সুপ্রভাত ডেস্ক »
চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ভিড়ানোর অপেক্ষায় রয়েছে ১১টি কন্টেইনার জাহাজ, যার মধ্যে ৮টি গিয়ারবিহীন এবং ৩টি গিয়ারযুক্ত। গিয়ারযুক্ত জাহাজের পণ্য ওঠানো-নামানোর জন্য নিজস্ব ক্রেন বা যন্ত্র থাকে, আর গিয়ারবিহীন জাহাজ পণ্য ওঠানো-নামানোর জন্য বন্দরের যন্ত্রপাতির ওপর নির্ভর করে।
শিপিং কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, প্রতিটি জাহাজে গড়ে ২ হাজার টিইইউ হিসাবে ১১টি জাহাজে প্রায় ২২ হাজার আমদানি কন্টেইনার রয়েছে।
সিঙ্গাপুর বন্দর থেকে কন্টেইনার নিয়ে গত ৬ জুন চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পৌঁছায় সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী জাহাজ সিনার সরং। তবে ঈদের ছুটির কারণে এবং বন্দরে বার্থিং শিডিউল না পাওয়ায় জাহাজটি এখনো জেটিতে ভিড়তে পারেনি। আজ (১৬ জুন) জাহাজটি ১০ দিন পর বন্দর জেটিতে ভিড়ানোর শিডিউল রয়েছে।
গতকাল (১৫ জুন) চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে অবস্থান করেছে ১টি জাহাজ। এর মধ্যে জেনারেল কার্গো বার্থে (জিসিবি) ৪টি, চট্টগ্রাম কন্টেইনার টার্মিনালে (সিসিটি) ২টি, নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালে (এনসিটি) ৫টি এবং পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালে (পিসিটি) অবস্থান করেছে ১টি।
এনসিটি, সিসিটি, জিসিবিতে বার্থ খালি না থাকায় বহির্নোঙ্গরে থাকা জাহাজগুলো ভিড়তে পারছে না। অন্যদিকে, বিদেশি অপারেটর রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল পরিচালিত পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের চারটি জেটির মধ্যে তিনটি জেটি খালি রয়েছে। সেখানে যন্ত্রপাতি না থাকায় বাড়তি জাহাজ হ্যান্ডলিং করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন শিপিং সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার জন্য ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আরএসজিটি-র সাথে ২২ বছরের চুক্তি করা হয়। ২০২৪ সালের ১০ জুন পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালে বাণিজ্যিক জাহাজে প্রথমবারের মতো রপ্তানি কন্টেইনার শিপমেন্ট হয়।
সম্প্রতি এই টার্মিনালে আমদানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং শুরু হলেও, যন্ত্রপাতি সংকটে সবগুলো জেটিতে জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া পিসিটিতে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং-এর জন্য কোনো গ্যান্ট্রি ক্রেন না থাকায়, নিজস্ব ক্রেন আছে–এমন জাহাজ এই টার্মিনালে ভেড়ানো হয়।
এই দেরির কারণে শিপিং কোম্পানিগুলোকে প্রতিদিন জাহাজের ভাড়া বাবদ গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। জাহাজের আকার ভেদে প্রতিটি জাহাজের ভাড়া বাবাদ ১২ হাজার ডলার থেকে ২০ হাজার ডলার পর্যন্ত ভাড়া গুনতে হয়।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, পানামার পতাকাবাহী সল প্রমিজ জাহাজটি কলম্বো বন্দর থেকে কন্টেইনার নিয়ে গত ১২ জুন চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। জাহাজটি চার দিন পর আজ জেটিতে ভেড়ানোর কথা রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে অপেক্ষমাণ জাহাজের মধ্যে গিয়ারবিহীন জাহাজগুলো ৯ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করছে। অন্যদিকে, গিয়ারযুক্ত জাহজগুলো ৩ দিন ধরে অপেক্ষা করছে।
জাহাজের মেইনলাইন অপারেটর এবং শিপিং খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ১০ দিন অপেক্ষায় থাকা নজিরবিহীন এবং অতীতে এমন ঘটনা ঘটেনি। বর্ধিত ১০ দিনের ঈদ ছুটির কারণেই এই জট তৈরি হয়েছে। আগের ছুটিগুলোতে সাধারণত ৫ দিনের বেশি দেরি হতো না।
তবে শুধু সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী জাহাজ সিনার সোরোং-কে ১০ দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। অন্য জাহাজগুলোকেও সাধারণ সময়ের তুলনায় বেশি অপেক্ষা করতে হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানিয়েছেন, জেটিতে কন্টেইনার খালাসেও অতিরিক্ত সময় লাগছে। জাহাজের আকারভেদে দুই থেকে তিন দিনে পণ্য ওঠা-নামা শেষে জাহাজ বন্দর ত্যাগ করে। এখন সেটির করতে চার থেকে পাঁচ দিন সময় লাগছে ।
গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি ও বহির্নোঙ্গরে ৯৮টি জাহাজ অবস্থান করেছে। এর মধ্যে, কন্টেইনার জাহাজ, বাল্ক কার্গো জাহাজ এবং তেলবাহী জাহাজ রয়েছে।
শিপিং খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে একটি কন্টেইনার জাহাজ বহির্নোঙ্গরে আসার এক বা দুই দিনের মধ্যে জেটিতে প্রবেশ করতো। কখনো কখনো অন-অ্যারাইভাল বার্থিংও পেতো জাহাজগুলো। কিন্তু ঈদের ছুটিতে জাহাজে কন্টেইনার ওঠা-নামার গতি ধীর হয়ে গেছে এবং বন্দরে জট তৈরি হয়েছে।
চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, ‘ঈদের টানা দশ দিন ছুটির প্রভাবে যে ক্ষতির আশঙ্কা আমরা করেছিলাম, সেটিই হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের যে জট সৃষ্টি হয়েছে, তা স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। এই আর্থিক ক্ষতি বহন করতে হবে ব্যবসায়ীদের।’
তিনি বলেন, ঈদের সময় বন্দর খোলা থাকলেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ছিল। এ কারণে কনটেইনার ডেলিভারিতে সমস্যা হয় এবং জট তৈরি হয়।