নাগরিক আন্দোলনের প্রতিবাদী দূরবন্ধন কর্মসূচি #
নিজস্ব প্রতিবেদক :
চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নৈরাজ্য বন্ধ করে অবিলম্বে সরকারি- বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় নাগরিক আন্দোলন, চট্টগ্রাম আয়োজিত প্রতিবাদী দূরবন্ধন কর্মসূচি থেকে। এই কর্মসূচি থেকে অবিলম্বে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত না হলে কঠোর আন্দোলন এবং জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালগুলো মনিটর করা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।
জনস্বাস্থ্য রক্ষায় নাগরিক আন্দোলন চট্টগ্রামের সংগঠক শরীফ চৌহানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বক্তব্য রাখেন সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা, শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস, আবৃত্তি শিল্পী রাশেদ হাসান।
সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, অ্যাডভোকেট জহির উদ্দিন, বাসদ এর সমন্বয়ক মহিম উদ্দিন, ন্যাপ নেতা মিঠুল দাশগুপ্ত, শিল্পী আলোকময় তলাপাত্র, প্রকাশক নুরুল আবছার, সাংস্কৃতিক সংগঠক সুনীল ধর, বেসরকারি আইসোলেশন সেন্টার এর উদ্যোক্তা সাজ্জাদ হোসেন, খেলাঘর সংগঠক বন বিহারী চক্রবর্তী, ছাত্রনেতা সাইফুদ্দিন সুজন।
সমাবেশে সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা বলেন, এই রাষ্ট্র সবার। স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া সব শ্রেণির মানুষের অধিকার। কিন্তু আজ আমরা দেখছি সাধারণ মানুষ সেবা পাচ্ছে না। বেসরকারি হাসপাতালগুলো তাদের দরজা বন্ধ করে রেখেছে। এই নৈরাজ্য চলতে পারে না। জীবন না বাঁচলে জীবিকাও বাঁচবে না। অবিলম্বে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত না হলে জনগণকে নিয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
শিক্ষক নেতা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার তুলনায় চট্টগ্রামে হাতেগোনা কয়েকটি হাসপাতালে অল্প কিছু বেড আছে। এতে করে অসুস্থ অনেকেই সেবা নিতে পারছেন না। বেসরকারি হাসপাতালগুলো লুকোচুরি খেলছে। নন-কোভিড রোগীদেরও তারা চিকিৎসা দিচ্ছে না। হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরে মানুষ মারা যাচ্ছে। এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের নিরবতা মেনে নেয়া যায় না।
শরীফ চৌহান বলেন, মানুষ স্বাস্থ্য সেবা পাবে না, এটা হতে পারে না। সেবা পাওয়া সবার অধিকার। জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেনের দাম আকাশচুম্বী। কোভিড রোগীদের জন্য হাসপাতালে পর্যাপ্ত জায়গা নেই। হৃদরোগ, কিডনি, ডায়বেটিস বা ফুসফুসের রোগ থাকলেও তাদের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি নিচ্ছে না। মানুষ বিনা চিকিৎসা মারা যাচ্ছে। এরকম স্বেচ্ছাচারিতা চলছে কিছু ক্লিনিক মালিক ব্যবসায়ীর নেতৃত্বে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। মানুষ চিকিৎসা চায়, ওষুধ চায়, অক্সিজেন চায়। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নৈরাজ্য বন্ধ না হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে যাব। তখন হাসপাতালগুলোতে সেবা নিশ্চিত করতে সাধারণ মানুষই মনিটরিং করবে।
সংবাদিক হাসান ফেরদৌস বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে অল্প সংখ্যকেরই হাসপাতালে সেবা নিতে হয়। সেই অল্প সংখ্যকই সেবা পাচ্ছে না। বেসরকারি হাসপাতালে সাধারণ রোগীদেরও ঠাঁই হচ্ছে না। সরকারের দায়বদ্ধতা আছে জনগণের প্রতি। জনগণের প্রতি সেই দায় মেটানো না হলে মানুষ রাস্তায় নামবে। আমরা সেবা চাই, আর কিছু না। মানুষ চিকিৎসা না পেলে, জীবন না বাঁচলে সকল আয়োজন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।
সমাবেশ থেকে জানানো দাবির মধ্যে ছিল- ন্যায্যমূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দুইশ শয্যার আইসিইউ বেড নিশ্চিত করা, জোনভিত্তিক আইসোলেশন কেন্দ্র চালু, জীবন রক্ষাকারী ওষুধের কৃত্রিম সংকট ও মজুতদারী বন্ধ করা, ডাক্তার-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, বেসরকারি হাসপাতাল অধিগ্রহণ করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা নিশ্চিত করা, নমুনা সংগ্রহে এলাকাভিত্তিক বুথ ও দুইদিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান, স্বাস্থ্য সেবায় নৈরাজ্য বন্ধ করে মানুষ বাঁচাও।
সমাবেশে আরো সংহতি জানান সাংস্কৃতিক রুবেল দাশ প্রিন্স, শৈবাল পারিয়াল, সুভাষ ঘোষ ও তপন দে।