যে কারণে ষোলশহর দুই নম্বর গেট মোড়ে পানি জমছে
ভূমি অধিগ্রহণ না হলে খাল চওড়া করা যাবে না- সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক
ভূঁইয়া নজরুল »
২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায় চশমা খালের মাটি উত্তোলনের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের। গত চার বছর ধরে পুরো এলাকাজুড়ে ব্যাপক কার্যক্রম হওয়ার পরও এই এলাকার জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ যায়নি। জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পে এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে, তারপরও চার বছর আগেও যেমন বৃষ্টি হলেই পানি জমতো এখনো পানি জমে। কিন্তু কেন?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গত কয়েকদিন ধরে ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চশমা খালের দুই নম্বর গেট মোড় থেকে মহানগর ভূমি অফিস পর্যন্ত (কৃষি ব্যাংকের বিপরীত পার্শ্বে) খালটি অনেক চওড়া (প্রায় ৩০ ফুট)। কিন্তু ভূমি অফিসের পর থেকে ফরেস্ট গেট পর্যন্ত খালটি ড্রেনে (৫ থেকে ৬ ফুট) পরিণত হয়েছে। ফরেস্ট গেট থেকে মুরাদপুর মোড় পর্যন্ত চওড়া (প্রায় ৩০ ফুট)। মুরাদপুর মোড়ের কালভার্টটি সরু (প্রায় ১০ ফুট), কালভার্টের পর আবার চওড়া (প্রায় ৩০ ফুট)। একই খালের মধ্যবর্তী অংশ সরু এবং উভয় পাশে চওড়া।
আবার খালের উভয়পাশে রিটের্নিং দেয়াল নির্মাণের কাজও চলছে। খালের কোনো অংশ সরু আবার কোনো অংশ চওড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ্ আলী বলেন, ‘চশমা খালের এ প্রান্ত (ষোলশহর দুই নম্বর গেট মোড়) থেকে মুরাদপুর শুলকবহরের বিপরীত পার্শ্ব পর্যন্ত সমান চওড়া হবে। অর্থাৎ ৮ মিটার (২৪ ফুট) চওড়া হবে। কিন্ত উভয় দিকে চওড়া করা গেলেও মহানগর ভূমি অফিস থেকে ফরেস্ট গেট পর্যন্ত (১ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ) এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণ করা যায়নি বলে খালটিকে চওড়া করা যায়নি। এছাড়া মুরাদপুর মোড়ের কালভার্টটিও ভেঙে চওড়া করতে হবে। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না।’
এক কিলোমিটার অংশের কারণে কি পানি জমছে ষোলশহরে?
ষোলশহর, পলিটেকনিক্যাল, কসমোপলিটন, রহমান নগর, চন্দ্রনগর, আলফালাহ গলি, জাকির হোসেন রোড, সিঅ্যান্ডবি কলোনি, ও আর নিজাম রোড আবাসিক এলাকা, ষোলশহর মসজিদ গলি, হিলভিউ আবাসিক এলাকাসহ আশপাশ থেকে পানিগুলো চশমা খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়। কিন্তু বিশাল এলাকার বৃষ্টির পানি শিক্ষাবোর্ডের সামনে সরু ড্রেন দিয়ে নামতে পারছে না বলে বৃষ্টি শুরুর কিছুক্ষণ পরই রাস্তায় পানি জমে যায়। এ বিষয়ে লে. কর্নেল মো. শাহ্ আলী বলেন, ‘এজন্যই আমরা চশমা খালটি চওড়া করছি। কিন্তু মধ্যবর্তী অংশ চওড়া করতে না পারায় দুই অংশে চওড়া করলেও এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।’
তবে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, খালটির বিভিন্ন অংশে এখনো মাটি জমা রয়েছে। সীমানা দেয়াল নির্মাণের কাজ শেষ না হওয়ায় খালে পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা কেন?
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পটি সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন পায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার এ প্রকল্পে ৩৬টি খাল খননের কাজ করছে সেনাবাহিনী। ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম সিডিএ করে দেয়ার পর খালের চওড়া এবং খালের উভয় পাড়ে রাস্তা নির্মাণের কাজ করার কথা সেনাবাহিনীর। এ বিষয়ে লে. কর্নেল মো. শাহ্ আলী বলেন, ‘সিডিএ আমাদেরকে জায়গা বুঝিয়ে না দিলে কিভাবে কাজ করবো। তারা এখনো অধিগ্রহণ কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি। তাই খালটি চওড়া করা যাচ্ছে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে সিডিএ’র প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ মাঈনুদ্দিন বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণের জন্য আমাদের পর্যাপ্ত ফান্ড নেই। এছাড়া যেহেতু এই এক দশমিক দুই কিলোমিটার অংশের পাশের জায়গার মালিক শিক্ষাবোর্ড, রেলওয়ে ও স্থানীয় সরকার বিভাগ। আমরা তাদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। খালটি চওড়া করা না গেলে পানি চলাচলে স্বাভাবিকভাবে সমস্যা হওয়ার কথা।’
জানা যায়, দুই নম্বর গেইট এলাকায় যাতে পানি না জমে সেজন্য সিঅ্যান্ডবি কলোনির মোড় থেকে রাস্তার উভয় পাশ থেকে প্রায় তিন ফুট চওড়া নতুন দুটি ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ড্রেন দুটির পানি ষোলশহর শেখ ফরিদ মার্কেটের বিপরীত পাশে কবরস্থানের কাছের আলফালাহ গলি দিয়ে আসা খালটিতে এসে সংযোগ হয়েছে। অপরদিকে আগ্রাবাদ হোটেলের মালিকের বাড়ির সামনে থেকে রাস্তার নিচ থেকে অপর ড্রেনটি একই খালের (কবরস্থানের কাছের খাল) সাথে যুক্ত হয়েছে। এই খালটি রাস্তার নিচ দিয়ে গিয়ে যুক্ত হয়েছে চশমা খালের সাথে। আর এ কারণে এখন বৃষ্টি হলে সিঅ্যান্ডবি কলোনির মোড়ে সহজে পানি উঠে না।
উল্লেখ্য, ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে এ পর্যন্ত প্রায় ২৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তারপরও বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমছে। গত বছর প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও এখন সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদনের অপেক্ষায়। তা অনুমোদন পেলে প্রকল্পের মেয়াদ ও বাজেট উভয়ই বাড়বে।