সংবাদদাতা, আনোয়ারা »
শিকলবাহা ক্রসিং থেকে কালাবিবির দিঘির মোড় পর্যন্ত সড়ক ৪ লেনে উন্নীত করা হয়েছে। ফলে আনোয়ারা উপজেলা থেকে চট্টগ্রাম শহরে ১০-১৫ মিনিটের মধ্যেই চট্টগ্রাম শহরেই পৌঁছানো যাচ্ছে। যেখানে পূর্বে পৌঁছাতে ঘণ্টাখানেক সময় লাগতো। এ নিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা, চন্দনাইশ, বাঁশখালি এবং কক্সবাজার জেলার পেকুয়া, মহেশখালী, চকরিয়া, কুতুবদিয়ার যাত্রীদের মাঝে স্বস্তি কাজ করছে।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশমুখ চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা। একদিকে কেইপিজেড, সিইউএফএল, ডিএপিএফসিএল, কাফকো, সাদ মূসা ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল পার্ক, চায়না ইকোনমিক জোনসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মধ্যদিয়ে এই উপজেলাটি বাণিজ্যিক উপজেলায় রূপ নিচ্ছে অপরদিকে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ পারকি সমুদ্র সৈকত, মোহছেন আউলিয়ার মাজার, প্যারাবন, গহিরা মৎস্য আহরণসহ বিভিন্ন প্রাচীন নিদর্শনের কারণে এটি পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে। সর্বশেষ আগামী ২৮ অক্টোবর খুলছে দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু টানেলের দুয়ার। যার ফলে আনোয়ারা রূপ নেবে চীনের সিংহাই শহরের আদলে ওয়ান সিটি টু টাউনে। তাই বুঝা যাচ্ছে ব্যস্ততা এবং গুরুত্বের দিক দিয়ে আনোয়ারা কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। আর উন্নত জীবনযাত্রার প্রধান উপাদান হচ্ছে উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা। যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতির জন্য জানা যায়, ৪০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এই টানেল সংযোগ সড়কটি ছয় লেনে উন্নতি করার কথা থাকলেও ভূমি অধিগ্রহণে নানা জটিলতার কারণে আপাতত ৪ লেনের কাজ সমাপ্ত করা হচ্ছে। এরই মাঝে শেষ হয়েছে মূল সড়কের ২১টি কালভার্টের কাজ।
সরেজমিনে ৪ লেন সড়কে গিয়ে দেখা যায়, কালাবিবির দিঘির মোড় এবং ডাকপাড়া এলাকার কিছু অংশ ভূমি জটিলতার কারণে এখনো উচ্ছেদ করা হয়নি। এছাড়া ৮ কিলোমিটারের এই সড়কটির ৪ লেনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে কালাবিবির দিঘির মোড়, চৌমুহনী, ফকিরনিরহাট এলাকায় ওভারপাস স্থাপনের দাবি জানান স্থানীয়রা।
খোরশেদুল আলম নামের এক সিএনজি (অটোরিকশা) চালক বলেন, আগে যানজট ছাড়া শহরে পৌঁছাতে ৪০ মিনিট সময় লাগতো কিন্তু এখন ১৫ মিনিটও লাগে না। যখন গাড়ি চালাই তখন নিজের মাঝে স্বস্তি নেমে আসে, ভুলে যাই গত কয়েক বছরের দীর্ঘ যানজট আর সীমাহীন কষ্টের কথা।
মোরশেদ নামের এক বাস ড্রাইভার জানান, চৌমুহনীতে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানোর পর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দশ মিনিটেই কর্ণফুলী ব্রিজে পৌঁছে যাই। কোনো যানজট নেই, রাস্তায় গর্ত নেই। বড় বড় শহরে রাস্তা আছে কিন্তু যানজট আছে, আমাদের এখানে রাস্তাও ভালো, যানজটও নাই।
আত্তাহিয়্যাহ নামের এক কলেজ ছাত্রী বলেন, আগে আনোয়ারা থেকে চট্টগ্রাম মহসিন কলেজে ক্লাস করতে যেতে চাইলে ৭টার পর পরবের হতে হতো। কিন্তু এখন ৮টার পর বের হয়ে ৯:১৫ মিনিটে ক্লাসে উপস্থিত হওয়া যায়।
আনোয়ারা উপজেলার যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতির ফলে উপজেলার সার্বিক উন্নয়নের বিষয়ে আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী বলেন, এ সড়কটির ফলে আনোয়ারা তথা দক্ষিণ চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের যাতায়াত ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এখানকার মানুষ খুব স্বল্প সময়ে শহরে আসা-যাওয়া করতে পারছে। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তি কিংবা যেকোনো অসুস্থ রোগীকে খুব দ্রুত সময় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কিংবা উন্নত মানের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে। এছাড়া এই সড়ককে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শিল্পকারখানা গড়ে উঠতে শুরু করছে। পণ্য আনা নেওয়া সহজ হয়েছে। সর্বোপরি ৪ লেনের সড়কের ফলে এখানকার মানুষের জীবনমানের অনেকটা উন্নতি হয়েছে।
এ বিষয়ে দোহাজারী সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) এর নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল মিয়া বলেন, টানেল যেহেতু ৪ লেনের সেহেতু টানেল সংযুক্ত শিকলবাহা ওয়াই জংশন সড়কের ৬ লেনের কাজের মধ্যে আপাতত ৪ লেনের কাজ শেষ হয়েছে। দুয়েকটা পয়েন্টে জায়গার কিছু সমস্যা রয়েছে। তাদের পেমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। তারা উঠে যাবে। আর টানেলের গাড়ি আনোয়ারা থেকে ক্রসিং হয়ে পটিয়া বাইপাস দিয়ে চন্দনাইশের মধ্যদিয়ে কক্সবাজার যাবে। আপাতত আনোয়ারা কিংবা বাঁশখালি দিয়ে নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নাই। কোনো ধরনের বিঘœতা ছাড়া এই রোডে যানচলাচল হবে বলে মনে করেন সওজের এই কর্মকর্তা।