এলো সুরভিত পুণ্যময় রাত- শবেবরাত। এই বরাত মানে মুক্তি। আল্লাহতালার তরফ থেকে অকাতর দয়া ও অপার কৃপা বিতরণের রজনী। বদ্ধ হৃদয় ও চেতনার অর্গল খুলে ছড়িয়ে পড়ার এই রাত সুবিশাল রহমতের ভা-ার। পবিত্র কোরানে উল্লেখ আছে এমন একটি রাতের কথা, যে-রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা স্থির হয়। তাই একটি শবেবরাতের রাতের পর আরেকটি শবেবরাতের রাতের জন্যে মুমিনের থাকে উদ্বেল আগ্রহভরা প্রতীক্ষা। প্রত্যেক মুসলমান নরনারী এই পুণ্যময় রাতে নত হন সেই অভ্রান্ত, একক আল্লাহর দরবারে। ক্রন্দনে আর সকাতর প্রার্থনায়, সৌরভ ও আলোর ঝরনায়, নিবিড় নিস্তব্ধতা ও সৌম্য একাকীত্বের মধ্য দিয়ে বিশ্বাসী মানুষেরা বিনিদ্র রাত কাটাবেন আজ।
বহু প্রজ্ঞাবান মুফাসসিরীনের মতে, এটি হচ্ছে জিকির ও সালাতের রাত, অনুগ্রহ ও করুণার রাত, তওবা ও অনুশোচনার রাত, সদকা ও খয়রাতের রাত, মর্যাদাবৃদ্ধি ও বিপদ সরে যাবার রাত, আশাপূর্ণ হওয়া ও দোয়া কবুল হবার রাত, বিশ্বাস ও একাগ্রতার রাত।
বিগত বছরের সকল অজ্ঞাত স্খলন ও অজাচারের জন্যে সম্পূর্ণ সমর্পিত হবেন আজ মুমিনেরা। তাঁদের অন্তরের পরিচ্ছন্ন প্রার্থনা ও ক্রন্দনপূর্ণ আবেদনে বিশ্বস্রষ্টা মহান আল্লাহপাক তাদের জন্যে বিচলিত হয়ে তাঁর রহমত বিতরণ করবেন।
এ পবিত্র রাতের ইবাদত বন্দেগি, তওবা-ইস্তিগফার কবুল হলে মুমিন নরনারী জাহান্নামের অগ্নিশিখা থেকে মুক্তি পাবেন। মুমিন জননী হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু (দ.) ইরশাদ করেছেন, শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতে আল্লাতালা দুনিয়ার আসমানে নিজ তাজাল্লিতে অবতরণ করবেন। এবং এ রাতে বনু কাল্ব গোত্রের বকরীগুলোর পশম সংখ্যার অধিক সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে দেবেন। ক্ষমাপ্রাপ্ত ওই বান্দারা হবেন জাহান্নাম থেকে মুক্ত। সেই মুক্তির আনন্দ, সেই মুক্তির তৃপ্তি, সেই মুক্তির উল্লাস বর্ণনাতীত।
পরম করুণাময় মানুষের ভেতর অসীম সৃজনীশক্তির বিকাশ ঘটিয়েছেন। তাঁকে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ বলে তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপাদন করেছেন পৃথিবীর বুকে। মানুষের এই অপরিসীম সম্ভাবনা আবার আল্লাহর কুদরতের পরোয়ানার অধীন। এই মানুষের দ্বারা সৃষ্টির ভারসাম্য ও সৌন্দর্য বিঘিœত হলে, জগতের প্রাণী ও জীবজগতের অস্তিত্ব বিপন্ন হলে আল্লাহতালা বড় নাখোশ হন। তার সেই অসন্তুষ্টির নানা আলামত বিশ্বের দেশে-দেশে, ভূখ-ে-ভূখ-ে নানাভাবে প্রকাশিত হয়। বন্যা খরা জলোচ্ছ্বাস দাবানল প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যয় মানুষের অন্যায্য আচরণের বিরুদ্ধে সৃষ্টিকর্তার ক্রোধেরই প্রকাশ ছাড়া আর কিছু নয়। পবিত্র কোরানের বিভিন্ন আয়াতে, মহানবী (দ.)-এর বয়ানে এ সত্য বারবার উচ্চারিত হয়েছে। লোভে, প্রবল মোহের তাড়ায় বেমালুম ভ্রষ্ট হয়ে যাওয়া মানুষেরা আজ এই রাতে তাদের তওবা ও প্রার্থনার মাধ্যমে নতুন জীবনলাভের বরকত অর্জনে প্রণত হবেন। সেজদায় ও বিধুর ক্রন্দনে পুণ্যাত্মারাও তাদের জন্যে আগামী দিনের আরও নাজাত কামনা করবেন এই রাতে, বিপুল ফজিলতে ভরা এই শবেবরাতে।
মতামত সম্পাদকীয়