নিজস্ব প্রতিবেদক »
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর বলেছেন, বর্তমান সরকার রেলপথের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন হচ্ছে। সেপ্টেম্বরে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালু হবে। নতুন সেতুর সম্পূর্ণ নকশা ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে। নতুন রেলপথ দিয়ে ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। মানুষ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে পর্যটন শহরে পৌঁছে যাবেন। আশা করছি, ২০২৮ সালে নতুন সেতু নির্মাণ হলে দুর্ভোগ থাকবে না ।’
গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. মো. হুমায়ুন কবীর আরও বলেন, ‘কালুরঘাট সেতু সংস্কারকালীন তিন মাস চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। এ সময়ে যান চলাচলও বন্ধ থাকবে। যাতায়াতের বিকল্প হিসেবে ফেরি চালু করবে রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে। এছাড়া যানবাহন বিকল্প পথে শাহ আমানত সেতু দিয়ে চলবে। একই সঙ্গে ছোট গাড়ি ও মানুষ পারাপারের জন্য থাকবে ফেরির ব্যবস্থা। দুদিক থেকে থাকবে ফেরি। একটি স্ট্যান্ডবাই রাখা হবে। এতে সাময়িক অসুবিধা হবে। তবে সংস্কার কাজ হয়ে গেলে সেই কষ্ট আর থাকবে না।
সংস্কার কাজ চলাকালে কালুরঘাট সেতুর বিকল্প পথ নিয়ে সড়ক ও জনপদের সহকারী বিভাগীয় প্রকৌশলী রোকন উদ্দীন খালেদ চৌধুরী বলেন, ‘কালুরঘাট এলাকায় ইতোমধ্যে তিনটি ফেরি নিয়ে আসা হয়েছে। টোল নির্ধারণসহ অপারেটর ও ইজারাদার নিয়োগের পর ফেরি চালু করা সম্ভব হবে। এছাড়া শাহ আমানত সেতু দিয়ে মইজ্জারটেক এলাকা হয়ে কালারপুল দিয়ে আমরা একটি বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা করতে পারি। এ বিকল্প পথ চালু করা গেলে জনগণের ভোগান্তি অনেকাংশে কমবে। নতুবা ফেরি দিয়ে কালুরঘাট সেতুর পুরো চাপ নেওয়া সম্ভব নয়।’
বোয়ালখালী পৌরসভার চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘এ কালুরঘাট সেতু নিয়ে মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। প্রতিদিন লাখো মানুষ এ সেতু দিয়ে পার হয়। দুটি ফেরি চালু হলে দুর্ভোগ কমবে না। আমরা চাই ওখানে চারটি ফেরি একই সময়ে চলাচল করুক। তবে আসন্ন বর্ষায় নদীর স্রোত বেড়ে যাবে। সে সময় জোয়ারে তিন ঘণ্টা ফেরি চলাচল করা সম্ভব হবে না। তাই বর্ষার পর সেতু সংস্কারের কাজে হাত দিলে দুর্ভোগ কিছুটা কম হবে।’
সভায় কালুরঘাট সেতুর সংস্কার নিয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা। প্রতিবেদনে বুয়েটের প্রকৌশলী দলের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘কালুরঘাট রেল সেতুর অবস্থা এত খারাপ যে, সংস্কার ছাড়া কক্সবাজার পর্যন্ত ভারী ইঞ্জিনের ট্রেন নেওয়া সম্ভব নয়। কালুরঘাট সেতুর ১৬ নম্বর স্প্যান থেকে ২২ নম্বর স্প্যানের অবস্থা খুবই খারাপ। ওখানে মরিচা ধরেছে।’
সেতু সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বুয়েট পরামর্শক দলের পরামর্শে সেতু সংস্কার করা হবে। বর্তমানে এই সেতুতে ট্রেনের গতি ১০ কিলোমিটার। সংস্কারের পর ৫০-৬০ কিলোমিটার হবে। ঠিকাদার নিয়োগের দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। ২০ জুন সংস্কার কাজ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। সেপ্টেম্বরে মূল সংস্কার কাজ শেষ হবে। সংস্কার কাজ শেষে রেল সেতুতে মানুষের হেঁটে পার হওয়ার জন্য ওয়াকওয়ে রাখা হবে।’
সেতু সংস্কারের কর্মপরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঠিকাদার নিয়োগ কার্যক্রম জুনের আগে শেষ করে আমরা ২০ জুন থেকে কাজ শুরু করবো। প্রথমে ম্যাটারিয়ালস মোবিলাইজেশন, প্লেট সংস্কার ও বিটুমিন ঢালাই কাজ হবে। এ কাজ এক মাস চলবে। তবে প্লেট সংযোজন বা সংস্কারের কাজে আগস্ট পর্যন্ত চলবে। এর মধ্যে অর্থাৎ জুলাই থেকে রেল ট্রাফিক লিংকিংয়ের কাজ শুরু হবে। এ কাজটি সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। এরপর মানুষ হেঁটে চলাচল করার জন্য ওয়াকওয়ে নির্মাণের কাজ শুরু হবে। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে রেলওয়ে ট্রাফিক খুলে দেওয়া হবে। অক্টোবরে সেতুর ওপরের সড়ক সংস্কারের কাজ করা হবে।’
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের আয়োজনে মতবিনিময় সভা সঞ্চালনা করেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। সভায় উপস্থিত ছিলেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আ স ম মাহতাব উদ্দিন, বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক আবিদুর রহমানসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ।