ওয়েলস

পর্ব : ২

সঞ্জয় দাশ »

শেষ বিকেলের আলোয় যখন আয়েশি ভঙ্গিতে চেয়ারে বসে দুলছিল তখন ঘড়িতে বেলা পৌনে চারটা। তার দৃষ্টি পেন্ডুলামের দিকে। একটির পর একটি সেকেন্ডের কাঁটা যাচ্ছে আর দুচোখ স্থির রেখে ঘড়ির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে সে ভাবছিল আজ প্রায় ২৩ বছর হলো ওয়েলস-এর মুখোমুখি হয়নি সে। থমকে যাওয়া বিকেলের মতো রোহিতও থমকে গিয়েছিল কিছুক্ষণের জন্য। এক অসীম নীরবতায় খাবি খাওয়া রোহিতের থেকে-থেকে মনে হচ্ছিল পৃথিবীতে মানুষ খুবই নিঃসঙ্গ। একটা সময়ের পর সব ফিকে হতে থাকে। দোল খাওয়া চেয়ারটা থেকে নেমে মোবাইলের ডাটা অফ করে বেরোতে যাবে, ঠিক তখনই হোয়াটসঅ্যাপে এক ভিডিও ফুটেজ এলো ওয়েলস-এর আইডি থেকে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে কষ্ট হচ্ছিল। এও কি সম্ভব! দুচোখে তার রাজ্যের বিস্ময়। ধপাস করে ফের চেয়ারে বসে নিবিষ্ট চিত্তে খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো ভিডিও ফুটেজের আদ্যোপান্ত।
চারদিক শুধু বরফ আর বরফ। দুয়েকটা গাড়ি এদিক-সেদিক পার্ক করা অবস্থায়। বড় মেয়ে রাইসার কোলে সবার ছোট নাফিসা। ভিডিও শ্যুট করা ওয়েলসের গায়ে জড়ানো ছিল আঁটোসাঁটো সাইবেরিয়ান জ্যাকেট। এক বছর বয়সী নাফিসার চোখে রাজ্যের বিস্ময়। বৃষ্টির মতো ঝরে পড়া বরফের দানার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে সে। কোনো ভাবান্তর নেই। তাদের সেই হাসিখুশি মাখা মুহূর্তগুলোকে মনে হচ্ছিল একেবারে জীবন্ত। রোহিতের সামনেই যেন তারা দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখের পলক পড়ছে না। এ যেন অবিশ্বাস্য। রোহিত ফিরে গেলেন সেই ১৯৯৯ সালের কোনো এক বিকেলে। ২৩ বছরের ‘না দেখাকে’ আর কিচ্ছু মনে হচ্ছিল না। এই তো চোখের সামনে দাঁড়িয়ে ওয়েলস … হোয়াটসঅ্যাপে দুতিন লাইন কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রোহিত হাতে তুলে নিল প্রিয় এয়ারফোন। মোবাইলে এয়ার ফোন ঢুকিয়ে বেশ কিছুক্ষণ গানের রাজ্যে হারিয়ে গেল। এভাবে একটু রসদ পেলেই হয়ে যায়। অনন্ত সপ্তাহ-দুয়েক অনায়াসেই ফুরফুরে মুডে থাকা যায়। অনেকদিন পর এমন জাদুকরি রসদ পেয়ে মনটা উচাটন হয়ে উঠলো। অথচ কি আশ্চর্যরকম ভাবেই না কিছুক্ষণ আগে নিঃসঙ্গতার সাথে যুদ্ধ করছিল সে। ২৯ সেকেন্ডের সেই ভিডিও দেখার পর রোহিতের চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছে হয়েছিল, ‘ওয়েলস, তুমি আমার মনে পানি ঢেলেছ। অনেক-অনেক কৃতজ্ঞতা। তোমার কাছে অনেক-অনেক ঋণ।’ সত্যিই এমন আবেশে মুগ্ধতা ভর করে অবলীলায়। আর এমন মুগ্ধতাকে সাথী করেই পথচলা সহজ হয়, জীবনে ফিরে গতি।
বড় একটা কাচের জানলা দিয়ে যতটুকু দৃষ্টি যায় চোখে পড়ে বড়-বড় দুটি শিরীষ গাছ। গাছের ফাঁক গলে আসে রোদ্দুর। সেই রোদ্দুর ছড়িয়েছে দামি টাইলসের সবখানে। লম্বা একটা ইজিচেয়ারে বসে গাছের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রোহিত। মাঝ আকাশে উড়ছে একটা চিল। বেশ কয়েকটা চক্কর দিয়ে হঠাৎ হাওয়া হয়ে গেল সেটা। বন্ধু পাভেলের অফিসে বেশ আরাম করে শরীরটা এলিয়ে দিয়ে একটার পর একটা সিগারেট ফুঁকছিল সে।
: কি ভাবছিস?
: কিছু না।
: এখানে আসলি, অথচ নির্বিকার একটা ভাব নিয়ে বসে রইলি? বিষয়টা কি?
মোরশেদের কথা তার কানেই ঢুকেনি। সে শুধু ভাবছিল চিলটার কথা। ডানা মেলে উড়তে-উড়তে চিলের অকস্মাৎ হাওয়া হয়ে যাওয়ার মধ্যে দূর অতীতের ছায়া দেখছে সে। মানুষের কাছ থেকে কি অতীত ভাবালুতা এভাবেই পালিয়ে যায়? তারপর কোনো একদিন ফাঁকি দিয়ে নীরবে ঐ চিলটার মতোই হঠাৎ নেই হয়ে যায় মানুষও! এমন অবলোকন আগে কখনও হয়নি। ইদানিং হচ্ছে। প্রকৃতি, নিয়তি, এসবের কাছে মানুষ সত্যি অসহায়। প্রতি মুহূর্তেই ধ্যানধারণার পরিবর্তন হচ্ছে।
যে শহরে ওয়েলস থাকে, সেখানে এখন শীতকাল। প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যেও সে ভোরে ঘুম থেকে উঠেছে। আজ তার অনেক কাজ। শখের বাগানটা পরিষ্কার করতে হবে। যেতে হবে মেয়ের স্কুলেও। রাস্তার মধ্যে গাড়ির স্পিড রেখেছে ৭০ কিলোমিটার। শক্ত হাতে স্টিয়ারিং ধরে বেশ ফুরফুরে মুডেই গাড়ি নিয়ে মেয়ের স্কুলে যাচ্ছিল সে। হঠাৎ এক শপিংমলে গিয়ে থামলো। ইচ্ছে হলো কিছু কেনাকাটার। এ শখটা সব সময় হয় না। মাঝে-মাঝে জেগে ওঠে। তখন একসঙ্গে অনেক শপিং করেই ফিরে সে। মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ফেরার পথে পথিমধ্যে একটা পার্কে গিয়ে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিলো সে।
: কি হয়েছে আম্মু?
: না-কিছুই হয়নি। এমনি একটু জিরিয়ে নিলাম।
: চলো না, দেরি হচ্ছে। আমার অনেক কাজ জমে আছে।
: বেশি বকবক করো না। তোমার এত তাড়া কিসের?
: না আম্মু, বিরক্তি লাগছে।
মেয়ের কথায় আর কিছু না বলে হনহন করে পার্ক থেকে সোজা গাড়িতে গিয়ে কিছুক্ষণ থমকে থাকলো সে। হঠাৎ আব্বুর কথা খুউব মনে পড়ছে। কতই না আগলে রাখতেন সবকিছু। কোনো কারণে মন খারাপ থাকলে পরম নির্ভরতার জায়গা ছিল একমাত্র আব্বুই। আজ তিনি অনেক দূরে। নিজেকে সামলে নিয়ে ওয়েলস যখন গাড়ির স্টিয়ারিং ধরলো তখন বেলা চারটা।
বাসায় গিয়ে সোজা চলে গেলেন ছাদে। থরেথরে সাজানো প্রতিটি ফুলগাছের পাতায় একবার হাত বুলিয়ে দেখলেন। পরক্ষণেই শুষ্ক হয়ে থাকা কিছু ফুলগাছের গোড়া পরিষ্কার করে পানি ঢাললেন। বুকের মধ্যে দুহাত ভাঁজ করে কিছুক্ষণ আনমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে ফের সিঁড়ি দিয়ে হনহন করে নিচে নামলেন। তার খুব মনে পড়ছে ফিনল্যান্ডে থাকাকালীন একটা সঙ্গীত প্রতিষ্ঠানের কথা। সঙ্গীত জগত নামে এ প্রতিষ্ঠানটিকে তিলে-তিলে গড়ে তুলেছিল সে। এখন কারো সাথে তেমন যোগাযোগ নেই। তার খুব মনে পড়ে. যখনই কোনো দেশিয় উৎসবের আয়োজন হতো সবার আগে ডাক পড়তো তার। একটা অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্তু করতে যেসব অনুষঙ্গ প্রয়োজন, তার সবই দেখভাল করতো সে। সবাই ছিল তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অথচ আজ নিজের গানের রেওয়াজটাই ভুলতে বসেছে সে। স্বামী মোরশেদুল আলম চৌধুরীও জানতেন স্ত্রীর এ গুণের কথা। তাই তো প্রতিবার যখনই কোনো কাজে তিনি বাংলাদেশে আসতেন সঙ্গে নিয়ে যেতেন একটা ভালো হারমোনিয়াম। অন্যান্য অনুসঙ্গ তো থাকতোই। স্কুল জীবনেই সঙ্গীতে হাতেখড়ি নেওয়া ওয়েলস গানের জন্য আলাদা একটা সময় রাখতেন। সামাজিক সংগঠনের সাথেও জড়িত ছিল সে। বনেদি পরিবারের বিশেষ কিছু রেওয়াজ থাকে। ওয়েলস-এর পিতা, পিতামহ থেকে শুরু করে সবাই সেই বনেদিয়ানাতেই অভ্যস্ত। তবে আভিজাত্যের কোনো অহমিকা নয়। মানবিকতার আদল নিয়ে বেড়ে ওঠা তাদের বংশ পরম্পরায় ছিল মানুষের প্রতি অকৃত্রিম দায়বোধ। সেই দায়বোধ থেকেই তাঁর পিতা সামাজিক কোনো অনুষ্ঠান এলেই অকাতরে মানুষকে সহায়তা করতেন। নিজ হাতে বিলিয়ে দিতেন তাঁর সামর্থ্যরে অনেক কিছু। মানুষকে মানুষ হিসেবে ভাবার যে নীতি-নৈতিকতা তার পাঠ বাবার কাছ থেকেই নিয়েছিলেন ওয়েলস। আজ এই প্রান্তিক সময়ে এসে বাবার শেখানো আদর্শগুলো নিজের সন্তানদের মধ্যেও প্রতিফলিত করার চেষ্টা করছে সে। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবার সন্তান হিসেবে নিজেকে ভাবতে অনেক-অনেক গর্ববোধ হয় তার। কোনো লোভ-লালসার বালাই ছিল না। বনেদি ঘরের সন্তান হয়েও চলতেন সাদাসিধে।
ওয়েলসের ভাবনার মধ্যে যতি পড়ে। হোয়াটসঅ্যাপের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল স্বামীর ফোন।
: শোনো, আজ আমরা বাইরে খাবো
: তুমি কোথায়?
: আমি যেখানেই থাকি না কেন সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরবো। তুমি বাচ্চাদের রেডি করে নিজেও তৈরি থেকো।
আচমকা কি হলো! ওয়েলস কিছু ভাবার মিনিটখানেকের মধ্যেই বাইরে গাড়ির হর্ন শুনতে পেলো। হঠাৎ এমন আয়োজনের জন্য প্রস্তুত ছিল না সে। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার মোরশেদুল আলম চৌধুরী একজন শৌখিন মানুষ। সুযোগ পেলেই তিনি ঘুরতে বের হন পরিবারসমেত। আগে চাকরি করলেও বর্তমানে ব্যক্তিগত ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত। ফিনল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ায় থাকার সময় দু-দুটো বাড়ি ছিল তার। তার নিউইয়র্কের বাড়িটাও বেশ প্রাসাদোপম। তবে আর যাই হোক এই ঘোরাঘুরিটা কিন্তু তার বেশ পছন্দের। সেটা হোক নিজে কিংবা পরিবারের সাথে।
আজ অনেকদিন পর বারান্দার লনে রাখা ইজিচেয়ারটায় বসে আপনমনে দোল খাচ্ছিলেন রোহিত। হাতে তার সুদৃশ্য রথম্যান ব্র্যান্ডের সিগারেট। কফি খেতে-খেতে আনমনা হয়ে কি যেন ভাবার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ভাবনাগুলো ক্রমে গুলিয়ে যেতে থাকে। সুনসান বাসায় তার কিছুই ভালো লাগে না। অথচ জীবনের ১৪টি বছর একাকিত্ব নিয়েই ছিল তার বসবাস। মানুষ কি মধ্যবয়সে এসে সঙ্গ চায়? বাইরে কোথাও বেড়াতে যাওয়া কিংবা লংড্রাইভ সব অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে থাকে। মনের ওপর বিক্ষিপ্ততার চাদর পড়েছে। হঠাৎ সশব্দে সেলফোনটা বেজে উঠলো। বন্ধু জুয়েলের ফোন। রিসিভ করতেই ও-প্রান্ত থেকে কোনো ভণিতা ছাড়াই সে যা বললো তার সামারি হলো- রোহিতকে ঘুরতে যেতে হবে তাদের সাথে। প্রথমটায় একটু হতচকিত হলেও পরক্ষণেই লেজগুটানো কুকুরের মতো ন্যুব্জ হয়ে মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো সে। জীবনের একটা পর্যায়ে এসে কি নতজানু সময় মানুষকে গ্রাস করে? রোহিতও কি সময়ের কাছে নতজানু হচ্ছে?
জুয়েলদের সাথে নৈসর্গিক সৌন্দর্যমণ্ডিত জায়গায় গিয়ে ফের অনুভাবনায় খাবি খেতে-খেতে অতলান্ত বুদবুদে ডুবে রইলেন রোহিত। তারা যেখানটায় এসেছে সেটার নাম দেয়াং পাহাড়। আজ থেকে প্রায় ১৪ বছর আগে এখানটায় আসা হয়েছিল তার। পাহাড়ের গহিন অরণ্যে একটা খোলা জায়গায় সবুজ ঘাসের নিচে সটান শুয়ে পড়ে বিশাল আকাশের দিকে তাকিয়ে আপনমনে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে তন্ময় হয়ে গান শুনছিল সে। আজ হঠাৎ এদ্দিন পর এখানটায় এসে তার মধ্যে বাসা বাঁধতে শুরু করেছে ম্্িরয়মাণতা। আশ্চর্য রকম সৌন্দর্য-বুভুক্ষ মানুষটার মন কেমন করে নেতিয়ে পড়তে পাওে, সেটা এ মুহূর্তে রোহিতের চেহারার দিকে না তাকালে কেউ বুঝতে পারবে না।
হুল্লোড় শেষে যখন বাসায় ফিরলেন রোহিত তখন মাঝরাত পেরিয়ে গেছে। আকাশে উঠেছে থালার মতো চাঁদ। একটা চেয়ার পাতা রয়েছে ছাদের কার্নিশে। আলগোছে গিয়ে ওখানে ঝিম মেরে রইলেন কিছুক্ষণ। পকেট থেকে রথম্যান সিগারেট বের করে মুখে গুঁজে একরাশ ধোঁয়া ছাড়লেন আকাশের দিকে তাকিয়ে। আজ যদি ওয়েলস দেশে থাকতো তাহলে তাকে ফোন করে আসতে বলতো রোহিত। বলতো ‘দেখো আকাশের চাঁদ যেন পূর্ণিমার রুটি। তখন হয়তো ওয়েলস বলতো ‘তোমার মাথা’। আশ্চর্য সব খুনসুটি নিয়ে ভাবতে-ভাবতে কখন যে সিগারেটের আগুনটা নিবে গেল টেরই পেল না সে। আচ্ছা, এটা কি ঠিক, বাস্তবে যখন কারো সান্নিধ্য মেলে না তখন কল্পকুহকই নিরালম্ব অবলম্বন! তবে সে কল্পকুহক সবাইকে নিয়ে নয়; সবাইকে নিয়ে কল্পকুহকের বুনন সম্ভব নয়। কিংবা সবাই এর যোগ্যও নয়। একমাত্র ওয়েলসকে নিয়েই কল্পকুহকের জালবোনা যায়। তার মধ্যেকার যাদুকরি মনোলোভা, মিশরের পিরামিডের মতো অতি আশ্চর্য দৃশ্যমান চিত্রকল্প মাঝেমধ্যে কল্পকুহককেও হার মানিয়ে যায়।
: আমাকে এক কাপ চা বানিয়ে দিতে পারো?
: কেন নয় … এককাপ কেন, তুমি বললে আমি শুধু বানাতেই থাকবো …
: বকবক বন্ধ করো।
রোহিতের হাতে বানানো চা খাওয়ার পর মুগ্ধতার ঢেকুর তুলে ওয়েলস যা বললো, তার সারৎসার হলো ‘এর চেয়ে ভালো চা আমি বানাই। এসব কি বানিয়েছ তুমি?’
কথাটা শুনে হোঁচট খেলেও তাকে চা বানিয়ে খাওয়ানোর পর মনে হতে লাগলো জীবনটা বুঝি সার্থক।
গাড়িটা ছুটছে। ৫০ কিলোমিটার গতিতে ছোটার পর যখন তারা গাড়ি থেকে নামলেন তখন শেষ বিকেল। রোদের তেজ মুখে পড়ে অদ্ভুত এক মায়াবী দ্যোতনা ছড়িয়েছে ওয়েলস এর মুখে।
: অদ্ভুত সুন্দর।
: কী?
: তোমার মায়াবী চোখ।
: থ্যাংকু।
: চলে পাহাড়ে ওঠা যাক।
: হুম চলো।
একটার পর একটা পাহাড় ডিঙিয়ে দূরে একটা ঝিলের ধারে তারা বসে পড়লো। হঠাৎ মুখ থেকে সঙ্গীতের মূর্ছনা ছড়িয়ে পড়লো ওয়েলসের। চোখের পাতা বন্ধ করে সজোরে গাইছে সে। কপালে বিন্দু-বিন্দু মুক্তোর মতো কি যেন আবছা দেখায় ভরসন্ধ্যায়। সন্ধ্যাটা নামছে মন্থর গতির সরীসৃপের মতোই। কুয়াশার আবহ ছড়ানো ভরসন্ধ্যায় চারপাশের গাছগুলো যেন জড়িয়ে আছে পরম মমতায়, দূরে ঝিলের ধারে কিছু শাদা বক পানিতে মুখ ডুবিয়ে মাছধরার ধ্যানে মগ্ন। এর মধ্যে গান শুনতে-শুনতে কখন যে সন্ধ্যা ভারী হতে থাকে টেরই পায়নি তারা।
: ওমা গো … চলো, চলো। রাত হয়ে গেল।
: চলো আজ এখানে থেকে যাই।
: পাগল নাকি তুমি?
গাড়িটা ফের ছুটলো ৫০ কিলো বেগে। ওয়েলসকে তাদের বাসায় নামিয়ে দিয়ে রোহিত পা বাড়ালো মোটেল সৈকতে। ওখানে একটা জমকালো পার্টি হবে আজ। হয়তো সারারাতই থাকতে হতে পারে ওখানটায়।
কলিংবেলের শব্দে আচমকা ঘুমটা ভেঙে গেল রোহিতের। পত্রিকার বিল নিতে এসেছেন হকার। সাতসকালে তার মুখটা দেখে ভালো না লাগলেও বিলটা দিয়ে মাথা নিচু করে গাউনের বেল্ট ঠিক করতে করতে সোজা ওয়াশরুমে গেল। শাওয়ার ছেড়ে গুনগুনিয়ে গান গাইতে-গাইতে স্বপ্নের কিয়দংশ আরেক দফা ভাবার চেষ্টা করলো। তাহলে কি এতক্ষণ স্বপ্নের ঘোরেই ছিল সে! স্বপ্নটা আরেকটু দীর্ঘায়িত হতে পারতো। কিংবা দেয়াং পাহাড়ে তাদের রাজ্যের কথোপকথনের ইতি যদি না ঘটতো … কতই না মাধুকরী অনুরণনে ভর করতো অপার্থিব আনন্দ। (চলবে)