বে টার্মিনাল নিয়ে সবার আগে প্রস্তাবনা দিয়েছিল চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স। সংগঠনটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বর্তমানে বাণিজ্য বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরকে এর সক্ষমতার চেয়েও বেশি সেবা দিতে হচ্ছে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান দেশের অর্থনীতি আর ব্যবসা-বাণিজ্য সামাল দিয়ে কীভাবে এগুবে বন্দর, এমন প্রশ্ন চিন্তার ভাঁজ তৈরি করছে। এমন পরিস্থিতিতে আশার আলো দেখাচ্ছে আগামীর বন্দর বলে খ্যাত বে টার্মিনাল। বিষয়টি নিয়ে সুপ্রভাতের সাথে কথা হয় চেম্বার প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলমের।
সুপ্রভাত বাংলাদেশ : বে টার্মিনালের প্রস্তাবনা বিষয়ে বলুন?
মাহবুবুল আলম : হালিশহর সৈকত এলাকা ঘেষে সমুদ্রে জেগে উঠা ভূমিতে বে টার্মিনাল করার বিষয়টি চিটাগাং চেম্বার থেকে ২০১০ সালে প্রথম প্রস্তাবনা করা হয়। তারপর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করে এবং বে টার্মিনাল গড়ে তোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়।
সুপ্রভাত : কিন্তু এতো বছরেও এই প্রকল্পের অগ্রগতি হলো না কেন?
মাহবুবুল আলম : আমরা ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, এটা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের। ব্যবসায়ী তথা দেশের অর্থনীতির স্বার্থে বে টার্মিনাল আজকেই দরকার। যেভাবে বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে সেক্ষেত্রে এই টার্মিনাল ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের সামনে কোনো বিকল্প নেই।
সুপ্রভাত : বে টার্মিনালের সুবিধা কী?
মাহবুবুল আলম : বে টার্মিনালের অনেক সুবিধা। বিদ্যমান জেটিতে জাহাজ আসতে হলে সাগর থেকে ১৫ কিলোমিটার নদীর চ্যানেলের ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। কিন্তু বে টার্মিনালে মাত্র এক কিলোমিটারের মধ্যে জেটিতে পৌঁছানো সম্ভব। এছাড়া জোয়ার-ভাটা নির্ভরতা থাকায় বিদ্যমান জেটিতে যেকোনো সময় জাহাজ প্রবেশ ও বের হতে পারে না। বিপরীতে বে টার্মিনালে যেকোনো সময় জাহাজ প্রবেশ ও বের হতে পারবে। সর্বোপরি বড় দৈর্ঘ্যরে এবং প্রায় ১২ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বে টার্মিনালে ভিড়তে পারবে।
সুপ্রভাত : বে টার্মিনালে অবকাঠামোগত সুবিধা কেমন আছে বলে মনে করছেন?
মাহবুবুল আলম : বে টার্মিনালের পাশে আউটার রিং রোড রয়েছে, এর সাথে যুক্ত হচ্ছে টানেল। বে টার্মিনাল থেকে পণ্য সরাসরি রিং রোড হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাতায়াত করতে পারবে। একইসাথে কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত টানেল দিয়ে মাতারবাড়ি বন্দর বা কক্সবাজারের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবে। অপরদিকে বে টার্মিনালের পাশে রেললাইনও রয়েছে। তাই পণ্য পরিবহনের নেটওয়ার্ক প্রায় প্রস্তুত রয়েছে। সেই হিসেবে বলা যায় বে টার্মিনাল একটি রেডি পোর্ট।
সুপ্রভাত : বে টার্মিনাল হলে কি শহরের যানজট কমবে?
মাহবুবুল আলম : বে টার্মিনাল চালু হলে পণ্য পরিবহনে প্রতিদিন যাতায়াত করা প্রায় চার হাজার ট্রাক, লরি, কাভার্ডভ্যান নগরের ভেতরে প্রবেশ করবে না। বে টার্মিনাল থেকে পণ্য নিয়ে সরাসরি দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলে যাবে। এতে নগরী যানজটমুক্ত হবে।
সুপ্রভাত : বে টার্মিনাল যেহেতু বিদ্যমান পোর্টের ছয়গুন। তাই বে টার্মিনাল চালু হলে বিদ্যমান পোর্টের উপযোগিতা কতটা থাকবে?
মাহবুবুল আলম : বে টার্মিনালই হবে আমাদের আগামীর বন্দর। মিরসরাই ইকোনমিক জোন এবং ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাষ্ট্রগুলোকে সাপোর্ট দিতে এই বে টার্মিনাল খুবই সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। তবে বিদ্যমান পোর্টটি আগামীতে অনেকটা লাইটার জাহাজের বন্দর হিসেবে রূপ নিতে পারে। তবে এখনই এবিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। আগেতো বে টার্মিনাল হোক।
সুপ্রভাত : বে টার্মিনালের চারপাশে এখনো বিস্তর খালি জায়গা রয়েছে। বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবহারের জন্য তা কতটুকু উপযোগী?
মাহবুবুল আলম : চট্টগ্রাম বন্দরের আশপাশে মাঝিরঘাট এলাকায় বন্দরকেন্দ্রিক বেসরকারি অনেক স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এটাই স্বাভাবিক। একইভাবে বে টার্মিনালের আশপাশে যেহেতু এখনো অনেক খালি জায়গা রয়েছে তাই সেখানেও ধীরে ধীরে ব্যবসায়িক স্থাপনা গড়ে উঠবে এটাই স্বাভাবিক।
সুপ্রভাত : বে টার্মিনাল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে চিটাগাং চেম্বারের প্রস্তাবনা কী?
মাহবুবুল আলম : বে টার্মিনালে কী হচ্ছে এবং তা কবে নাগাদ চালু করা হবে তা ব্যবসায়ীদের জানাতে হবে। কারণ ব্যবসায়ীদের জন্যই বন্দর। তাই বে টার্মিনালের কর্ম পরিকল্পনা সম্পর্কে ধারণা থাকলে আগামীতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তা ব্যবসায়ীদের জন্য সহজ হবে।