নিলা চাকমা »
মাত্র চার জন শিক্ষার্থী নিয়ে ১৯৯০ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ডেন্টাল ইউনিট। দীঘদিন চমেকে একটি পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজ রূপান্তরের দাবি থাকলেও ৩৩ বছরেও তা পূর্ণতা পায়নি। স্বল্প খরচে উন্নত মানের দাঁতের চিকিৎসার ভরসাস্থল হলেও পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম, শয্যাসংখ্যা ও জনবলের সংকটের কারণে এখানে সেবা ও শিক্ষা প্রদান অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রকল্পটির জন্য প্রায় আড়াইশো কোটি টাকার বাজেটও নির্ধারণ করা হয়। কিন্ত চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুমোদন না পেয়ে ফের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ফেরত এসেছে। এতে পূর্ণাঙ্গ ‘ডেন্টাল কলেজ’ প্রতিষ্ঠা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের অক্টোবরে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেডিক্যাল ডেন্টাল ইউনিটকে পূর্ণাঙ্গ ‘ডেন্টাল কলেজ’ করার পরিকল্পনা করা হয়। একই বছর নভেম্বরের জুনে একটি সার সংক্ষেপ অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। এরই প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে এপ্রিলে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে চমেক হাসপাতাল সংলগ্ন গোঁয়াছি বাগান পরিদর্শন এবং সেখানে ডেন্টাল কলেজের জন্য ৩ একরের জায়গা নির্ধারণ করা হয়।
গোঁয়াছি বাগান পরিদর্শনকালে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. ইসমাইল হোসেইন খান, অধ্যাপক ডা. সেলিম জাহাঙ্গীর , চট্টগ্রাম মেডিক্যালের তৎকালীন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মো. জালাল উদ্দিন, ডেন্টাল ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আকরাম পারভেজ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। পরে বিভিন্ন দফায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, গণপূর্ত ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নিরলস পরিশ্রম করে প্রস্তাবিত চট্টগ্রাম ডেন্টাল কলেজের একটি রূপরেখা প্রস্তত করেন। প্রস্তাবনা আকারে ২০২১ সালের দিকে তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্ত অনুমোদন না পাওয়ায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তা ফের মন্ত্রণালয়ে ফেরত এসেছে।
প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে প্রতিবছর ৬০ জন শিক্ষার্থী ব্যাচেলর অব ডেন্টাল( বিডিএস) কোর্সে ভর্তি হয়। বাংলাদেশের সকল ডেন্টাল কলেজ এবং ইউনিটের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চমেক ডেন্টাল ইউনিট। এখানে ছয়টি বিভাগ রয়েছে। এগুলো হলো ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি, কনজারভেটিভ ডেন্টিস্ট্রি অ্যান্ড (দাঁত পরিষ্কার করা) , প্রসথোডন্টিকস (দাঁত বানানো), চিলড্রেন বিভাগ, অর্থোডন্টিক্স বিভাগ প্রিভেন্টিভ ডেন্টিস্ট। প্রতিদিন আউটডোরে ২৫০-৩০০ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এছাড়া হাসপাতালে দাঁত তোলা, মাইনর সাজার্রি, মেজর অপারেশন (মুখে টিউমার, জিহ্বা বা তালুতে ঘা) , ফিলিংসহ বিভিন্ন চিকিৎসা দেওয়া হয়। আছে ২০ শয্যার একটি ওয়ার্ডও। যেখানে মুখে টিউমার, জিহব্বা বা তালুতে ঘা অর্থাৎ সিরিয়াস রোগীদের ভর্তি ও সেবা দেওয়া হয়।
অনুমোদন না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে চমেক ডেন্টাল ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আকরাম চৌধুরী বলেন, ‘চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ডেন্টাল কলেজের সার সংক্ষেপটি অনুমোদন না পাওয়ায় মন্ত্রণালয়ে ফেরত এসেছে। কিন্ত কি কারণে এসেছে তার কারণটি আমরা জানি না। চট্টগ্রামে দীর্ঘদিনের দাবি একটি পূর্ণাঙ্গ সরকারি ‘ডেন্টাল কলেজ’। চট্টগ্রামে সরকারিভাবে বেশি সংখ্যক রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এ প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে মাত্র ২০ শয্যা। শয্যার অভাবে অনেক রোগীকে ভর্তিও করানো যায় না। পরে তাদের বেসরকারি হাসপাতালে ছুঁটতে হয়। চলে যায় বিরাট অংকের টাকা। পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজ হলে বেশি সংখ্যক ছাত্রছাত্রী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেত। রোগীদের শয্যা সংখ্যা বাড়তো। আমরা চাই দ্রুত প্রতিষ্ঠানটি কলেজে রূপান্তরিত হোক। ’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, ‘রোগীদের সেবা দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। দাঁতের চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিশেষ চেয়ার রয়েছে ৪৫ টির উপরে। তার মধ্যে ৩৮টি চেয়ারই বসার অনুপযুক্ত। কোনটার হ্যান্ডপিস নষ্ট, কোনোটার বাল্ব নষ্ট আবার কোনটার চেয়ার উঠানামা করা যায় না। রোগীকে দাঁতের চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমরাই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। কারণ চেয়ারগুলো আমাদের বসার অনুপযুক্ত। দ্রুত এই সংকট মোকাবিলা করা দরকার। আমাদের দাবি প্রতিষ্ঠানটিকে দ্রুত কলেজে রূপান্তরিত করা হোক।’
ডেন্টাল ইউনিটের অর্থোডন্টিক্স বিভাগের ছাত্রী ফাহমিদা নূর বলেন, পূর্ণাঙ্গ ‘ডেন্টাল কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করা খুবই প্রয়োজন। কারণ এখানে অনেক চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতি রয়েছে। সব চাইতে দরকার ডেন্টাল চেয়ার। এখানে প্রায় ৩০ টার উপর চেয়ার নষ্ট। ডেন্টাল কলেজ হলে অনেকের কর্মসংস্থান হতো।’
চমেকের অধ্যক্ষ ডা. শাহেনা আক্তার বলেন, ‘ডেন্টাল কলেজটি গোঁয়াছি বাগানে হওয়ার কথা ছিলো। কিন্ত বাজেট অনুমোদন না হওয়ায় সেখানে বার্ন ইউনিট করা হচ্ছে। ডেন্টাল কলেজে রূপান্তরের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। এখানে আমাদের কোনো এখতিয়ার নেই। তবে পরিকল্পনা যেহেতু রয়েছে আশা করি একদিন অবশ্যই হবে।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ‘শুধু চট্টগ্রাম নয় রাজশাহী ডেন্টাল কলেজও অনুমোদন পায়নি। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটও সেই তালিকায় পড়েছে। সরকারের পরিকল্পনা আছে, আজ হোক কিংবা কাল তা বাস্তবায়ন হবেই।’