চট্টগ্রাম বন্দরের আজকের যে প্রবৃদ্ধি এর পেছনে দক্ষ পরিচালনা একটি অন্যতম ফ্যাক্টর। ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে দায়িত্ব নেয় সাইফ পাওয়ার টেক। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই বাড়তে থাকে বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডেলিং। বে টার্মিনাল চালু হলে এর অপারেশনাল কার্যক্রম কেমন হবে এবং বন্দরের দক্ষ জনবল কেমন রয়েছে তা নিয়ে কথা হয় সাইফ পাওয়ার টেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুহুল আমিন তরফদারের।
সুপ্রভাত বাংলাদেশ : কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে দিন দিন প্রযুক্তি নির্ভরতা বাড়ছে। আপনারা কীভাবে এর সাথে খাপ খাইয়ে নিচ্ছেন?
রুহুল আমিন তরফদার : চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে আমরা দায়িত্ব নেয়ার আগে শুধু সিসিটিতে বছরে হ্যান্ডেলিং হতো ২ লাখ ১২ হাজার কনটেইনার। ২০০৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৩০ হাজারে এবং এখন তা ৫ লাখের উপরে। এই উন্নতির পেছনে অবশ্যই প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি দক্ষ ব্যবস্থাপনাও ফ্যাক্টর। আমরা সেই ব্যবস্থাপনার কাজটি করছি। এতে লাভবান হচ্ছে বন্দর।
সুপ্রভাত : প্রথম দিকে তো এই ক্ষেত্রে দক্ষ জনবল ছিল না। এখন কী অবস্থা?
রুহুল আমিন তরফদার : এটা ঠিক প্রথম দিকে আমাদের খুব কষ্ট হয়েছে। তবে গত ১৪ বছরে আমরা অনেক দক্ষ জনশক্তি তৈরি করেছি। এসব দক্ষ জনবল দিয়ে আধুনিক ইকুইপমেন্ট পরিচালনা যেমন সহজতর হচ্ছে তেমনি কাজে গতিও আসছে।
সুপ্রভাত : বে টার্মিনাল, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল ও মাতারবাড়ি চালু হলে ইকুইপমেন্ট পরিচালনায় প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল কি আমরা পাবো?
রুহুল আমিন তরফদার : অবশ্যই পাবো। শুধু আমাদের এখান থেকেই কয়েকশ দক্ষ জনবল তৈরি হয়েছে এবং দিন দিন আরো বাড়ছে। তাই জনবলের সমস্যা হবে না।
সুপ্রভাত : বে টার্মিনাল নিয়ে আপনি কতটুকু আশাবাদী?
রুহুল আমিন তরফদার : দেখুন, বে টার্মিনাল সময়ের দাবি। এটা লাগবেই। বে টার্মিনাল ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের সামনে কোনো পথ খোলা নেই। প্রাকৃতিকভাবে জেগে উঠা ভূমিতে এটি প্রায় রেডি একটি বন্দর। এখন দরকার শুধু পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা। দেশের চলমান অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি সামাল দিতে দ্রুত বে টার্মিনাল প্রস্তুত করতে হবে।
সুপ্রভাত : বে টার্মিনালের জন্য চ্যালেঞ্জ কী মনে করছেন?
রুহুল আমিন তরফদার : বে টার্মিনালের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ এবং চ্যানেল প্রস্তুত করা। এই কাজটি আগে করা গেলে প্রয়োজন অনুযায়ী পরবর্তীতে জেটি নির্মাণ সহায়ক হবে। একইসাথে আগামীতে ড্রেজিং কার্যক্রমও চালিয়ে যেতে হবে।
সুপ্রভাত : আপনি কি মনে করেন বে টার্মিনাল হলে বহিঃনোঙ্গরে পণ্য খালাস অনেকটা কমে যাবে?
রুহুল আমিন তরফদার : বে টার্মিনাল চালু হলে বাল্ক পণ্য নিয়ে বড় আকারের জাহাজগুলো সহজেই জেটিতে ভিড়তে পারবে। তখন জেটিতেই পণ্য খালাস করতে পারবে। সেইক্ষেত্রে বহিঃনোঙ্গরে পণ্য খালাস হয়তো অনেকটা কমে যাবে। তবে আরেকটি বিষয় আছে সেটি হলো দেশের বিভিন্ন জায়গায় কিন্তু জলপথে লাইটার জাহাজে পণ্য পরিবাহিত হয়। সেক্ষেত্রে বহিঃনোঙ্গর থেকে কিংবা জেটি থেকেও জাহাজে করে পণ্য নেয়া যেতে পারে।
সুপ্রভাত : কনটেইনার ডেলিভারিতে বে টার্মিনালে অবকাঠামোগত সুবিধা কতটা রয়েছে?
রুহুল আমিন তরফদার : বে টার্মিনাল প্রায় একটি রেডি পোর্ট। বে টার্মিনালের পাশেই রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড নেটওয়ার্ক, রয়েছে রেললাইনও। তাই জাহাজ থেকে খালাস করে সহজেই দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহন সহজ হবে। আর বে টার্মিনাল শহরের বাইরে হওয়ায় শহরের ভেতরে বন্দর সংক্রান্ত গাড়িগুলো প্রবেশ করবে না। এতে শহর যানজটমুক্ত হবে।