শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের ব্যবস্থাপনায় নগরীর জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে আহলে বায়তে রাসূল (দ.) স্মরণে ১০ দিনব্যাপী ৩৭তম আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহফিল গতকাল শুরু হয়েছে। হাজারো আহলে বায়তপ্রেমীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের প্রথম দিনে দেশি-বিদেশি আলোচক ও ইসলামী চিন্তাবিদরা বলেছেন, ৬১ হিজরির মহররম মাসে কারবালা ময়দানে সংঘটিত যুদ্ধ ছিল হক-বাতিলের মধ্যকার সংঘাত। নবী দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও নবী পরিবার কারবালা ময়দানে ন্যায়, সত্য ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় হাসিমুখে প্রাণোৎসর্গ করেছিলেন। আহলে বায়তের এমন আত্মবলীদান প্রজন্ম পরম্পরায় মুসলিম মিল্লাতের ঈমানি চৈতন্যবোধকে শাণিত করবে। তাই, আহলে বায়তে রাসূলের (দ.) প্রতি শর্তহীন আনুগত্য, গভীরতম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসাই ঈমানের দাবি।
উদ্বোধনী দিনে মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চেয়ারম্যান এবং পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান আলহাজ¦ সূফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক মুহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন। বিদেশি আলোচক ছিলেন তাজুল উলামা ভারতের কাসওয়াসা দরবার শরীফের আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ নুরানী আশরাফ আশরাফি আল জিলানি। বাদে মাগরিব কুরআনে মজিদ থেকে তেলাওয়াত করেন আহমদ ইউসুফ আল আযহারী। না’তে রাসূল (দ.) পরিবেশন করেন, শায়ের মুহাম্মদ হারুনুর রশিদ।
বিদেশি আলোচক আল্লামা নূরানী মিয়া আশরাফি আলজিলানী বলেন, মহররম মাসে সংঘটিত কারবালা দুনিয়ার ইতিহাসে এক নির্মম ট্র্যাজেডি। দ্বীন ও সত্যের জন্য হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) সেদিন রুখে না দাঁড়ালে আমরা আজ অবিকৃত ইসলাম পেতাম না। তাই, আহলে বায়তে রাসূলের (দ.) প্রতি সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শন ঈমানি দায়িত্ব।
প্রধান অতিথি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, যুগে যুগে কারবালার ঘটনা আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটাবে। কারবালার শোককে শক্তিতে পরিণত করে আমাদেরকে দ্বীনের পতাকা সমুন্নত রাখতে হবে। জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের এ কারাবালা মাহফিল আজ চট্টগ্রামের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জানান দেয়। আলোচক আল্লামা আবু সুফিয়ান আবেদী আলকাদেরী বলেন, হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) সহ কারবালা ময়দানে নবী পরিবারের শাহাদাত আমাদেরকে ঈমানি চেতনায় উদ্দীপ্ত ও উজ্জীবিত হওয়ার প্রেরণা জোগায়।
সভাপতির বক্তব্যে আলহাজ¦ সূফি মিজানুর রহমান বলেন, জমিয়তুল ফালাহর প্রথম খতিব খতিবে বাঙাল অধ্যক্ষ আল্লামা জালাল উদ্দীন আলকাদেরী (রহ.) আহলে বায়তে রাসূলের (দ.) প্রতি অধিকতর মমত্ববোধ ও ভালোবাসার কারণেই এ শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের সূচনা করেন। যা ইসলামী সংস্কৃতিতে অনন্য এক সংযোজন। এজন্য তিনি অনন্তকালব্যাপী অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তিনি আরো বলেন, কারবালা আমাদের চেতনা ও ঈমানি উজ্জীবনের প্রতীক। তাই, শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের মাধ্যমে আমরা ঈমানি কর্তব্য পালনে এগিয়ে আসি। তিনি ১০ দিনব্যাপী এ শাহাদাতে কারবালা মাহফিল আয়োজনে সম্পৃক্ত এবং সমবেত শ্রোতাম-লীর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
মাহফিলে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পিএইচপি ফ্যামিলির ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মহসিন চৌধুরী, আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট্রের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ¦ মুহাম্মদ মহসিন ও সেক্রেটারি জেনারেল আলহাজ¦ মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ পেয়ার মোহাম্মদ, মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের প্রধান সমন্বয়কারী মুহাম্মদ আলী হোসেন সোহাগ, শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের প্রতিষ্ঠাতা খতিবে বাঙাল আল্লামা জালালুদ্দিন আলকাদেরী (রহ)’র সুযোগ্য সন্তান আবু সাঈদ মুহাম্মদ হামেদ, শাহজাদা সৈয়দ শাহাদত উদ্দিন আল হাসানী আল মাইজভান্ডারি, হাটহাজারী দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীন শাহজাদা মাওলানা সৈয়দ আমিনুল হক আলকাদেরী, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আল্লামা মুফতি কাযী আব্দুল ওয়াজেদ, অধ্যাপক মুহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল আযহারী, ব্যবসায়ী আলমগীর পারভেজ, ফরহাদাবাদ দরবার শরীফের সৈয়দ মুজ্জাম্মেল হক ফরহাদাবাদী, সাবেক কাউন্সিলর মুহাম্মদ বদিউল আলম, মাওলানা নূর মোহাম্মদ সিদ্দিকী, এইচএম এমডি স্টিলের সরোয়ার আলম। শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের কর্মকর্তা ও সদস্যগণ মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন দরবারের সাজ্জাদানশীন ও মতোয়াল্লীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ইমাম হোসাইনের (রা.) মর্যাদা নিয়ে আলোচনা করেছেন আল্লামা আবু সুফিয়ান খান আবেদী আলকাদেরী। আহলে বায়তের প্রতি ইমামগণের ভালোবাসা বিষয়ে আলোচনা করেন জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা জসিম উদ্দিন আজহারি ও জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা আহমদুল হক। সালাত সালাম শেষে দেশ-জাতির কল্যাণ ও বিশে^র নির্যাতিত মানবতার মুক্তি কামনায় মুনাজাত করা হয়। বিজ্ঞপ্তি