জুলাই থেকে প্রতিমাসে ‘রেফারেন্স রেট’
সুপ্রভাত ডেস্ক
ঋণে সুদহারের সীমা তোলার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও ব্যাংকগুলোর বাড়তি সুদ নেওয়ার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি ‘রেফারেন্স রেট’ নির্ধারণের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে; প্রতি মাসে যা ট্রেজারি বিল ও বন্ডের ছয় মাসের গড় সুদহার বিবেচনায় ঠিক করে দেওয়া হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত এ হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সুদ যোগ করে ঋণ দিতে পারবে বাণিজ্যিক ব্যাংক বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক।
রোববার ব্যাংকার্স সভায় এ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার নির্ধারণের এ করিডোর পদ্ধতিকে ‘স্মার্ট’ (শর্ট টার্ম মুভিং এভারেজ) নামে নামকরণ করছে।
আগামী মুদ্রানীতিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে। আশা করছি আগামী ১ জুলাই থেকে তা বাস্তবায়ন করা হবে, যোগ করেন তিনি।
ঋণ বিতরণে বিদ্যমান ৯ শতাংশ সুদের সীমা তুলে দিয়ে সুদহার নির্ধারণের এ প্রক্রিয়া নিয়ে এখনও ব্যাংকারদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথাও বলেছেন মুখপাত্র।
নতুন এ পদ্ধতি চালু হলে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদহারে ওঠানামার কারণে প্রতি মাসে গ্রাহকের ঋণের সুদহারে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনার কথা বলছেন ব্যাংকাররা।
এদিন ঢাকার মতিঝিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়। তিন মাস পরপর অনুষ্ঠিত এ সভায় বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীরা অংশ নেন।
মেজবাউল জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এ সভায় আগামী মুদ্রানীতি, সুদহার, আমদানি-রপ্তানিতে ডলারের মূল্যহার, ডলারের বিনিময় হার, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা এবং লেনদেন প্রক্রিয়া নগদের বদলে (ক্যাশলেস) ডিজিটাল করার বিষয়ে আলোচনা হয়।
ব্যবসায়ীদের স্বল্প সুদে অর্থ দিতে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া ব্যাংকঋণের সুদহারের ঋণে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সীমা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। তবে সম্প্রতি ভোক্তা ঋণে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ বাড়িয়ে সুদ নিতে মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখনও এ ইস্যুতে কোনো সার্কুলার জারি করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।
এদিকে অর্থনীতির চাপ সামলাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর কাছ থেকে চার দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়ার সময় সংস্থাটির সঙ্গে সমঝোতায় সুদহারের সীমা তুলে দিতে সম্মতি দেয় সরকার। এর অংশ হিসেবে কীভাবে সুদহারের সীমা তুলে দেওয়া হবে তা নিয়ে প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গভর্নর গত ১২ মার্চ বাংলাদেশ বিজনেস সামিটে এজন্য ফিলিপিন্সের আদলে সুদহারের ‘করিডোর’ প্রথা চালুর পরিকল্পনার কথা জানান। দেশেও বাজারভিত্তিক ‘রেফারেন্স রেট’ চালুর বিষয়টি তখন সামনে আসে, যেটির ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ঋণ ও বিনিয়োগের সুদহার ঠিক করবে।
এদিন ব্যাংকার্স বৈঠক শেষে ‘প্রতি মাসেই বাজারভিত্তিক’ এ হার বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষণা করবে জানিয়ে মুখপাত্র মেজবাউল বলেন, ‘‘প্রতি মাসেই ছয় মাসের গড় সুদহার দেখে একটি রেফারেন্স রেট ঘোষণা করা হবে।
যদি দেখা যায় গড় সুদহার ১ শতাংশ বা বা নিম্নমুখী হয়েছে বা এমন একটি পর্যায়ে রয়েছে যা বাজারমুখী না, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার বুঝে সুদহার নির্ধারণ করে রেফারেন্স রেট জানিয়ে দেবে।এ রেফারেন্স রেটের সঙোগ সমন্বয় করে ব্যাংকগুলো ঋণে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ সুদ নিতে পারবে। চাইলে কেউ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেফারেন্স রেটেও ঋণ দিতে পারবে।
‘র্স্মার্ট’ পদ্ধতিতে রেফারেন্স রেট ঘোষণা করা হলে বর্তমানে তা ৬ দশমিক ৯ শতাংশের মতো হতে পারে বলে জানান তিনি।
ডলারের দর বাফেদার ঘোষণার চেয়ে বেশি নয়
মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত মেনে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে ডলার কেনাবেচার অভিন্ন দর নির্ধারণ করে দিচ্ছে বাংলাদেশ ফরেইন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন (এবিবি)।
বিভিন্ন সময়ে দর ওঠানামার পর বর্তমানে দেশে আসা রেমিটেন্সের ক্ষেত্রে ডলারের বিনিময় হার সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা। রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারে সর্বোচ্চ ১০৫ টাকা পাবেন ব্যবসায়ীরা, যা রোববার (২ এপ্রিল) থেকে কার্যকর হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাফেদা।
অপরদিকে আমদানির এলসি খোলার ক্ষেত্রে বিনিময় হার নির্ধারণ করা হবে রেমিটেন্স ও রপ্তানির বিনিময় হারের গড় করে। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ গড় হারের সঙ্গে অতিরিক্ত ১ টাকা বেশি নিতে পারবে; অর্থাৎ স্প্রেড সীমা হবে ১ টাকা।
তবে ডজন খানেক ব্যাংক বাফেদার ঘোষিত এই দরের চেয়ে বেশি দামে ডলার বিনিময় করছে।
এমন অভিযোগের বিষয়ে রোববারের ব্যাংকার্স সভায় ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে জানিয়ে মেজবাউল হক বলেন, ব্যংকগুলোকে সতর্ক করে বলা হয়েছে বাফেদার দরের চেয়ে কেউ বেশি দরে ডলার কেনাবেচা করতে পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি তদারকি করে দেখছে।
রপ্তানি মূল্য নজরদারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক
রপ্তানি হওয়া পণ্যের মূল্য যথাযথ হচ্ছে কি না তা দেখতেও ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, আমরা যে ঝুঁকির জায়গাগুলো আছে তা নির্ধারণ করে এ বিষয়ে একটি কাঠামো নির্ধারণ করতে যাচ্ছি। ব্যাংকগুলো দেখবে যে দরে পণ্য রপ্তানি হচ্ছে তা সঠিক কি না। আবার রপ্তানি মূল্য যেন প্রত্যাবসনও হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক এক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম দেখতে পেয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা সেরকম ভাবছি না। ঝুঁকির জায়গাগুলো চিহ্নিত করছি মাত্র। ব্য্যাংকগুলো রপ্তানি ও আমদানি হওয়া পণ্যের সঠিক দরটি যাচাই করে দেখবে।