দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বিদেশে বাজারজাত
নিজস্ব প্রতিনিধি, উখিয়া
চলতি মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো কোন অঘটন সৃষ্টি না হওয়ার প্রেক্ষিতে ও রোগবালাই মুক্ত পরিবেশে চাষাবাদের কারণে উখিয়ায় সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের তথ্য মতে এ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে উৎপাদিত সুপারি স্থানীয় চাহিদা পূরণের পরেও ২০ কোটি টাকার সুপারি বাজারজাত হচ্ছে। দেশের গ-ি পেরিয়ে এসব সুপারি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হওয়ার কারণে কাঁচা সুপারির কদর আগের তুলনায় অনেকটা বেড়েছে বলে মনে করছেন চাষীরা। সুপারি চাষাবাদের মাধ্যমে অস্বচ্ছল পরিবারের মধ্যে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আসার সুবাদে এখানে বাণিজ্যিকভাবে সুপারি চাষাবাদ হচ্ছে।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, পরিত্যক্ত জমিতে সুপারি চাষাবাদ ও উৎপাদন করে শত শত পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
কৃষি অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবেশ অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে সুপারি চাষাবাদ করে কৃষকেরা লাভবান হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইতিপূর্বে মিয়ানমার থেকে প্রচুর পরিমাণ কাঁচা ও শুকনা সুপারি চোরাই পথে পাচার হয়ে আসছিল। বর্তমানে মিয়ানমারে অস্থিতিশীল পরিবেশ ও সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীরা এদেশে চলে আসার কারণে চোরাই পথে সুপারি পাচার হয়ে আসার আর কোন সম্ভাবনা নেই। যার কারণে স্থানীয় কৃষকেরা সুপারি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে। এতে সুপারি চাষাবাদের উপর নির্ভরশীল পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি অকৃষি পরিত্যক্ত জমিগুলো উৎপাদনমুখী হচ্ছে বলে দাবী কৃষকদের।
অভিজ্ঞজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ৮০ দশকে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমাণ শুকনা সুপারি এদেশে পাচার হয়েছে। চোরাই পথে আসা এসব শুকনা সুপারি হাট বাজার সয়লাব হয়ে পড়ার কারণে দেশীয় উৎপাদিত সুপারি বাজারজাত করতে গিয়ে কৃষকেরা ন্যায্য মূল্য পায়নি। এতে করে স্থানীয়ভাবে সুপারি চাষাবাদে কৃষকেরা অনেকটাই নিরোৎসাহিত হয়ে পড়ে। ১৯৯১ সালে মিয়ানমারে বসবাসরত বৃহত্তর রোহিঙ্গা নাগরিক এদেশে চলে আসার কারণে সুপারি পাচারের ধারাবাহিকতা বলতে গেলে বন্ধ হয়ে যায়। এতে বাড়তে থাকে স্থানীয় সুপারির চাহিদা। বাজারে সুপারির দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে কৃষকেরা পরিত্যক্ত অকৃষি জমিগুলোতে সুপারির চাষাবাদ শুরু করে। অনেকেই বলছেন, ধানের চাইতে সুপারি চাষাবাদ করে বেশি পরিমাণ লাভবান হওয়া যাবে।
পান সুপারি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সুলতান আহমদ জানান, প্রতি মৌসুমে এ উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে প্রায় ২০ কোটি টাকার সুপারি বাজারজাত হচ্ছে। এসব সুপারি ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন আড়তে চলে যাচ্ছে। পরে ওইসব সুপারি প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। অর্থকরী ফসল পান, সুপারি উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল জালিয়াপালং ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি বসত ভিটা ছাড়াও স্থানীয়ভাবে ৫ হাজারেরও অধিক পরিবার বাণিজ্যিকভাবে সুপারি উৎপাদনে সক্ষম হওয়ায় চলতি মৌসুমে সুপারির বাম্পার উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
সরেজমিন সোনারপাড়া বাজার ঘুরে দেখা যায় উৎপাদিত সুপারিতে বাজার সয়লাব হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক ও কাদির হোছন জানান, এ বাজার থেকে দৈনিক ৮/১০টি ট্রাক বোঝাই সুপারি দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হচ্ছে। তবে বাজার ইজারাদার কৃষকদের নিকট থেকে অতিরিক্ত হারে টোল আদায় করার কারণে কৃষকেরা সুপারি বাজারজাতকরণে আর্থিকভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। এ ব্যাপারে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট একটি অভিযোগ করলেও তা কোন কাজে আসেনি বলে সাংবাদিকদের জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রসনজিৎ তালুকদার জানান, চলতি মৌসুমে প্রায় ২০ কোটি টাকার সুপারি উৎপাদন হয়েছে। সুপারি বাজারজাত করে কৃষকেরা লাভবান হওয়ার কারণে এলাকাভিত্তিক সুপারি চাষ ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।