিটি মেয়র রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে ‘মানহানিকর’ বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সভাপতির নামে মামলার পর এবার তাকে ‘সতর্ক’ করলেন কাউন্সিলররা।
গতকাল রোববার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে তারা করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি নুরুল আবসারকে ওই ঘটনায় ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। খবর বিডিনিউজের।
ক্ষমা না চাইলে এবং ফের ‘কটূক্তি’করলে আবসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে কাউন্সিলররা ‘হুঁশিয়ারি’ করেছেন।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় সিটি করপোরেশেনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আফরোজা কালাম বলেন, ‘করদাতা সুরক্ষা পরিষদের আন্দোলনে কোনো বাধা নেই। কিন্তু পরিষদের সভাপতি নুরুল আবসার মেয়রের বিরুদ্ধে অশালীন ও কটূক্তিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন।
‘মেয়রের বিরুদ্ধে নুরুল আবসারের এ ধরনের বক্তব্য ৭০ লাখ নগরবাসীকেও অপমানের শামিল।’
১৫ নম্বর বাগমনিরাম ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, গৃহকর ‘সহনীয় পর্যায়ে’ রাখার জন্য স্বয়ং মেয়রই নির্দেশনা দিয়েছেন। কাউন্সিলররাও গৃহকরের বিষয়টি নিয়ে সাধারণ সভায় আলোচনা করেছেন।
করদাতা সুরক্ষা পরিষদের নেতাদের গৃহকর নিয়ে নগরবাসীকে ‘বিভ্রান্ত’ না করার আহ্বান জানিয়ে গিয়াস বলেন, পুনরায় এ ধরনের ‘কটূক্তিমূলক’ বক্তব্য দেওয়া হলে ‘জবাব’ দেওয়া হবে।
২০ নম্বর দেওয়ান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী মেয়রের কাছে নুরুল আবসারকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ক্ষমা না চাইলে উচিত জবাব দেওয়া হবে। ৪১টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলররা প্রতিরোধ করলে ঘরের বাইরে থাকতে পারবেন না।’
প্রতিবাদ সমাবেশে ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিরর জহর লাল হাজারী, মোরশেদ আলম, শৈবাল দাশ সুমন, আবুল হাসনাত বেলাল, হুরে আরা বক্তব্য দেন।
চিকিৎসা শেষে সিটি মেয়র রেজাউল করিম দেশে ফিরলে নতুন কর্মসূচি দেওয়ার কথাও জানান কাউন্সিলররা।
মেয়র রেজাউল করিমকে উদ্দেশ্য করে ‘কটূক্তি ও মানহানিকর’ বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে নুরুল আবসারের বিরুদ্ধে ২০ সেপ্টেম্বর নগরীর চান্দগাঁও থানায় মামলা করেন মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী মো. মোস্তফা কামাল চৌধুরী। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ওই মামলা হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ১৮ সেপ্টেম্বর পশ্চিম মাদারবাড়িতে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের ব্যানারে এক অনুষ্ঠানে নুরুল আবসার মেয়রকে উদ্দেশ করে ‘মানহানিকর’ বক্তব্য দেন। এমন ‘মানহানিকর ও হুমকিমূলক’ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হওয়ায় প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাপ্রাপ্ত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির ‘চরম মর্যাদাহানি, নিরাপত্তা হুমকি ও সিসিসির সুনাম ক্ষুণ্ন’ হয়েছে।
ভাড়ার ভিত্তিতে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসাবে ২৩ সেপ্টেম্বর গণ মিছিলের আয়োজন করেছিল চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ। সেই কর্মসূচির প্রস্তুতি হিসেবে ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় পশ্চিম মাদারবাড়ি এলাকায় উঠান বৈঠক হয়।
ওই বৈঠকে নুরুল আবসার চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলেছিলেন, ‘আমরা এখানে যারা আছি, তারা ১১ ধরনের ট্যাক্স দিয়ে এই শহরে বসবাস করছি। কারও বাপের ভিটায় বসবাস করছি না আমরা। এই, এই মেয়র, তোর বাপের ভিটায় বসবাস করছি না আমরা। এই মেয়র, সাবধান হয়ে যাও তুমি।’
সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মেয়াদে ভাড়ার ভিত্তিতে গৃহকর আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া হলে করদাতা সুরক্ষা পরিষদসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের আন্দোলনের মুখে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর তা স্থগিত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া রেজাউল করিম চৌধুরী।
গত জানুয়ারিতে হোল্ডিং ট্যাক্স পুনর্মূল্যায়নের ওপর চার বছর আগের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই মাসেই তা প্রত্যাহার করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি ‘ভাড়ার ভিত্তিতে’ বর্ধিত হারে গৃহকর আদায়ে সিটি করপোরেশন তৎপর হলে গত মাসখানেক ধরে স্থানীয় পর্যায়ে জনসংযোগ শুরু করে করদাতা সুরক্ষা পরিষদ। এরপর ২ সেপ্টেম্বর জনসভা করে আন্দোলন কর্মসূচির ডাক দেয়।
নাছিরের সময় করদাতা সুরক্ষা পরিষদ আন্দোলনে নামলে তাতে সমর্থন দিয়েছিলেন প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সাবেক মেয়র এম মনজুর আলমসহ চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনদের একাংশ।
পরে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে খোরশেদ আলম সুজন ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে পুনর্মূল্যায়ন অনুসারে বর্ধিত গৃহকর আদায়ের অনুমতি চাইলে তাতে সম্মতি দিয়েছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।


















































