নিজস্ব প্রতিবেদক »
‘বে টার্মিনাল’কে বলা হয় চট্টগ্রামের নতুন বন্দর। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে বেশি জাহাজ ধারণক্ষমতার এই টার্মিনালে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা জাহাজ ভেড়ানোর সুযোগ রয়েছে। তাই সবার দাবি দ্রুত এই টার্মিনাল চালু হোক। গতকাল হালিশহর এলাকায় বঙ্গোপসাগর উপকূলে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন শেষে ২০২৪ সালে বে টার্মিনালে অপারেশন কার্যক্রম শুরুর কথা বলেছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি এও বলেছেন, আর পদ্মাসেতুর মতোই বে টার্মিনালও হবে দেশের গর্ব।
বে টার্মিনালের তিনটি টার্মিনালের মধ্যে দুটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে এবং একটি নির্মাণ করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। গতকাল পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সচিব) সুলতানা আফরোজও ছিলেন পরিদর্শনে। তিনিও একই সুরে বলেছেন, অনেক দেশ বে টার্মিনালে বিনিয়োগ করতে চায়। আমরা দেশের স্বার্থ অক্ষুণœ রেখে কাকে কাজ করতে দেবো তা নিয়ে প্রতিনিয়ত মূল্যায়ন করছি। ইতিমধ্যে প্রকল্পটি রিভিও করার জন্য নতুন করে পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে। এরপরই ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে। টার্মিনালটি সরেজমিনে দেখে যাওয়ায় সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধে হবে।
এদিকে পরিদর্শন শেষে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বে টার্মিনাল নিয়ে কোনো সংশয় নেই। ২০২৪ সালের মধ্যে বে টার্মিনালের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করার টাইমলাইন ঠিক করা হয়েছে। সেই হিসেবে কাজ চলছে।
বে টার্মিনালের মধ্যে একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণে চট্টগ্রাম বন্দরের অর্থায়নে নির্মাণকাজ দ্রুত এগুচ্ছে উল্লেখ করে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহণ হয়েছে; মাটি ভরাটের কাজ করোনা মহামারির কারণে ধীরে হচ্ছে। আর টার্মিনাল নির্মাণে চট্টগ্রাম বন্দরে অর্থের সংকট হলে সরকার বিষয়টি সরকার দেখবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, আমরা যে গতিতে এগুচ্ছি তাতে ২০২৪ সালে অপারেশন কার্যক্রম শুরু করতে পারবো। এজন্য স্টাডির কাজও চলমান রয়েছে।
এদিকে বে টার্মিনাল ছাড়াও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ও পিপিপি কর্তৃপক্ষের টিম পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। নৌ মন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর এই প্রথম বে টার্মিনাল এলাকা পরিদর্শন করলেন। পরিদর্শনের সময় নৌ মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম, সচিব ওমর ফারুকসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বন্দর ব্যবহারকারীদের মতে, বে টার্মিনালের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে দিন রাত ২৪ ঘণ্টা জাহাজ ভেড়ানো যাবে। জোয়ার-ভাটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। ১২ মিটার ড্রাফটের জাহাজ সহজে এখানে ভিড়ানো যাবে। সাগরপাড়ের এই টার্মিনালের সাথে যুক্ত থাকছে মিরসরাইয়ে গড়ে উঠা বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের। কর্ণফুলী তলদেশ দিয়ে নির্মিত টানেলের সাথে যুক্ত থেকে মাতারবাড়ি গভীরসমুদ্র বন্দরের সাথেও যুক্ত থাকছে বে টার্মিনাল। কিন্তু যে গতিতে বে টার্মিনাল শুরু হয়েছিল সেই গতিতে তা এগুতে পারেনি। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর বে-টার্মিনাল নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এখনো মাটি ভরাট কার্যক্রম ছাড়া তেমন গতি নেই। পরবর্তীতে বে টার্মিনাল পিপিপি কর্তৃপক্ষের অধীনে বাস্তবায়নের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্ত থেকে একটি টার্মিনাল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নির্মাণ করার বিষয়ে একমত হওয়ার পর এখন দুটি টার্মিনাল নির্মিত হবে পিপিপির আওতায়। অপরদিকে প্রথম দিকে ৬৮ একর জমি বরাদ্দ পেলেও এখনো বাস্তবিক অর্থে বরাদ্দ পায়নি ৮০৩ একর ভূমির। যদিও এই ৮০৩ একর জমি বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে।
জানা গেছে, মূলত দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনি ঘাট থেকে চট্টগ্রাম ইপিজেডের পেছন পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় গড়ে উঠবে এই বে টার্মিনাল। দুই হাজার ৫০০ একর ভূমিতে গড়ে উঠবে এই টার্মিনাল। সাগরের ভেতরের অংশে অনেক ভূমি জেটির আওতায় নিয়ে তা গড়ে তোলা হবে।