নিজাম সিদ্দিকী »
আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আট লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। এখন চলছে নকশা তৈরির কাজ। তবে পুরো মহাসড়ক আট লেন হবে না। যানবাহনের চাপের ওপর ভিত্তি করে কোথাও ছয় লেন, কোথাও আট লেন হবে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র মতে, গত এপ্রিল মাস থেকে শুরু হয়েছে নকশা প্রণয়নের কাজ। এ কাজ বাস্তবায়নে নিয়োজিত রয়েছে দেশি-বিদেশি পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। ১৮ মাস লাগবে নকশা তৈরির এ কাজে। এতে প্রায় ৪৫ কোটির টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। কাজের অর্থায়ন করছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-এডিবি।
এ প্রসঙ্গে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও রোড ট্রান্সপোর্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক মো. সাব্বির হাসান খান দৈনিক সুপ্রভাতকে বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আট লাইনে উন্নীত করতে বর্তমানে ডাটাবেজসহ নকশার কাজ চলছে। আগামী বছরের অক্টোবরে নকশার কাজ শেষ হলে আমরা প্রকল্প প্রণয়নের কাজ শুরু করবো। সব মিলে আগামী ২০২৫ সালের পাইপলাইনে এ প্রকল্প সেট করার পরিকল্পনা রয়েছে’।
নকশায় বিশেষ প্রাধান্য পাওয়া বিষয়গুলো সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘নকশা প্রণয়নের কাজটিকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। নকশায় একটি সড়কের সঙ্গে অন্য একটি সড়কের যেনো ইন্টারলিংক না হয়, সে বিষয়টি দেখা হচ্ছে। প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে আমাদের যেনো গাড়ি চালানোর সময় অন্য প্রান্তের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে না হয়। কোনো সড়কে আন্ডারপাসিং রোড, কোনো সড়কে একতলা, প্রয়োজনে দোতলা ওভারপাস থাকবে।’
সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশেষ করে দ্রুত যাতায়াত এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আট লেনে উন্নীত করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। ফেনী-বিলোনিয়া, কুমিল্লার বিবিরবাজার এবং রামগড় স্থলবন্দর থেকে চট্টগ্রামে পণ্য পরিবহনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমও হচ্ছে এ মহাসড়ক।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি), পাশাপাশি বিশ্ববাংক, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আট লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে অর্থায়ন করবে বলে জানা গেছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আলাদা তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশস্ত করা হবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি। গত জানুয়ারিতে ২২৯ কিলোমিটারের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে তিনটি ভাগ করে আলাদা আলাদা তিনটি পিডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।
এর মধ্যে একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে বৃহত্তর ঢাকা অংশের তিনটি জেলায় (ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ)। এ অংশে সড়কের দৈর্ঘ্য ৩৮ কিলোমিটার, যা নির্মাণে খরচ হবে ৮ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। আরেকটি প্রকল্প হবে বৃহত্তর কুমিল্লা অংশের দুটি জেলায় (কুমিল্লা ও ফেনী)। এ অংশে সড়কের দৈর্ঘ্য ১২৫ কিলোমিটার। এটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ৪৫ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা। অপরটি বাস্তবায়িত হবে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অংশে; ফেনী থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত। আর এতে খরচ হবে ১৮ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। এই অংশের দৈর্ঘ্য ৬৯ কিলোমিটার।
তিনটি প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৭৩ হাজার ১৫১ কোটি টাকা।
২২৯ কিলোমিটার সড়কের কোথাও চার লেন, আবার কোথাও ছয় লেনে উন্নয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে আলাদা তিনটি প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ২৩২ কিলোমিটারের কাজ একটি প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা হলে খরচ বেশি পড়বে। কোনো উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এত টাকা একসঙ্গে ঋণ দিতে রাজি হবে না বিধায় আলাদা তিনটি প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সরকার ২০০৬ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে একটি প্রকল্প নিয়েছিলো। দুই দফায় বাড়িয়ে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয় ২০১৬ সালে। এতে প্রকল্পের খরচ ২ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকায়। অবশেষে ২০১৬ সালে চালু হয় কুমিল্লার দাউদকান্দি টোল প্লাজা থেকে চট্টগ্রাম সিটি গেট পর্যন্ত ১৯২ কিলোমিটার চার লেন সড়ক।