এক দশক পর প্রাক্তনের প্রত্যাবর্তন

ইমরান এমি »

কেমন আছ তুমি?
ভালো, তুমি।
তোমাকে অনেকদিন দেখিনি।
হুম।
দেখা করার কোনো সুযোগ আছে?
না।
কারণ জানা যাবে?
না।
বিয়ে কখন হয়েছে?
তিন বছর।
দেখা করতে আসবে?
না, মেয়ে আছে।
আচ্ছা, মনে পড়ে আমাকে?
সেটা না-বলা থাক।
তোমার না-বলাতে সব শেষ আমার। কত স্বপ্ন না ছিল তোমাকে ঘিরে, বাদ দাও সেসব কথা। এখন তোমার একটি ছবি দাও না দেখি।
সেটা না দেখলেই হয়।
কেন, মন তো মানে না। জানো, তোমার একটা ছবি দেখে এখনও দিন কাটে আমার। এক দশক হচ্ছে ছবিটির বয়স।
এভাবে এক দশক পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে ওর প্রাক্তনীর সাথে কথোপকথন চলছে শিমুলের। শিমুলের প্রাক্তনী সুমির সাথে তার সর্বশেষ দেখা হয়েছে এক দশক আগে। হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই বিচ্ছেদ ঘটে তাদের ভালোবাসার। কেনো কারণ ছাড়া সুমিকে হারিয়ে শিমুলের জীবন বদলে গেছে। এক দশক পর প্রাক্তনের সাথে কথা বলার সুযোগ পেয়ে তাই বিচ্ছেদের কারণ জানতে কৌতূহলী শিমুল। কিন্তু কোনোভাবেই সুমি বিচ্ছেদ করার কারণ বলে না। তবে এক দশক পর সাক্ষাত করার সম্মতি দেয়। অতপর দীর্ঘ এক দশক পর প্রাক্তনী সুমির সাথে এক রোমাঞ্চকর সময় পার করল শিমুল। তাতে যেন হাতে চাঁদ পেলো সে।
শিমুল ও সুমির প্রেমের সম্পর্কটা ছিল স্কুলজীবন থেকে। তখন সুমি সবেমাত্র মাধ্যমিকে উঠেছে। এমন সময়ে শিমুলের জীবনে ধূমকেতুর মতো সুমির আগমন ঘটে। তখন থেকে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ। ঘুরে বেড়ানো। পার্ক আর রেস্টুরেন্টে কাটিয়েছে ওরা অনেক সময়। এভাবে তাদের ভালোবাসার বয়স বাড়তে থাকে। এক সময় সুমির এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার সময় হয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবে বাঙালি মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার দুটি মৌসুম গ্রামাঞ্চল হোক শহুরে জীবনে হোক। সেটি হলো সহরাচর ইন্টার পাস করলেই বিয়ের জন্য পরিবার উঠে-পড়ে লাগে। সুমির পরিবারও ওর ইন্টার পরীক্ষা দেওয়ার আগে থেকে তাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য নানা প্রস্তুতি নিতে থাকে। আর এসব কিছু সুমির অগোচরে হলেও এক সময় সুমি ঠিকই বুঝতে পারে। আর সুমি বিষয়টি শিমুলের সাথে শেয়ার করলে শিমুলও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। উদ্ভট কিছু কাজ করে। যার কারণে সুমির পরিবারের আর অজানা থাকে না সুমি আর শিমুলের সম্পর্কের কথা।
সুমির পরিবার তার কাছে তাদের চলমান সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে তাকে সাফ জানিয়ে দেয় শিমুলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য। কিন্তু সুমি প্রথমে পরিবারের চাপে নতি স্বীকার না করলেও এক পর্যায়ে মেনে নেয়। কোনো এক অজানা কারণে অস্বীকার করে বসে তার আর শিমুলের অর্ধযুগের সম্পর্কের কথা। পরিবারও ভরসা পায় সুমির কথায়। সুমি পরিবারের সদস্যদের ভরসা দিয়ে ভেঙে ফেলে তার প্রতি থাকা শিমুলের সব আস্থা আর বিশ্বাস।
বদলে যেতে থাকে সুমি। একটি মাত্র ক্ষুদেবার্তায় ছিন্ন করে শিমুলের সাথে তার পথচলা। অবসান ঘটিয়ে ফেলে শিমুলের প্রথম ভালবাসা। তবে কি কারণে এভাবে ছেড়ে দেওয়া তার কোনো কারণও বলেনি সুমি। ফলে প্রথম ভালোবাসা হারিয়ে শিমুলের জীবন বদলে যায়। এরপর শিমুল নিজের মতো নিজের জীবন সাজিয়েছে নতুন করে। সুমিও স্বামী ও সন্তান নিয়ে সুখের সংসার করছে। এই সময়ে ফের সুমি-শিমুলের সাক্ষাত ভয়ঙ্কর কিছুর বার্তা দিচ্ছে। যার কারণে শেষ পর্যন্ত সুমির সাথে সাক্ষাত ও সবধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে শিমুল নিজের পরিবার, সন্তান নিয়ে সুখে দিন কাটাচ্ছে। ও ভাবে, পরকীয়া এখন একটি সামাজিক ব্যাধি। পরকীয়ার জেরে নানা অঘটন ঘটছে। এক সময়ের ভালোবাসার মানুষটার জন্য এখন নিজের জীবন বা সুন্দর সংসারটা নষ্ট করার মতো বোকা নয় শিমুল।