নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »
টানা তিন দিনের ছুটিতে কক্সবাজারে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। সাগরতীর জুড়ে শুধু পর্যটক আর পর্যটক। সব বয়সের মানুষ মেতেছে আনন্দ আর উল্লাসে। সেই সঙ্গে প্রিয় মুহূর্তগুলো পার করছেন প্রিয়জনের সঙ্গে। অন্যদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক দায়িত্বপালন করছেন লাইফগার্ড কর্মী ও ট্যুরিস্ট পুলিশ।
এ তিন দিন সরকারি ছুটির সঙ্গে বুধবার থেকে শুরু হওয়া পর্যটন মেলা উপলক্ষে দেওয়া হয়েছে আবাসিক হোটেল থেকে শুরু করে ১৫ ট খাতে ছাড়। ফলে এ সময়টাকে কক্সবাজারে বেড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ বলে মনে করেছেন পর্যটকেরা।
ঢাকা থেকে আসা সোহানুর রহমান নামের পর্যটক জানান, পর্যটন মেলা সাথে সমুদ্রসৈকত দুটো একসাথে উপভোগ করার লক্ষ্যেই পরিবার নিয়ে কক্সবাজার আসা। গাজীপুর থেকে আসা পর্যটক তসলিমা হাসান জানান, টানা তিনদিনের ছুটি তাই কক্সবাজার আসা, সাথে পর্যটন মেলা উপলক্ষ্যে নানান আয়োজন দেখে বেশ ভালো লাগছে।
আরেক পর্যটক রবিন বলেন, কক্সবাজারে ছুটি কাটাতে এসেছি। কক্সবাজারে খুব সুন্দও সৈকত আছে, বালিয়াড়িতে ঘোড়া আছে। নোনাজলে গোসল করেছি। অনেক মজা হচ্ছে।
কক্সবাজারের কলাতলী সাগরতীরের তারকা মানের হোটেল সায়মনের অপারেশন ম্যানেজার কামরুল হাসান জানান, কক্সবাজার তারকা মানের হোটেল গুলো প্রায় শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে। অন্যদিকে তারকামানের হোটেল সী-গালের কর্মকর্তারা জানান, পর্যটন মেলা উপলক্ষে ৬০ শতাংশ ছাড় দেয়া হয়েছে এবং হোটেল সীগালের শতভাগ রুম ভাড়া হয়েছে। সবমিলিয়ে টানা ছুটির এই ৩ দিন কক্সবাজারে অন্তত ৬ লাখ পর্যটকের আগমন ঘটবে বলে এমনই মনে করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউসে হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘পর্যটন দিবস উপলক্ষে হোটেল কক্ষে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে। পর্যটন মেলা চলাকালীন পর্যন্ত এ ছাড় চলবে।’
তবে পর্যটকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা জানান, ব্যবসায়ীরা যে পরিমাণ ছাড়ের কথা উল্লেখ করেছেন, এ পরিমাণ ছাড় মিলছে না। এখানে অনেকেই ছাড়ের কথা বলে প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে এ ব্যাপারে নজরদারি দিতে হবে।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক আবুল হোসেন বলেন, চাকরি জীবনে খুবই কম ছুটি পাওয়া হয়। এবার টানা ৩ দিনের ছুটিতে একটু প্রশান্তির খোঁজে কক্সবাজার ছুটে আসি। তাই পরিবার নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছি।
এদিকে সাগরে বিরাজ করছে বৈরী আবহাওয়া। ঢেউয়ের মাত্রাও বেড়েছে। তাই সবকটি পয়েন্টে টাঙানো হয়েছে লাল পতাকা। তবে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমুদ্রস্নানে নিরাপত্তা জোরদার করেছে লাইফ গার্ড সংস্থা।
সি সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার ইনচার্জ মোহাম্মদ শুক্কুর বলেন, টানা ছুটি ও পর্যটন মেলাকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার সৈকতে এখন লাখো পর্যটক। তাদের অধিকাংশই কিন্তু সমুদ্রস্নানে ব্যস্ত। এখন তাদের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার জিললুর রহমান বলেন, পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায়। বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে সৈকতে কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম আশা করা হচ্ছে। সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কয়েক স্তরের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, সাত দিনব্যাপী চলা এই পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভালে কক্সবাজারসহ দেশের ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে। বিশ্ববাসীর সামনে কক্সবাজারকে উপস্থাপন করতেই এ মেলার আয়োজন। আশা করি, এ আয়োজনে উৎসবের নগরীতে পরিণত হবে পর্যটন নগরী কক্সবাজার।
জেলা প্রশাসক ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘পর্যটকেরা যাতে নির্বিঘ্নে কক্সবাজার ভ্রমণ ও পর্যটন মেলা উপভোগ করতে পারেন, তার জন্য সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।