অতি বৃষ্টিতে দেবে গেছে সড়ক, ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক »

টানা বর্ষণে বেড়েছে নগরবাসীর ভোগান্তি।এর মধ্যে নগরীর অলি-গলি থেকে মূল সড়কের বিভিন্ন জায়গায় দেবে গেছে সড়ক। কি পরিমাণ সড়ক দেবে গেছে তা জানতে পরিদর্শন করছে চসিকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। দ্রুত এ কাজ সাড়াতে সংস্থাটি চাইতে পারে মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতাও।

গতকাল নগরীর ডিটি রোড, পোর্ট কানেক্টিং রোড, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সড়ক, আরাকান সড়ক ও কোতোয়ালী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, যেসব জায়গায় পানি উঠেছে বা যেখানে পানি উঠেনি এমন অধিকাংশ জায়গাতেও রাস্তা দেবে গেছে। ফাটল ধরেছে বিটুমিনের ঢালাইয়ে। বিশেষ করে ডিটি রোড ও নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সড়কে ফাটলের পরিমাণ খুব বেশি। টানা বৃষ্টিতে শেখ মুজিব সড়কেও ভাঙন বেড়েছে। তবে রাস্তায় কোনো ফাটল বা ভাঙন দেখা যায়নি পোর্ট কানেক্টিং রোড, আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে।

নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সড়কে হাঁটতে থাকা দিলিপ নামে এক ব্যক্তি বলেন, রাস্তাগুলোর অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে গেছে। এর কারণ দুইটি। প্রথমত রাস্তার কাজগুলো কতটুকু টেকসই, সেটা দেখা দরকার। আর দ্বিতীয়ত হলো, ড্রেনগুলো পরিষ্কার না থাকায় পানি ওঠার পর দীর্ঘক্ষণ থেকে যাওয়ায় রাস্তার স্থায়িত্ব কমছে। বৃষ্টির কারণে শহরের বিভিন্ন জায়গায় বুক, কোমর ও হাঁটু সমান যে পানি ওঠছে, সেটাই এখন দুর্ভোগ। তবে বৃষ্টি থামার পরপর ভেঙে যাওয়া রাস্তাগুলো মেরামত করলে মানুষের কষ্ট কমবে।’

ডিটি রোডের বেলায়েত নামে এক দোকানি বলেন, ‘পাহাড়তলী বাজারে সবসময় চাল নিয়ে বড় বড় ট্রাক আসে। এখানে রাস্তা ভাঙা থাকলে ভারি ট্রাক উল্টে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়া সড়কটা সংস্কার করা হয়েছে দুই বছরও হয়নি। এর মধ্যে আবার বেশকিছু জায়গায় ভেঙে গেছে। অথচ এখানে ওভাবে পানিও ওঠেনি। সবসময় টেম্পোরারি কাজ করবে। আর দুইদিন পর পর রাস্তা ঠিক করবে।’

শেখ মুজিব রোডের পথচারী জামাল বলেন, ‘আমার বাসা চৌমুহনী। এ রাস্তার দুর্ভোগ কয়েক বছরের। রাস্তাগুলো এমনিতেই ভেঙে গেছে। রাস্তা মেরামত করার জন্য যেন কেউ নেই। বারেক বিল্ডিং থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা বেশি খারাপ। অথচ এটা চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ একটি রাস্তা। রাস্তাগুলোও তো ঠিক করতে হবে। কারণ এ রাস্তায় মানুষের চলাচল বেশি।’

নগরীর বিভিন্ন রাস্তা দেবে যাওয়া ও বেহাল অবস্থা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি রোববার আমাদের নজরে এসেছে। কোন কোন সড়কের কোন কোন অংশ ভেঙেছে, কতটুকু পরিমাণ দেবে গেছে; সেটা দেখার জন্য আমরা বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করছি। কত বর্গমিটার রাস্তার কাজ করতে হবে তা মঙ্গলবার জানাতে পারবো বলে আশা করছি।’

সড়ক মেরামত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জনদুর্ভোগ কমাতে বৃষ্টি শেষ হওয়ার পরপরই সড়ক মেরামতের কাজ শুরুর পরিকল্পনা আমাদের আছে। আমরা নিজেদের অর্থায়নে কাজ শুরু করবো। পাশাপাশি মন্ত্রণালয় থেকেও টাকা চাওয়া হবে। পুরো টাকা সিটি করপোরেশনকে (চট্টগ্রাম) দিতে হলে তো বেশ হিমশিম খেতে হবে। এরপরও যদি না পায়, তাহলে আমাদেরতো করতেই হবে।’

সড়ক সংস্কার কাজ টেকসই না হওয়া প্রসঙ্গে জনগণের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ। এ নিয়ে জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, ‘বৃষ্টির পানি ও কুয়াশা মূলত এসফল্টের শত্রু। বৃষ্টি হলে বা বৃষ্টির পানি রাস্তায় জমলে রাস্তার ক্ষয়ক্ষতি হওয়াটা স্বাভাবিক। তাই রাস্তার মেনটেইন্যান্স নিয়মিত করতে হয়। এখানে বিষয়টি হলো, সড়কের যে জায়গাগুলোতে সমস্যা হয়েছে, তা কত দ্রুত মেরামত করা যায়। মেরামত করতে দেরি হলে, তখন ভাঙনটা আরও বড় হয়ে যাবে। কারণ এসফল্টের ভাঙন একটু হলে পরবর্তীতে গাড়ির চাকার ঘর্ষণে ভাঙনটা আরও বড় হয়ে যায়। আর কাজের স্থায়িত্ব বাড়ানোর জন্য বৃষ্টির পানি ও কুয়াশা যখন পড়ে না তখনই কাজ করতে হয়। এছাড়া নির্দিষ্ট পরিমাণ তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট চাপে কাজ করলে কাজের স্থায়িত্ব বাড়ে। যেগুলো কমপ্লিটলি টেকনিক্যাল বিষয়।’