সুপ্রভাত ডেস্ক »
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর এখন পর্যন্ত দেশটির ২২ লাখ নাগরিক উদ্বাস্তু হিসেবে পাশের কয়েকটি দেশে চলে গেছেন। ইউরোপ এখন ইউক্রেন শরণার্থীদের চাপে। তাই প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরনার্থীরা আরো মনোযোগ হারাবে কিনা।
বাংলাদেশে এখন ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী আছেন । তাদের বড় অংশটিই কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে অবস্থান করছেন। অল্প কিছু শরণার্থী ভাসানচরে অবস্থান করছেন। গত ৩ মার্চ ঢাকায় অবস্থানরত ১০ দেশের রাষ্ট্রদূতেরা ভাসানচর পরিদর্শন করেছেন।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শণার্থীদের সার্বিক বিষয় দেখাশোনা করে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন বা আইআইআরসি। জাতিসংঘের ইউএনএইচসিআর এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। ২০২১ সালে জয়েন্ট রেসপন্স প্লান-এর যে হিসাব তাতে দেখা যায় ১০ লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা শরনার্থীর জন্য মোট ডোনারদের সহায়তা প্রয়োজন ছিলো ৯৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, দেওয়া হয়েছে ৬৭৪ মিলিয়ন ডলার যা প্রয়োজনের তুলনায় ২৮ ভাগ কম। ২৬৯ মিলিয়ন ডলার সহায়তা পাওয়া যায়নি।
এর আগেও কোনো বছরই প্রত্যাশিত সহায়তা পাওয়া যায়নি। ২০১৭ সালে প্রয়োজন ছিলো ৪৩৪ মিলিয়ন ডলার, পাওয়া গেছে ৩১৭ মিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সালে ৯৫১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে পাওয়া গেছে ৬৫৫ মিলিয়ন ডলার। ২০১৯ সালে ৯২০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে পাওয়া গেছে ৬৯৯ মিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে ১০৫৮ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে পাওয়া গেছে ৬২৯ মিলিয়ন ডলার।
এখানে স্পষ্ট যে ২০২০ সালের পর থেকে প্রতিশ্রুত সহায়তাও কমছে এবং প্রতিশ্রুত সহায়তার গড়ে ৭০ ভাগের বেশি পাওয়া যাচ্ছেনা।
ইউক্রেনে হামলার পর ইউএনএইচসিআর তাদের তৎপরতা এবং চেষ্টা ইউক্রেনের দিকে নিবিষ্ট করেছে। ইউরোপে প্রতিদিনই শরণার্থী বাড়ছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২২ লাখ শরনার্থী প্রবেশ করেছে বিভিন্ন দেশে। ইউএনএইচসিআর-এর টুইট বার্তাগুলো বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে তারা এখন ওইদিকেই নজর দিচ্ছেন। ফলে এই বছর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি আগ্রহ ডোনারদের আরো কমতে পারে। সহায়তাও অনেক কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রিফিউজি এন্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট ইউনিটের(রামরু) চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী মনে করেন,”ইউক্রেন পরিস্থিতির কারণে ইউরোপে এখন শরণার্থীর চাপ বাড়ছে। স্বাভাবিক কারণেই রোহিঙ্গাদের প্রতি তাই তাদের মনোযোগ কমতে পারে। এমনিতেই রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা কমে আসছে। এই কারণে আরো কমতে পারে। তাই আমাদের লবিং এবং যোগাযোগ আরো বাড়াতে হবে।”
ইউএনএইচসিআর নতুন কোনো ঘটনা ঘটলে সেটা নিয়েই বেশি তৎপর হবে এটা স্বাভাবিক। আর এটা ইউরোপের হওয়ায় ওই অঞ্চলের ডোনার মনোযোগ সেদিকে যাওয়ারই কথা বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন,” এখন বিভিন্ন ফোরামে শরণার্থীদের নিয়ে অনেক কথা হবে। সেসব ফোরামে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের উচিত হবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবসনের ওপর জোর দেয়া। কারণ তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোই আসল কাজ। তাদের ফেরত পাঠাতে পারলে এই ফান্ড নিয়ে আমাদের আর ভাবতে হবে না।”
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন,”ফান্ডের সঙ্কট হতে পারে তবে সেটা ইউএনএইচসিআরকে দেখতে হবে। সেটা দেখতে না পারলে তাদের অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। তাদের উচিত এখন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জোর দেয়া । তাহলে বিষয়টি তাদের জন্যও সহজ হবে।”
তার কথা,”ডোনারেরা যা দেয় তার বড় একটি অংশ আবার তারাই থাকা-খাওয়া বাবদ খরচ করে। এখন যদি সহায়তা কমে যায় তাহলে রোহিঙ্গরা আরো কম পাবে।”
তিনি বলেন,” শরণার্থী নিয়ে ইউরোপ ও পশ্চিমা বিশ্বের দ্বৈত নীতি আছে। তারা এখন রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। কিন্তু মিয়ানমারের ওপর দেয়নি। দিলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান আগেই হতো। ইউরোপের অনেক দেশ দরজা খুলে দিয়েছে। কিন্তু আগে তারা বলেছে তারা কোনো শরণার্থী নেবে না। ইউরোপের শরণার্থী বলেই তারা এখন উদার।”
তবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সহায়তা কমতে পারে এমন কোনো ইঙ্গিত এখনো পাওয়া যায়নি বলে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। তিনি বলেন,” ইউরোপে এখন শরণার্থী সংকট তৈরি হয়েছে । তাদের ওপর চাপ পড়বে। তবে তাদের যে অর্থনৈতিক অবস্থা তাতে রোহিঙ্গাদের সহায়তা কমবে বলে মনে হয় না।”
তিনি জানান,”আমাদের সাথে নিয়মিত ইউএনএইচসিআর, আইওএম এবং ডোনারদের সাথে বৈঠক হচ্ছে। যোগাযোগ হচ্ছে। সম্প্রতি ১০ দেশের রাষ্ট্রদূতকে আমরা ভাসানচরে নিয়ে যাই। তারা আমাদের কাজে সন্তুষ্ট এবং সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা এখন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ওপরও জোর দিচ্ছি।”
সূত্র : ডয়চে ভেলে