নিজস্ব প্রতিবেদক »
অনুমোদনহীন ও নি¤œমানের পণ্য বিক্রির তদারকিতে মাঠে রয়েছে জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, বিএসটিআই ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। কিন্তু তাদের ফাঁকি দিয়ে অনুমোদনহীন পণ্য বিক্রি হচ্ছে নগরের বিভিন্ন স্থানে। কিছু দাম কম হওয়ায় মানুষ ঝুঁকছেন তাতে।
নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, প্রায় ওয়ার্ডে একটি বা দুটি করে ন্যায্যমূল্যের ট্রাক রয়েছে। তাতে চা পাতা, গুঁড়ো দুধ, নুডুলস, সেমাই, ভোজ্যতেল, ট্যাং, সাবান, মশার কয়েল, বিস্কুট জাতীয় পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় ট্রাকে থাকা পণ্যগুলোতে দেখা গেছে, অধিকাংশ পণ্যে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নেই। এরমধ্যে সয়াবিন তেল, মশার কয়েল ও চা পাতা রয়েছে।
চকবাজার এলাকায় দেখা গেছে একটি ট্রাকে বিক্রি করা পাম তেলের গায়ে বিএসটিআইয়ের কোনো অনুমোদন নেই, কিন্তু সিল আছে।
মিনার পাম ভেজিটেবল অয়েলে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন না থাকা প্রসঙ্গে চকবাজার ট্রাক সেলের বিক্রেতা আকতার হোসেন বলেন, ‘এগুলো আসলে সয়াবিন সুপার তেল। এ কোম্পানির কাছে পাম অয়েলের পারমিশন আছে। তাই পাম অয়েলের প্যাকেটে সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে।’
মিনার পাম ভেজিটেবল অয়েল কেনার পর এক ভোক্তা বলেন, ‘কোম্পানি ছাড়া তো কেউ তেল বিক্রি করতে পারে না। এগুলোর লাইসেন্স আছে নাকি নাই সেটা দেখার জন্য সরকারি বিভিন্ন সংস্থা আছে। আমরা যেখানে দাম কম পাই, সেখানেই যাই।’
শুধু তাই নয়, এভাবে অন্যান্য পণ্য যেমন মশার কয়েল, চা পাতা, সরিষার তেল, ভিম ওয়াশিং, হারপিউন, আই গুঁড়ো দুধ, ফ্রাইড নুডুলস এসব পণ্যে বিএসটিআইয়ের কোনো অনুমোদন নেই, কিন্তু লোগো আছে।
অনুমোদন না থাকার বিষয়ে পাহাড়তলী এলাকায় মো. জালাল উদ্দিন নামে একজন বিক্রেতা বলেন, ‘আমাদের কোনো দোকান নেই। অনুমোদন থাকা না থাকা কোনো বিষয় না। তেলের বদলে তো পানি দিইনি। মানুষ খাচ্ছে। কোনো অভিযোগও পাইনি। আমরা কম রেটে বিক্রি করছি।’
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বিএসটিআইয়ের অনুমোদনহীন সয়াবিন তেল মানবদেহে শক্তির জোগান ও টিস্যু গঠনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এসিডের অতিরিক্ত মাত্রা হার্টের জন্য ভয়ংকর ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এমনকি ক্যান্সারের মতো রোগও শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। এছাড়া হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস ও শরীরের অস্বাভাবিক ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে।
তবে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলো জেনেই বিএসটিআই পণ্যের মান যাচাই করে প্রতিষ্ঠানকে তাদের লোগো ব্যবহারের অনুমোদন দেয় বলে জানান সংস্থাটির চট্টগ্রাম অফিসের পরিচালক প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পণ্যের মান যাচাই করার অন্যতম কারণ হলো ভোক্তাদের যেন ভেজাল কোনো পণ্য গ্রহণ করতে না হয়। কোনো ভোক্তা যদি আমাদের এ নিয়ে অভিযোগ করেন আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
এ নিয়ে কথা হলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘ট্রাকে ন্যায্যমূল্যের নামে ভেজাল ও মানহীন পণ্য বাজার থেকে কয়েক টাকা কমে বিক্রি করে। পণ্যগুলো বাজারে বিক্রি করা যাবে না। বাজারে বিক্রি করলে এ বিষয়ে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদের খতিয়ে দেখা উচিত।’
এ প্রসঙ্গে কথা হয় ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর মোস্তফা টিনুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে আমার নামে দুটি ন্যায্যমূল্যের ট্রাক আছে। তবে কোনো সময় নি¤œমানের পণ্য বা অনুমোদনহীন পণ্য বিক্রি করতে দেখিনি, আমি অবশ্যই বিষয়টি দেখবো।’
৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. জহুরুল আলম জসীম বলেন, ‘আমার নামে কোথাও কোনো পণ্য বিক্রি হয় না। কোনো জায়গায় আমার নামে কিছু বিক্রি করতে দেখা গেলে আমি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।’
অনুমোদনহীন পণ্যের বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিসের মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ বলেন, ‘ন্যায্যমূল্যের ট্রাকে আমরা কখনও অভিযান পরিচালনা করিনি। এটা জনহিতকর কাজ। তবে সামান্য মূল্য কমিয়ে নি¤œমানের ও অনুমোদনহীন পণ্য বিক্রি করলে সেটা অবশ্যই আমরা দেখবো।’