নিজস্ব প্রতিবেদক »
ঈদ আনন্দ সবচেয়ে বেশি আন্দোলিত করে শিশুদের। নতুন পোশাক কেনা, মিলিয়ে কেনা জুতো ঈদের দিন অব্দি পুরোনো হওয়ার ভয়ে লুকিয়ে রাখা। ঈদের দিন মহানন্দে সেসব পরে এবাড়ি-ওবাড়ি ঘুরে এটা-সেটা খেয়ে সালামি পকেটে পুরে নেওয়া। এসবই ছোটবড় সবাইকে শৈশবের স্মৃতিতে কাতর করে তোলে। কিন্তু সবার ঈদ এতটা স্বস্তির হয় না। কেউ কেউ থাকে, যাদের ঈদের পোশাকটাও মিলবে কিনা এ নিয়ে থাকে উৎকণ্ঠা। এমনই এক শিশু শাহীন। কিডজি নামের বাচ্চাদের ব্যবহার্য এ টু জেড পণ্যের দোকানের সামনে সেই রঙিন পোশাকের অপেক্ষায় উৎকণ্ঠিত সময় কাটে শাহীনের।
নগরীর জিইসিতে অবস্থিত কিডজি মলের সিঁড়িতে দেখা মিললো ওর। পা এলিয়ে এক প্যাকেট সার্জিক্যাল মাস্ক হাতে বসেছিল সে। নাম জিজ্ঞেস করতেই জানালো ,ওর নাম শাহীন ইসলাম। বাবার নাম মোহাম্মদ রনি। মা শানু বেগম। শানু বেগমকে দেখা গেল অদূরে আরো দুই কন্যাশিশুকে আগলে ফুটপাতে বসে আছেন। ওদের নাম রানু (২) ও রানি (১)।
শাহীন মাস্ক বিক্রয় করে। এক প্যাকেট মাস্কের টাকা আসে ওর মায়ের ভিক্ষার টাকা থেকে। এ প্যাকেটই বিক্রি হয় রোজ। ভাগ্যের জোরে এক প্যাকেট বিক্রি হলে ছেলেকে দ্বিতীয় প্যাকেট জুগিয়ে দেন শানু বেগম।
শাহীন মাস্ক বিক্রি করলেও পড়াশোনা করছে ফয়েজ লেক নূরীয়া মাদরাসায়। পড়া শেষে এসে মা-ছেলে বোনদের নিয়ে কিডজির সামনে বসে। মা করেন ভিক্ষা, শাহীন বেচে মাস্ক।
শাহীন পরিবারের বড় ছেলে। যদিও ওর বয়স মাত্র ৭ বছর। ও জানে ওর ঘরভাড়া ৪ হাজার টাকা, বিদ্যুৎ খরচ ৩ হাজার টাকা, পানির বিল ২ হাজার টাকা। এত টাকা ওর মা শানু বেগম একত্রে যোগাতে পারে না। যখন হাতে টাকা আসে তখন দেন।
শাহীন বলে, ‘আমার বাবা আরেক মাইয়্যার ফান্দে পইড়া ১০-১৫ দিন আগে ভাইগ্যা গেসে। আমার মা একা সব করে। আগে অন্য অনেক কাজ করতো, এখন পারে না। আমার বোনেরা বেশি ছোট। ওদের জন্য ভিক্ষা করে।’
কিডজি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে শাহীন বলে, ‘এটা বাচ্চাগো জামাকাপড়ের দোকান। ঢুকি নাই কোনোদিন। এত দামি কাপড় কিনতে পারুম না। তাই ঢুকি নাই। আমার মায়ের এত টাকা নাই।’
ঈদের পোশাক সম্পর্কে শাহীন বলে, ‘এখনও ঈদের জামা কিনি নাই। কিনবো মনে হয় ঈদের সময়।’