রোহিঙ্গা শিবির ও সীমান্ত এলাকায় বেশি
নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »
কক্সবাজার জেলা সদরসহ উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারগুলোতে জাল টাকার ছড়াছড়ি হয়েছে। বিশেষ করে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তে এর ভয়াবহতা বেশি দেখা যাচ্ছে। আসন্ন ঈদ সামনে রেখে এসব জাল নোট তৈরির কারবারি ও পাচারকারীরা খুবই তৎপর হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই এসব জাল টাকা ধরা পড়ছে হাটবাজারগুলোতে। কক্সবাজারের ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায়ও এসব জাল নোট ধরা পড়ছে। বিশেষ করে গ্রামের হাটবাজার ও রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের বাজারগুলো এসব কারবারি ও পাচারকারীদের টার্গেট। এরা বিভিন্ন কৌশলে এসব টাকা সহজ সরল মানুষ এবং ব্যবসায়ীদের দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে। এসব কারবারি মাঝেমধ্যে ধরাও পড়ছে জেলও কাটছে। আবার আইনের ফাঁকে বের হয়ে একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
সূত্র জানায়, মঙ্গলবার ভোরে উখিয়া কুতুপালং এর ১ নম্বর লাম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ১৬ লাখ টাকার জাল নোটসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে আমর্ড পুলিশ সদস্যরা। একই সঙ্গে তাদের পাচারকাজে ব্যবহৃত মটর সাইকেলটিও জব্দ করা হয়।
গ্রেফতাররা হলেন, উখিয়া হলদিয়া পালং ইউনিয়নের মৃত আজিজুর রহমানের পুত্র মোহাম্মদ রহিম ও পশ্চিম হলদিয়া পালং ফিরোজ মিয়ার পুত্র সরোয়ার কামাল (১৮)।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ১৪ আমর্ড পুলিশের অধিনায়ক নাঈমুল হক জানান, একটি দল দীর্ঘদিন ধরে টাকা নকল করছিল। ঈদকে সামনে রেখে সেই টাকা তারা ক্যাম্পের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া চেষ্টা করে। এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তদন্তের পর দুজনকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকার জাল নোট এবং একটি মটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। পরে তাদের উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সূত্র আরো জানায়, রোহিঙ্গা শিবিরসহ জেলার বেশ ক’টি স্থানে গড়ে উঠেছে জাল টাকা তৈরির কারখানা। গত ৩০ মার্চ কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলা গেইটের সামনে রাবেয়া এন্টারপ্রাইজ নামক কম্পিউটার দোকান থেকে র্যাব-৭ অভিযান চালিয়ে ১৬ লাখ জাল টাকা উদ্ধার ও জাল টাকা তৈরির মূলহোতা মিজানসহ তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করে। তারা হলেন, বড়ঘোপ ইউপির মনোহরখালী এলাকার হাফেজ শহীদ উল্ল্যাহর ছেলে জাল টাকা তৈরি সিন্ডিকেটের মূলহোতা সাঈফ উদ্দিন আহম্মদ প্রকাশ মিজান (২৫) এবং তার সহযোগী দুই ভাই উপজেলা পরিষদের সচিব মেজবাহ উদ্দিন আহম্মদ (৩২), মো. জিয়া উদ্দিন (২১) ও কৈয়ারবিল ইউপির নজর আলী মাতবর পাড়া এলাকার ওমর আলীর ছেলে সাইফুল ইসলাম (২২)। পরে তাদের ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
এদিকে গত বছরও র্যাব-৭ ও র্যাব-১৫ উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরে বেশ ক’বার অভিযান চালিয়ে জাল নোট তৈরির কারিগর, তাদের সরঞ্জামসহ পাচারকারি ধরতে সক্ষম হয়েছে।
সূত্রটি আরো জানায়, পাচারকারী সিন্ডিকেট বেশিরভাগ ব্যবহার করে শিশু-কিশোরদের। শিশু ও কিশোরদের দিয়ে তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহের জন্য ক্রেতা সেজে বাজারে পাঠায়। শিশু ও কিশোরদের টাকা সহজ সরল ব্যবসায়ীরা তেমন একটা খেয়াল না করে দ্রব্যসামগ্রী দিয়ে দেয়। পরে এসব টাকা হাতবদল কিংবা ব্যাংকে গেলে ধরা পড়ে। যার ফলে বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিদিন জাল টাকার ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন।
বিভিন্ন সূত্র আরো জানায়, রোহিঙ্গা শিবিরে ১ লাখ টাকার জাল নোট আসল টাকায় বিক্রি হয় ২০/২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে। জাল নোটগুলো কিনে নিয়ে তারা বিভিন্ন হাটবাজারে ঢুকিয়ে দেয়। আবার অনেকেই বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে চোরাকারবারে নানা পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে ব্যবহার করছে। বহু জাল নোট মিয়ানমারেও চলে গেছে।
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হলে এবং পাচারকারিরা ধরা পড়লে যাতে সহজে জেল থেকে বের হতে না পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখলে জাল টাকার ছড়াছড়ি বন্ধ হয়ে যাবে।