সুপ্রভাত ডেস্ক »
ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে অপহৃত বাংলাদেশি জাহাজ ‘এম ভি আবদুল্লাহ’কে ৪৮ ঘণ্টা ধরে অনুসরণ করছে ভারতের নৌবাহিনী। জাহাজটির নাবিকদের মুক্ত করার চেষ্টায় টহলদারি বিমান ও রণতরিও মোতায়েন করা হয়েছে। শুক্রবার (১৫ মার্চ) আনুষ্ঠানিকভাবে এমন তথ্য জানিয়েছে ভারতের নৌবাহিনী।
গত মঙ্গলবার (১২ মার্চ) মোজাম্বিক থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে কয়লা নিয়ে যাওয়ার সময় ভারত মহাসাগরে এম ভি আবদুল্লাহ নামে ওই বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজটি জলদস্যুদের খপ্পরে পড়ে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই দলটিতে ১৫ থেকে ২০ জন জলদস্যু ছিল, তারা জাহাজের ২৩ জন ক্রু-কে জিম্মি করে জাহাজটিকে নিয়ে সোমালিয়া উপকূলে ভিড়িয়েছে।
ভারতীয় নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, অপহরণের ঘটনা যখন ঘটে তখন জাহাজটি থেকে যে ‘এসওএস’ বার্তা পাঠানো হয়েছিল, তাতে সাড়া দিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই তারা অ্যাকশন শুরু করে। বস্তুত ভারত মহাসাগরের ওই অংশটিতে (যা সেশেলস দ্বীপপুঞ্জের কাছে) ভারতীয় নৌবাহিনীর সক্রিয় উপস্থিতি আছে এবং ওই অঞ্চলে জলদস্যুতা প্রতিরোধেও তারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শক্তির সঙ্গে মিলিতভাবে কাজ করে থাকে।
নৌবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই জাহাজ থেকে বিপদসংকেত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা একটি লং রেঞ্জ মেরিটাইম পেট্রল (এলআরএমপি) এয়ারক্র্যাফট ওখানে মোতায়েন করি। প্রসঙ্গত, এই ধরনের বিমানগুলো মহাসমুদ্রের সুবিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে টহলদারি চালানোর ক্ষমতা রাখে।
১২ মার্চ সন্ধ্যার দিকে ওই টহলদারি বিমানটি এম ভি আবদুল্লাহ-র সঠিক অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। ভারতীয় নৌবাহিনী বলছে, সে দিন সন্ধ্যায় জাহাজটির লোকেশন চিহ্নিত করার পর আমরা জাহাজটির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করি। আমাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল জাহাজের ক্রু-রা কী অবস্থায় আছেন, সেটা খোঁজ নেওয়া। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা জাহাজটি থেকে কোনও সাড়া পাইনি।
ভারতীয় নৌবাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, আসলে ততক্ষণে জাহাজের কন্ট্রোল রুম বা ব্রিজের দখল জলদস্যুরা নিজেদের হাতে নিয়ে নিয়েছিল বলে তারা অনুমান করছেন; যে কারণে হয়তো তারা কোনও সাড়া দেননি।
ভারতীয় নৌবাহিনীর বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই মিশনে মেরিটাইম সিকিওরিটি অপারেশনের জন্য যে রণতরি আছে, সেটিকেও (এম ভি আবদুল্লাহ-র দিকে) সরিয়ে আনা হয় এবং তারা ১৪ মার্চ (বৃহস্পতিবার) সকালে জাহাজটিকে ইন্টারসেপ্ট করতে সক্ষম হয়। এরপর জাহাজটির ক্রু-রা সবাই যে সুস্থ আছেন, সেটা নিশ্চিত করা হয়।
তারপর থেকে অপহৃত জাহাজটি সোমালিয়ার জলসীমায় প্রবেশ করা পর্যন্ত পুরোটা সময় ভারতের রণতরি সেটির খুব কাছাকাছিই অবস্থান করছিল, জানানো হয় ওই বিবৃতিতে।
সামুদ্রিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন ক্ষেত্রে বিদেশের কোনও নৌবাহিনী অপহৃত জাহাজে নিজে থেকে উদ্ধার অভিযান চালাতে পারে না– কারণ তাতে জিম্মি নাবিকদের জীবন বিপন্ন হতে পারে বা মুক্তিপণ দিয়ে রফার চেষ্টাও (যদি সেরকম কিছু চলে) ভেস্তে যেতে পারে। ফলে ভারতীয় বাহিনীর রণতরিও এক্ষেত্রে একটা পর্যায়ের পর হাল ছেড়ে দিয়েছে। যদিও তাদের জাহাজ এখনও সোমালিয়ার জলসীমার ঠিক বাইরেই অপেক্ষা করছে বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ এই জাহাজটির অপহরণের খবর সামনে আসার পর সে দিনই বাংলাদেশের নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছিলেন, তারা এই সংকটের সমাধানে ভারতের সহায়তা চেয়েছেন।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন