হাফিজ রশিদ খান »
নতুন বাংলা বর্ষে এখন আমরা শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছি। এর আগের বছরটিতে আমাদের বহু আশা-প্রত্যাশা যেমন সঠিক পরিপ্রেক্ষিত, সাচ্চা পরিচর্যার অনুপস্থিতিতে অনেকটাই তামাদি হয়ে গেছে, তেমনি নতুন বছরটিকে ঘিরে দুর্বলের মন না-মানা প্রত্যাশার মতো আবারও পল্লবিত হয়ে উঠতে চাইবে অনেক-অনেক চাওয়া-পাওয়ার মনোবৃক্ষটি। মনে পড়ছে জ্ঞানীজনের প্রবাদবাক্যসম একটি বচন : ‘মানুষ তার আশার সমান বয়সী’। কথাটিতে একটি বেশ অভিজাত সান্ত¡নার প্রলেপ থাকলেও ওতে মন না-মজিয়ে উপায় কী! দেশটাকে যে আমরা সকলেই ভালোবাসি, তাতে বিন্দুমাত্র আঁচড় না-দিয়েও বলা যায়, এ ভালোবাসার প্রকাশে আমাদের সমাজের কিছু অংশে সঠিক ও সাবলীল ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘাটতি আছে। নইলে বছরে-বছরে কেন আমরা তামাদি দলিল-দস্তাবেজ ঘেঁটে কাইজা-ফ্যাসাদে লিপ্ত হই প্রায়শ, বিশেষ করে বাংলা নয়া বছরটি কাছে এলে? দেশের চলমান রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিস্থিতির দিকে তাকালে, এমন ভাবনা ছাড়া আর কীই-বা উদিত হয় মনের আকাশে! স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে আমরা একই চেতনার অংশ হিশেবে নির্মাণ করে নিতে সক্ষম হইনি আজও। দুটোতেই রয়েছি যেন বারঘরের ক্ষণিকের অতিথি হয়েই।
আমাদের স্বাধীনতা ভূখ-গত জনমানুষের বৈষয়িক বা ইহজাগতিক সমৃদ্ধির গ্যারান্টি দিতে বহু বেশি সময় নষ্ট করে চলেছে, বয়োক্রমে তার ৫০ বছর পার হয়ে গেলেও। একটা প্রকা-, নির্লিপ্ত, চলৎশক্তিহীন বিমূর্ত ধারণার ভেতরেই আমাদের স্বাধীনতা নামক স্বর্ণরাজহাঁসটি নিস্তেজ হয়ে আছে যেন। আর গণতন্ত্র বিভিন্ন সময়ে, বর্ষে-বর্ষে, নতুন-নতুন পোশাক পরে আবির্ভূত হয়ে নাগরিক সমাজের বনেদি রুচি-সংস্কৃতির মুখে বরাবর কেবলই ঘা দিয়ে যাচ্ছে সজোরে। তাতে রক্ত ঝরছে, আমরা ক্ষতাক্ত হচ্ছি, অবমানে নুয়ে পড়ছি। এ থেকে আমাদের মুক্তি কবে কে জানে।
এ অবস্থা বিদ্যমান থাকতেই চলে এলো বাংলা নববর্ষ। এদেশের প্রত্যেক কন্দরে-কন্দরে, সমাজের ওপরমহলে, আদিবাসী ও নি¤œবর্গীয় মানুষের সকল স্তরে এই বিশাল নববর্ষরথটি নিয়ে একটি সচেতন উন্মাদনা রয়েছেÑ এ আমরা অনেকে ছোটোবেলা থেকেই দেখে আসছি। যার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে রয়েছে সামাজিক দায়বদ্ধতার যোগ, চাওয়া-পাওয়া, আনন্দ-আহলাদের সমীকরণ। এ তো স্রেফ ওড়ে আসা কোনো ‘বল্গাহারা অশ্ব’ নয়। কাজেই বাংলা নববর্ষের দ্যোতনাটিকে যৌথ বা জনপদের মানুষের হাজার বছরের আবলোকনের আলোতে দেখাই ইতিহাস-ঐতিহ্যসম্মত। কারণ আদিকাল থেকে এ নববর্ষের যাপনায় এদেশের গণমানুষের তাৎপর্যপূর্ণ সম্পৃক্ততা গেঁথে আছে ধননিতে রক্তপ্রবাহের মতো।
এই অনাবিল উচ্ছ্বাস, এই ধাবমান স্পৃহাকে বিভেদপরায়ণ ধর্ম ও রাজনীতির আয়নায় দেখার একটা গৎ বা রীতি এদেশের একশ্রেণির মধ্যে খুবই সুলভ হয়ে ওঠেছে। অনেকটা একেবারে নাছোড়প্রবণতার মতো। কেননা তাঁরা এদেশের কৃষি ও শ্রমজীবী মানুষ, এদেশীয় মৃত্তিকার সম্পদÑ বনের গর্ভে, সাগরের তলদেশে যা আছে রতœভা-াররূপে, তার ওপর দরদি ও কার্যকর সামর্থ্যে বলীয়ান নয় মেধায়, উদ্ভাবনায় কি করণশক্তিতে। এসবে মায়াবী কর্তৃত্ব রাখতে হলে যে ভূমিজ বিদ্যাবৈভব, দেশপ্রেমিকতা, স্বকর্মনিষ্ঠা, ত্যাগ ও তিতিক্ষার ধ্যানী সৌকর্য দরকার, তা কামাই করতে এরা বংশপরম্পরায় পরাক্সমুখ রয়ে গেল। এরা মূলে পরধন আত্মসাৎকারী, প্রবঞ্চনামূলক, ঠগি। তারা লোভাতুর চোখ মেলে, নিউরনে অপহরণের আলোড়ন তুলে প্রায়শ হাত বাড়িয়ে থাকে নানা বিদেশীয় মেধা ও বাঞ্ছার কর্তৃত্বের দিকে। এবং তা বেশির ভাগই পশ্চিমা দুনিয়ার দরবারের ব্যবস্থাপত্রের ওকালতিতেই সম্পন্ন হতে দেখা যায়। একই সঙ্গে এও বোঝা গেল, বিদেশিরা আমাদের সম্পদ-সামর্থ্যের কুলুজি আমাদের চেয়ে ঢের বেশি রাখে।
ওই বিদেশীয় মেধা-মনীষার কথাও তো সামান্য বলতে হয়। মনে রাখতে হয়, ওরা তো আমাদের বিদ্যমান বুদ্ধিবৃত্তির স্তর মাড়িয়ে আরও বহুদূর অলিম্পাসে বসবাস করে আসছে রেনেসাঁ, আলোকায়নের পথে-পথে ঘাম ঝরিয়ে-ঝরিয়ে। কাজেই ওদের খুদকুঁড়ো কোঁচড়ভরে পাবার আশায় আমাদের সমাজের একটা মহলের ভেতর যে প্রবল একটা পরমুখাপেক্ষিতার উৎসব-উৎসবভাব বিদ্যমান থাকে, একার্থে তা তো অনর্থক নয়! এই দিনটাকে ঘিরে বিনিময় ঘটে নতুন-নতুন তেজারতি, উজারতির উমেদারিরও। এমন কি উত্তেজনার আলগা রসদও আসে রাজনৈতিক ইন্ধনে।
সেখানে যে প্রভাব-প্রতিপত্তির মসনদে সমাসীন থাকার খেয়াল আর ‘মসনদে আলা’ হবার চাণক্য চাল সদা মশগুল থাকে না, কে আর নিশ্চিতভাবে এ প্রত্যয়ের বিপক্ষে দাঁড়াবে? এই তো আমাদের সুবিধা-অন্বেষী তথাকথিত ধর্মসেবকসংঘের কীর্তিকলাপ। এর পক্ষে এন্তার দৃষ্টান্ত এদেশেরই ইতিহাস থেকে এনে স্তূপ করা যায়। আশা করি তার প্রয়োজন নেই এ কারণে যে, আমাদের সকলেরই মানসিক অবস্থা তো আসলে সেই ভাওয়াইয়া গানটির মতোই, ‘কি কহিব আমার দুষ্কের কথা রে … ’। উল্লেখমাত্রই যা হৃদয় ও মস্তিষ্কে তুফান বইয়ে দেয় বৈশাখী তা-বের মতো।
বলছিলাম, এ নতুন বছরেও আমাদের অনেক আশাই গোর হয়ে গেছে, আবার কিছু আশা পল্লবিত হয়ে উঠতে চাইছে নানা শাখা-প্রশাখায়। এই মহানগর চট্টগ্রামের উন্নয়ন প্রসঙ্গেই বিষয়টার কিঞ্চিৎ বিস্তার করা যাক। এ নগর আমাদের প্রিয়, পরিচিত। বনেদিয়ানায় অত্যুচ্চ গরিমা তার ইতিহাসে, ধনগৌরবে, সাহিত্যে, শিল্পকলায়। এটি প্রায় দুই হাজার বছরের বনেদি জনপদ। এটি একটি ‘কসমোপলিটান’ বা উদার দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন তথা সংকীর্ণতামুক্ত নগর। আমাদের পূর্বপুরুষের কর্মমুখর, সরব পদচারণায় ধীরে-ধীরে প্রাণ পাওয়া আশ্চর্য-সুন্দর, দরদি, সকলকে নিয়ে ‘কেহ নয় পর’ নীতি নিয়ে চলার ঐতিহাসিক জনপদ। বিভিন্ন জাতি ও তাদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মিশেলে ভারি আকর্ষক এ চট্টলভূমি।
এখানে তো মিশেছে আরব, ইংরেজ, মগ, পর্তুগিজধারার রক্ত। এই উদার ভূভাগের মানুষেরা যেকোনো বিবেচনায় তার সময়োপযোগী প্রার্থিত উন্নয়ন-পরিকাঠামো না-পেয়ে অবহেলিত ‘অহল্যা’র মতো সলজ্জ সংকোচে দিন পার করে দিচ্ছে। বড় গলায় অভিযোগেও তার নেই রুচি। কারণ তাকে অবহেলাকারীরাও যে তারই স্বজন, সগোত্রীয়, তারই নিকট প্রতিবেশী। তবে ইদানীন্তন সময়ে এই নগরে, বিশেষ করে ‘ডাউন-টাউন এরিয়া’ উন্নয়নকে কেন্দ্রে রেখে এক বিশাল দক্ষযজ্ঞ কা- শুরু হয়েছে। যা কিনা ওই অহল্যা’র তুষ্টিসাধনের একটি বহু বিলম্বিত পদক্ষেপ বটে। এর কয়েকটি হলোÑ নগর সম্প্রসারণ ভাবনা, ফ্লাইওভার, বঙ্গবন্ধু টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে নির্মাণ ইত্যাদি। এসব নিয়ে নগরবিশারদদের মধ্যে আবার আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। তাঁদের কেউ-কেউ এমনও বলছেন : এ প্রয়াস উপকার করবে কাদের? ফ্লাইওভার তো বড়লোকের, বড় বড় গাড়ির চলনভঙ্গি সহজ করার বিশাল ব্যয়সাপেক্ষ উদ্যোগ মাত্র।
এখানে অত-অত পুঁজিধারী আছেনই-বা ক’জনা? অন্যদিকে উদ্যোক্তারা বলছেন : এ হলো ভবিষ্যতের বড় চট্টগ্রামের জন্যে আগাম চলার পথ তৈরি করার আয়োজন-আন্জাম। এতে সহজ-সরল নাগরিকমন খুশিতে ঝলমলিয়ে ওঠে দ্রুতই। ভাবে, মন্দ কী? পরক্ষণেই আবার মনে জাগে তার, এইসব দেখতে-দেখতেই অবশ্য, যে, ফ্লাইওভার এ নগরের খোলামেলা পরিবেশ-প্রতিবেশটাকে কেমন আঁধার-আঁধারে ঢেকে দিচ্ছে না তো আবার? এ কেমন একটা বদ্ধতার ভেতর নিয়ে যাচ্ছে নাকি আমাদের? জানে না সে এর প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক বিলাসব্যসনের ভেতরের তত্ত্ব। পারলে ভাবে আরও, নগরযাপনে অনেক ত্যাগও তো দরকার! সমাজতাত্ত্বিক বিনয় ঘোষ-এর ‘মেট্রোপলিটন মন মধ্যবিত্ত/ বিদ্রোহ’-এর পাতায় যেমনটি বলা হয়েছে : ‘অটোমোবিল ব্যক্তির ‘ইমেজ’। অটোমোবিল ‘পোর্টেবল পার্সোনালিটি’ অর্থাৎ ব্যক্তিত্বের চলন্ত প্রতীক। গতি আর বেগ, চলার জন্য চলা, বেগের জন্য বেগ, আবেগহীন বেগ আত্মগতি ‘অটোমোবিলিটি’। মনে হয় মেট্রোপলিসের বিপুল জনতার গড্ডলপ্রবাহে ডুবন্ত মানুষের বেঁচে থাকার, আঁকড়ে ধরার শেষ তৃণখ- যেন অটোমোবিল। অটোমোবিলের মালিকানার সৌভাগ্য থেকে যারা বঞ্চিত অর্থাৎ শতকরা নব্বুইজন মানুষÑ তাদের জন্য জি.টি আর বি.টি রোডের মতো জীবনের দুটি পথ খোলাÑ একটি আত্মহত্যার আর একটি নৈরাজ্য ও ধ্বংসের পথ। কলকাতার মতো অভিশপ্ত মেট্রোপলিসে তা ছাড়া আর অন্য কোনো পথ নেই। জীবনের সমস্ত ভালমন্দের মানদ-, সমস্ত ন্যায়-অন্যায় নীতি-দুর্নীতির পার্থক্য, বিচারবোধ, সমস্ত নিটোল সোনালি স্বপ্ন এবং আদর্শ ধ্যানধারণা ও কল্পনাÑ সব যেন বঞ্চিতরা স্টীমরোলার দিয়ে পিষে ফেলে ধূলিস্যাৎ করে দিতে চায়। দিচ্ছেও তাই। দিলেও তাদের বিরুদ্ধে আজ তাই অভিযোগ করা যায় না। কারণ অভিযোগ করার মুখ নেই। যে-মুখ দিয়ে অভিযোগ করব তার উপর কলঙ্কের চুনকালির দাগ বসন্তের দাগের মতো চিহ্নিত হয়ে আছে। যারা ভাঙছে তারা ভাঙবেই। কোনো কলরব অথবা নীতিশাস্ত্রের কোনো শ্লোকের আবৃত্তিতে তারা কর্ণপাত করবে না। তাদের বিশ^াস আজকের ভাঙনের শূন্যস্থান ভবিষ্যতে একদিন তারা ভরাট করে দিতে পারবে। কিন্তু যারা অটোমোবাইলবিলাসী ভাগ্যবান এবং মেট্রোপলিসের হৃদয়হীন বিবেকহীন নির্মানস মানুষ তাঁরা যা ভাঙছেন তা আর ভরাট হবে না কোনোদিন। মেট্রোপলিটন শহরের সামাজিক জীবনের শূন্যতা তাঁরা অটোমোবিল দিয়ে পূর্ণ করতে চাইছেন। অটোমোবিল তাঁদের আয়না, কলঙ্কিত মুখ ও বিকৃত ব্যক্তিত্বের আয়না।’ (পৃ.৪৫/-৪৬)।
এসবের পাশে আরও একটি বিষয় সামনে আনতে চাই এ নতুন বছরে। নগরের সড়কগুলো তো বেশ প্রশস্ত হয়ে গেল ভালোই-ভালোই। কিন্তু কোথাও-কোথাও বেশ বেঢপভাবে ছাড় দিয়েই হলো কেন? অর্থাৎ সড়ক প্রশস্ত হতে-হতেই কোনো-কোনো জায়গায় এমন বেঁকেচুরে যাচ্ছে যে, প্রশ্ন জাগে : ওরা কি উন্নয়নকারী প্রতিষ্ঠান বা সরকারি নীতিমালা অমান্যে আরও বড় ‘সরকার’, আরও বড় ক্ষমতাধর ‘নীতিমালা’ রচক? সেই সাথে আরও দেখি এই ব্যক্তিগত চোখে, সড়ক প্রশস্তকরণের কারণে ওটা তো বেশ, বেশ ওপরে ওঠে যাচ্ছে আগেকার অবস্থান থেকে। অথচ ওই সড়কগুলোর পাশেই রয়েছে বিভিন্ন মহল্লার গলি-উপগলিপথ। নগর জনপদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বলিষ্ঠ, যৌথ কণ্ঠস্বর ওরাÑ ‘জনতা’। ওদের জীবনযাপন আয়-রুজি, এসবই জড়িত ওই প্রশস্ত হওয়া সড়ক ঘেঁষেই। অথচ এর পাশের গলি-উপগলির রাস্তাগুলো একেবারেই থেকে যাচ্ছে ‘যথাপূর্বং তথা পরং’। অর্থাৎ তিন-চার মিটার নিচে প্রায়। এ এক ভয়াবহ দৃশ্যপট। যদি নগরবিশারদগণ তা খেয়াল না-করে থাকেন, তবে স্বচক্ষে তা পরিদর্শন করা হোক অনতিবিলম্বে। এ থেকে জনসেবার নিশ্চিত নতুন ধারণা বেরিয়ে আসবে। তা হলো, ওই যে আসছে ভৈরব হরষে সেই বর্ষাকাল। তার বেপরোয়া জলধারা ওই গলি-উপগলির ঘরবাড়িতে আর নিচু থেকে আরও নিচুতে অবস্থান নেয়া নর্দমায় খুবই স্থায়ী বসবাস গড়ে তুলবে আরামে, মওকা পেয়ে। কেননা নর্দমাগুলোর কোনো সময়োপযোগী সংস্কার তো হচ্ছেই না যুগ-যুগ ধরে।
নতুন বছর আমাদের জন্মশহরটাকে নতুন কোনো স্বপ্নের উচ্চতায় দাঁড় করাতে পারবে কিনা জানি না। তারপরও বলি : অধ্যয়নশীল মানুষ ইতোমধ্যে দেশে-দেশে যে অসাধ্যসাধন করে চলেছে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের বলে আর গতিতে, তার সঠিক প্রয়োগে, আমাদের নগরনির্মাতা ও নগরভাবুকেরা তার ধারেকাছেও যেতে পেরেছেন বলে মন কেন সায় দিতে চায় না।
কোথা থেকে কোথায় এসে গেলাম! ফিরে আসি তবে আবারও সেই বঙ্গীয় দহলিজে। বাংলা নববর্ষের আদি মেলা-উৎসব আর সহজিয়া সহবতের কোলাহলে, ঝিমধরা দুপুরের বটতলায়। নানা প্রতীক ও রূপকের শোভাযাত্রায়। যেটাকে আজকাল নবনির্মাণের ভাষায় বলা হচ্ছেÑ মঙ্গল শোভাযাত্রা। এটিকে পারিপাশির্^ক সাংস্কৃতিক ও নবজীবন আর যৌবনের উচ্ছ্বসিত উল্লাসের রূপে দেখতে চাইলে কারো কোনো লোকসান তো নেই। এটি এই জনপদের আবহমানতার একটি নব্যরূপমাত্র। এখানে কোনো পরিচিহ্নিত ধর্মের সং¯্রব নেই, কোনো ধর্মবিশ্বাসের প্রতি পক্ষপাত নেই, আবার কোনো ধর্মের প্রতি আবেদান-নিবেদনও নেই। এ তো প্রাকৃতিক নিয়ম বা চন্দ্রসূর্যগ্রহতারার আবর্তনে সৃষ্টি একটি চিরায়ত পরিবর্তন বা সংক্রান্তির প্রতি সহজাত আস্থার প্রকাশ, এ তো উত্তীর্ণ জীবনের নতুন চলার ভঙ্গিকে বরণ করার জন্যে উল্লাসকর অভিব্যক্তি। এই আকাশের, এই বাতাসের, এই নদীতীর, এই পাহাড়, এই ঝোপ-জঙ্গল, এই আর্দ্রভূমি, এই দুঃখসুখের আবিরমাখা মানুষের ক্ষণিকের আহ্লাদ! এ তো বছরের নতুন দিনে নতুন পোশাকের, নবপ্রসাধনমাখা মুখাবয়বের জীবনবাজির ঝিলিক! এতে মন তো মজে। এ তো দিলের দেউড়িতে নয়া রন্ধন আর হারিয়ে যেতে চাওয়া মুখচোরা পরম আত্মীয়কে পাঁচনে আপ্যায়িত করে বলা যেÑ ভুলিনি তোকে, ভুলতে পারি না যে!
এভাবেই নতুন বছরের নতুন অভিঘাতে আমাদের বদ্ধ চোখগুলো একেবারেই খুলে যাক শা’ নজরের প্রেমানুভূতিতে।