সুপ্রভাত বিনোদন ডেস্ক »
দেশের অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী। ১৯৭৬ সালে এটি গড়ে তোলেন গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর। গত ২৩ জুলাই করোনায় প্রাণ হারান এই কিংবদন্তি।
সংগঠনটির জন্ম থেকে সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন ফকির আলমগীর। বলা যায়, সংগঠনটির প্রাণপুরুষ ছিলেন তিনি। শিল্পীর অবর্তমানে সংগঠনটির কার্যক্রম সচল রাখার জন্য সম্প্রতি গঠিত হলো নতুন কমিটি। জীবিত সব সদস্যের সম্মতিতে সংগঠনটির সভাপতির পদ পেলেন ফকির আলমগীরের স্ত্রী সুরাইয়া আলমগীর। যার মধ্য দিয়ে ৪৫ বছর পর ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী পেলো নতুন সভাপতি।
এই কমিটিতে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে স্থান পেয়েছেন ফকির আলমগীরপুত্র ফকির মাশুক আলমগীর (রাজিব)। এছাড়াও সাধারণ সম্পাদক হলেন সমর বড়ুয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক হলেন সালাম শামীম।
মোট ৩৪ সদস্যের কমিটি তৈরি হয় ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠীর আগামী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য।
নতুন নির্বাচিত সভাপতি সুরাইয়া আলমগীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটি তাঁর (ফকির আলমগীর) প্রাণের সংগঠন। দেশের যেকোনও ক্রান্তিকালে ঋষিজ এগিয়ে গেছে। আমি মনে করি, ঋষিজ ফকির আলমগীর আরেকটি সন্তান। এই সংগঠনটিকে তিনি লালন-পালন করে এতদূর নিয়ে এসেছেন। তাঁর প্রয়াণে আমাকে স্থলাভিষিক্ত করা হয় সব সদস্যের সম্মতিক্রমে। সবার অনুরোধে আমি দায়িত্বটি নিয়েছি বটে, তবে এটা আমার জন্য দুঃসাহসের মতো। কারণ, তাঁর মতো গুণী-বিচক্ষণ সংগঠক আমি নই। আমার স্বপ্ন ফকির আলমগীরের স্বপ্ন বুকে ধারণ করে সংগঠনটিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তাতে তাঁর আত্মা শান্তি পাবে।’
২৯ অক্টোবর ঋষিজের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নতুন সভাপতিকে ফুল দিয়ে বরণ করেন অন্য সদস্যরা ২৯ অক্টোবর ঋষিজের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নতুন সভাপতিকে ফুল দিয়ে বরণ করেন অন্য সদস্যরা
এদিকে সংগঠনটির নবনির্বাচিত জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফকির আলমগীরপুত্র ফকির মাশুক আলমগীর (রাজিব) বলেন, ‘পারিবারিক সূত্রে মনেপ্রাণে সংগীতের মানুষ হলেও পেশায় আমি একজন অধ্যাপক। তবে বাবার আদর্শ তথা গণসংগীতের স্বার্থে আমি অধ্যাপনার পাশাপাশি নিয়মিত গানে ফিরতেও প্রস্তুত। ঋষিজ’র পতাকা ওড়াতে চাই সারা বিশ্বে।’
ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠীর নবনির্বাচিত কমিটিতে স্থান পাওয়া ফকির আলমগীর পরিবারের অন্য সদস্যরা হলেন, ফকির সিরাজ, হাসান আলমগীর রাহুল, আশেক আলমগীর, ফকির মিজানুর রহমান, ফকির জাহিদ হাসান, তামজিদুর রহমান ও লুৎফুর রহমান শাহীন। ফকির আলমগীর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম শিল্পী। তারও আগে থেকে তিনি শ্রমজীবী মানুষের জন্য গণসংগীত করে আসছিলেন। স্বাধীনতার পর পাশ্চাত্য সংগীতের সঙ্গে দেশজ সুরের মেলবন্ধন ঘটিয়ে বাংলা পপ গানের বিকাশে ভূমিকা রেখেছেন ফকির আলমগীর। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তার কণ্ঠের বেশ কয়েকটি গান দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। এরমধ্যে ‘ও সখিনা’ গানটি এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
১৯৮২ সালের বিটিভির ‘আনন্দমেলা’ অনুষ্ঠানে গানটি প্রচারের পর দর্শকের মধ্যে সাড়া ফেলে। কণ্ঠ দেওয়ার পাশাপাশি গানটির সুরও করেছেন ফকির আলমগীর। তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা, গণসংগীত চর্চার আরেক সংগঠন গণসংগীত শিল্পী পরিষদের সাবেক সভাপতি।
সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে সরকার তাকে একুশে পদক দিয়ে সম্মানিত করে।