সুপ্রভাত ডেস্ক »
দীর্ঘদিন ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর আন্তর্জাতিক বাজারে কমতে শুরু করেছে ভোজ্যতেলের দাম। গত আড়াই মাসে বিশ্ববাজারে প্রতিটন পাম অয়েল ৪৮৭ ডলার ও সয়াবিন ২৩৫ ডলার পর্য়ন্ত কমেছে। কিন্তু দেশীয় বাজারে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং দর বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশীয় বাজারে দাম বাড়াতে তৎপর হয় আমদানিকারকরা। কিন্তু বুকিং দর কমলে দাম কমানোর ক্ষেত্রে সেই তৎপরতা দেখা যায় না আমদানিকারক ও সরকারি সংস্থাগুলোর। ফলে বিশ্ববাজারে পণ্যটির দাম কমলেও এখনো প্রভাব পড়েনি দেশীয় বাজারে।
ভোজ্যতেল আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, করোনা মহামারি, সরবরাহ চেইনে সংকট ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত দেড় বছর ধরে অস্থির ভোগ্যপণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার। এরমধ্যে গত দেড় বছর টানা ঊর্ধ্বমুখী ছিল সবচেয়ে প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য হিসেবে পরিচিত ভোজ্যতেলের দাম। তবে উৎপাদনকারী দেশগুলোতে নতুন মৌসুমের ফসল ওঠার আগে বাড়তি উৎপাদন ও মজুদ ছাড়তেই গত দুই মাস ধরে কিছুটা নিম্নমুখী হয়েছে পণ্যটির বুকিং দর।
ইনডেক্স মুন্ডির তথ্যমতে, আন্তর্জাতিক বাজারে আজ সর্বশেষে ১৫ জুন পর্যন্ত অপরিশোধিত পাম অয়েলের বুকিং দর ছিল টনপ্রতি ১ হাজার ২৯০ ডলার। যদিও চলতি বছরের মার্চে ছিল ১ হাজার ৭৭৭ ডলার, এপ্রিলে ১ হাজার ৬৮৩ ও মে মাসে ছিল ১ হাজার ৭১৭ ডলার।
অন্যদিকে সর্বশেষ লেনদেনে সয়াবিনের বুকিং দর ছিল ১ হাজার ৭২৮ ডলার। গত মার্চে এর টনপ্রতি বুকিং দর ছিল ১ হাজার ৯৫৭ ডলার, এপ্রিলে ১ হাজার ৯৪৮ ও মে মাসে ছিল ১ হাজার ৯৬৩ ডলার। এক্ষেত্রে দুই-আড়াই মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে পাম অয়েলের টনপ্রতি দাম কমেছে ৪৮৭ ডলার ও সয়াবিনের ২৩৫ ডলার।
এদিকে বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের ধারাবাহিকভাবে দাম কমলেও এখনো এর কোনো প্রভাব নেই দেশীয় বাজারে। ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতিমণ (৪০ দশমিক ৯০ লিটার) পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৭০০ টাকা ও সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার ৭০০ টাকা দামে। গত দুই মাস ধরে খাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেলের দামে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয় নি বলেন ব্যবসায়ীরা।
ভোজ্যতেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, “দেশীয় বাজারে বর্তমানে যেসব ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে তা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কমপক্ষে তিন মাস আগে বুকিং করা পণ্য। ফলে বর্তমানে বাজারে থাকা পণ্যে দাম কমানোর সুযোগ নেই। কম দামে বুকিং করা পণ্য বাজারে পৌঁছালে ঠিকই তেলের দাম কমে যাবে। কারণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কোনো পণ্যের দাম ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে বিক্রি করার সুযোগ নেই।”
খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী ও ইসমাইল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুর রাজ্জাকসহ আরো একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশীয় বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে দেয় আমদানিকারকরা। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে কমলে দীর্ঘদিনেও দেশীয় বাজারে পণ্যটির দাম কমে না।”
এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর তদারকি প্রয়োজন বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী।
ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা জানান, বিশ্ববাজারে চলতি মাস থেকে তিন মাস এগিয়ে এলসির ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ হয়। যদিও দেশের ব্যবসায়ীরা এক মাস আগের দাম প্রস্তাব করে ভোজ্যতেল বিক্রির দাম সমন্বয় করেন। বিশ্ববাজারে কোনো মাসে স্পট হিসেবে যে দামে ভোজ্যতেল বিক্রি হয় সেটি আসলে স্থানীয় বাজারের জন্য নির্ধারিত। স্পট মার্কেটে অধিকাংশ সময়ই দাম বেশি থাকায় ওই দামের সঙ্গে বাংলাদেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম সমন্বয় করে আমদানিকারকরা অতিমুনাফা করছেন।
এদিকে বিশ্ববাজারে যখন ভোজ্যতেলের বুকিং দর কমছে, তখন বাংলাদেশে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৭ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে পাম অয়েলের দাম লিটারপ্রতি কমেছে ১৪ টাকা। ৯ জুন সরকারের সঙ্গে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈঠকে নতুন এ দাম ঠিক করা হয়। এর আগে সর্বশেষ গত ৫ মে ভোজ্যতেলের দাম বেঁধে দিয়েছিল সরকার।
এই বিষয়ে বাংলাদেশ ভোজ্যতেল পাইকারি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম টানা ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এখন দাম ধীরে ধীরে কমতির দিকে রয়েছে। এ কারণে ১৫ দিন পরপর দাম নির্ধারণ করা হলে ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা লাভবান হবেন। আমরা এরই মধ্যে সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে এ বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছি।”
সরকার বিষয়টি নিয়ে আগামীতে সঠিক সিদ্ধান্তই নেবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সূত্র : টিবিএস