চট্টগ্রামে ভ্যাকসিন প্রদান কমিটির প্রথম সভায় সুজন
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুসারে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় নিয়োজিত স্বাস্থ্য কর্মীগণ, বিভিন্ন পেশার সম্মুখ সারির কর্মীগণ, রোগ প্রতিরোধহীন ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই ভ্যাকসিন প্রদান করা হবে।
তিনি আরও বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নতুন বছরে কোভিড-১৯ থেকে মুক্তির জন্য দেশবাসীর সামনে সভ্যতার নতুন অবদান উপস্থাপন করছেন। চলতি মাসের শেষে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন দেশে আসার কথা রয়েছে। ভ্যাকসিন নিয়ে আমরা আশাবাদী। এ বিষয়ে বিভ্রান্তির কোন সুয়োগ নেই।
তিনি গতকাল রোববার সকালে নগরীতে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে গঠিত কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে একথা বলেন।
সভায় বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান, চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক, পরিবার পরিকল্পনা চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. শফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. আসিফ খান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শ্যামল কুমার নাথ, বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের পরিচালক নুসরাত সুলতানা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. গাজী গোলাম মাওলা, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও কোভিড ইউনিটের ফোকাল পারসন অধ্যাপক ডা. মো. আবদুস সাত্তার, চসিকের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো.আলী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির তাঁর বক্তব্যে সাধারণ তাপমাত্রায় করোনার ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করা যাবে বলে জানান। তিনি আরো জানান, এখন পর্যন্ত করোনার আবিষ্কৃত ভ্যাকসিন শতভাগ নিরাপদ। দ্রুততম সময়ে দেশে ভ্যাকসিন আনার উদ্যোগ নেয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
পরিবার পরিকল্পনা চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান ভ্যাকসিন প্রদানে সাপ্লাই ও কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়ে বলেন, আমাদের দেখতে হবে চিকিৎসক, নার্স, ক্লিনারসহ সম্মুখ সারির কর্মীগণ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাতে ভ্যাকসিন পান। তিনি সমস্ত ঝুঁকি নিয়েই এই ভ্যাকসিন কার্যক্রম দ্রুততর সময়ে শুরু করে সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বণ্টনের আহ্বান জানান।
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, সরকারি যে গাইডলাইন দেয়া হয়েছে সেভাবেই আমাদের ভ্যাকসিন কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে হবে। জাতীয় কমিটির পরামর্শমতে কার্যক্রম চলবে। তিনি সিটি করপোরেশন এলাকায় কমিটিতে এনজিওসহ আরো তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে সংযুক্ত করার পরামর্শ দেন। ভ্যাকসিন বিতরণ প্রক্রিয়ায় কমিটিকে সেন্ট্রাল বা প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি কমিটির সাথে লিংক রাখার পক্ষে মত দেন তিনি।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক ভ্যাকসিন প্রথমে কাদের দেয়া হবে তার একটি গাইড লাইন সরকারিভাবে দেয়া হবে বলে প্রত্যাশা করেন। তিনি নকল ভ্যাকসিন উৎপাদনের মাধ্যম প্রতারণা মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ থাকার পরামর্শ দেন।
চট্টগ্রাম জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. আসিফ খান, করোনার ভ্যাকসিন কারা পাবেন তার যৌক্তিক প্রাপ্যতার জন্য চারটি বিষয়ে জোর দেন। এগুলো হলো ১. র্যাশনাল, ২. ট্রান্সপারেন্সি অর্থ্যাৎ এনআইডি কার্ডের ভিত্তিতে ভ্যাকসিনের প্রদান, ৩. সার্ভিস ডিজাইন অর্র্থ্যাৎ ভ্যাকসিন কিভাবে দেয়া, রাখা ও যথাস্থানে পৌঁছানো হবে এর কার্যক্রম ও ৪. অ্যাসিউরেন্স অর্থাৎ ধারাবাহিকভাবে এই ভ্যাকসিন সবাই পাবেন তার নিশ্চয়তা দেয়া। যাতে এ নিয়ে নগরবাসীর মাঝে কোন ভুল বার্তা না যায়।
চসিক প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী ভ্যাকসিন প্রদান ও সংরক্ষণে করপোরেশনের সার্বিক প্রস্তুতি আছে বলে উল্লেখ করে বলেন, আমাদের মোট ৭টি স্টোর ও পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য ও ইপিআই কর্মী রয়েছে। প্রয়োজনে তাদের আরো প্রশিক্ষিত করা হবে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও কোভিড ইউনিটের ফোকাল পারসন অধ্যাপক ডা. মো. আবদুস সাত্তার বলেন, ওয়ার্ল্ড হেলথ্ অর্গানাইজেশন (হু)’র নির্দেশনা অনুসারে যে কোন রাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ নাগরিকগণ (সিনিয়র সিটিজেন) অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনার ভ্যাকসিন পাওয়ার অধিকার রাখে। সেই মতে রাষ্ট্রের সিনিয়র সিটিজেন হলেন ৬০-৬৫ বছর ঊর্ধ্বে নাগরিকগণ। তিনি ভ্যাকসিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে বলেন। তিনি জাতীয় কমিটির আলোকে চসিক এলাকায় গঠিত কমিটির সদস্যদের ভ্যাকসিন প্রদানের পর এর মনিটরিং কার্যক্রম হোয়াটস্ অ্যাপে গ্রুপ খুলে পারস্পরিক তথ্য আদান প্রদানের ওপর মত দেন। এতে যে কোন সিদ্ধান্ত দ্রুত নেয়া যাবে বলে উল্লেখ করেন এবং এ ব্যাপারে গণমাধ্যম জনস্বার্থে ইতিবাচক প্রচার প্রচারণা করবেন বলে প্রত্যাশা করেন।
উল্লেখ্য, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং আ্যাস্ট্রোজেনেকা কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে তৈরি ভ্যাকসিন বাংলাদেশে সরবরাহ করবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ভ্যাকসিনটি উৎপাদনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর আওতায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস বাংলাদেশ সরকারকে ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে। বিজ্ঞপ্তি