নিজস্ব প্রতিবেদক »
যতই দিন গড়াচ্ছে, ততই প্রাণঘাতী হিসেবে রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু। আক্রান্তের সংখ্যার সাথে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম জেলায় আবিদ নামে ছয় বছরের এক শিশুসহ তিন জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তারা নগরের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ নিয়ে চলতি বছরে চট্টগ্রামে প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩ জন। জ্বর হলে অবহেলা, দেরিতে হাসপাতালে যাওয়াকেই প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, মারা যাওয়া শিশু আবিদ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তিনি নগরের আকবর শাহ থানা এলাকার বাসিন্দা। আয়েশা সেলিম নগরের (৪৫) নগরের পার্কভিউ হাসপাতালে মারা যান। তিনি নগরের চাঁন্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট এলাকায় বাসিন্দা। অপরদিকে নগরের মা ও শিশু হাসপাতালে মারা যান জ্ঞানেন্দ্র নাথ মিত্র (৮৫)। তিনি নগরের ইপিজেড এলাকার নিউ মুরিং এলাকার বাসিন্দা।
এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে ৬ জন পুরুষ, ৮ জন মহিলা ও বিভিন্ন বয়সের ৯ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. অনুপম বড়ুয়া বলেন, ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ধরন রয়েছে- ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’। ‘এ’ ক্যাটাগরির রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় না। বাড়িতে বিশ্রাম নিলেই তারা সাধারণত সুস্থ হয়ে ওঠেন। ‘বি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে। কিছু লক্ষণ, যেমন পেটে ব্যথা, বমি, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, জন্মগত সমস্যা, কিডনি বা লিভারের সমস্যা থাকলে হাসপাতালে ভর্তি হতেই হবে। ‘সি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ। এতে লিভার, কিডনি, মতিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউর প্রয়োজন হয়।
তিনি আরও বলেন, যারা ডেঙ্গুতে মারা যাচ্ছেন তাদের প্রায় সকলের জটিল রোগ রয়েছে। জ্বর হলে মৌসুমি জ্বর ধারণা করে বাাসায় বসে থাকেন। নড়বড়ে অবস্থা না হলে কেউ গুরুত্ব দিতে চায় না। শেষ সময়ে হাসপাতালে আসলে আমাদের আর কিছই করার থাকে না। তাই যাদের জটিল রোগ আছে। জ্বর হওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে বেশি সতর্ক থাকতে হবে। এখন কোনো জ্বরকে অবহেলা করা যাবে না।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা আবুল হাশেম বলেন, নগরজুড়ে মশা নিধনে ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে। ১২০ থেকে ২৮০ জন লোকবল বাড়ানো হয়েছে। যেখানে লার্ভা বেশি বা আক্রান্ত এবং মৃত্যু হচ্ছে সেখানেই প্রতিটি নালায় ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। এছাড়া জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বাসাবাড়ি, ছাদবাগানসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছি।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ১০৬ জন। এই নিয়ে জেলায় ৩ হাজার ৩৭৭ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হলো। এর মধ্যে গেল অক্টোবর মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮৬১ জন। একই মাসে মারা যান ১১ জন।
এদিকে আক্রান্তের মধ্যে মহানগরে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৫০৪ জন এবং ৮৭৩ জন বিভিন্ন উপজেলার রোগী রয়েছেন। আর উপজেলায় আক্রান্তের মধ্যে সীতাকু- শীর্ষে, ২৩৭ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এরপরে ১২২ জন রোগী নিয়ে তালিকার দি¡তীয়তে রয়েছে কর্ণফুলী উপজেলা।