প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরীর সাক্ষাৎকার
এক টিউব বসানোর কাজ শেষ, শিগগিরই শুরু হবে দ্বিতীয় টিউবের কাজ
জলোচ্ছ্বাস ঠেকাতে টানেলের মুখে থাকছে বিশেষ দরজা
টানেলে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলতে পারবে
কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত হচ্ছে উপমহাদেশের প্রথম টানেল। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে চালু হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে চলছে নির্মাণ কাজ। ইতিমধ্যে এক টিউবের প্রতিস্থাপন শেষ হয়েছে, প্রস্তুতি চলছে বাকি টিউবের কাজ শুরুর। প্রকল্পের অগ্রগতি, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল প্রকল্পের পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরীর সাথে। কথা বলেছেন সুপ্রভাতের প্রধান প্রতিবেদক ভূঁইয়া নজরুল।
সুপ্রভাত বাংলাদেশ : ২০১৭ সালে প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর এপর্যন্ত টানেল নির্মাণের অগ্রগতি কতটুকু?
হারুনুর রশিদ চৌধুরী : ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। চট্টগ্রাম প্রান্ত থেকে আনোয়ারা প্রান্তে যাওয়ার একটি টিউবের নির্মাণ কাজ শেষ হলেও এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে। শিগগিরই আনোয়ারা প্রান্ত থেকে চট্টগ্রাম প্রান্তে আসার টিউব বসানোর কাজ শুরু হবে। একইসাথে সংযোগ সড়কের নির্মাণ কাজও চলছে। তবে আমরা ডিসেম্বর ২০২২ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
সুপ্রভাত : প্রতিটি টিউবের ব্যাস কতো?
হারুনুর রশিদ : টানেলে দুটি টিউব রয়েছে। প্রতিটি টিউবের ব্যাস ১২ মিটার। এতে দুই লেনে গাড়ি চলাচল করতে পারবে। ফলে চার লেনের সড়কে গাড়ি যেভাবে চলাচল করতে পারে, একইভাবে টানেলের দুই টিউবে চার লেনের গাড়ি ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করতে পারবে।
সুপ্রভাত : দুটি টিউব কি পাশাপাশি থাকবে?
হারুনুর রশিদ : প্রথমে ১২ মিটার ব্যাসের একটি টিউব থাকবে। পরে ১২ মিটার জায়গা ফাঁকা রেখে আবারো ১২ মিটার ব্যাসের আরেকটি টিউব থাকবে।
সুপ্রভাত : টিউব দুটি কর্ণফুলীর মোহনা দিয়ে বসানো হচ্ছে। এতে জাহাজ চলাচলে কোনো সমস্যা হবে কি-না?
হারুনুর রশিদ : টিউবটি অর্ধচন্দ্রাকার হবে। অর্থাৎ স্থলভাগ থেকে নদীর দিকে যাওয়ার সময় ধীরে ধীরে মাটির গভীরে যাবে এবং আবার উপকূলের দিকে ধীরে ধীরে উঠে আসবে। এতে জাহাজ চলাচলে কিংবা নদীর প্রবাহে কোনো সমস্যা হবে না। আর সমস্যা না হওয়ার জন্যই তো প্রধানমন্ত্রী টানেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
সুপ্রভাত : মাটির কতটুকু গভীর দিয়ে যাবে এই টিউব?
হারুনুর রশিদ : মাটির ১৮ মিটার থেকে সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৮ মিটার নিচ দিয়ে টিউব দুটি যাবে। তাই মাটির উপরিভাগে কিছু হলেও টানেলের সমস্যা হবে না।
সুপ্রভাত : টানেলটি যে স্থানে বসানো হচ্ছে, সেই এলাকাটি জলোচ্ছ্বাস প্রবণ। জলোচ্ছ্বাসের পানি টানেলের ভেতরে প্রবেশ করা কীভাবে রোধ করা হবে?
হারুনুর রশিদ : ডিজাইনের সময় এই বিষয়টি আমরা পরিকল্পনায় এনে টানেলের দুই প্রান্তে দুটি গেইট নির্মাণ করছি। জলোচ্ছ্বাসের সময় আমরা এই গেইট দুটি বন্ধ করে দেব। তখন আর পানি টানেলের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না।
সুপ্রভাত : টানেল পরিচালনায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকা প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে?
হারুনুর রশিদ : এজন্য টানেলের দুই প্রান্তে দুটি সাব স্টেশন বসানোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই সাব স্টেশন দুটি আমাদের জাতীয় গ্রিডের সাথে সরাসরি যুক্ত থাকবে। অর্থাৎ জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ থাকলে এখানেও বিদ্যুৎ থাকবে। তবে কোনো বিপর্যয় হলে ব্যাকআপ সাপোর্টও রাখা হয়েছে।
সুপ্রভাত : টানেলের পতেঙ্গা প্রান্তে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, আউটার রিং রোড, বিমানবন্দর সড়ক রয়েছে। অনেকগুলো সড়কের সংযোগস্থল হলো টানেলের প্রবেশমুখ। এগুলোর সমন্বয় কীভাবে করা হচ্ছে?
হারুনুর রশিদ : এটি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জটিল একটি কাজ। তবে ইতিমধ্যে আমরা সিডিএকে বলেছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েকে আরো পেছনে (সিবিচ থেকে কাটগড়েরর দিকে যেতে) নামিয়ে দেয়ার জন্য। একইভাবে সাগড়পারে আউটার রিং রোড প্রান্ত শেষ করতে। তাহলে বিশাল এই জায়গায় চত্বর নির্মাণের মাধ্যমে আমরা টানেলের প্রবেশমুখ এবং বিমানবন্দরের দিকে যাওয়ার রাস্তা চূড়ান্ত করবো। এই ডিজাইনটি ইতিমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী কাজ চলছে।
সুপ্রভাত : আনোয়ারা প্রান্তের সংযোগ সড়কের অগ্রগতি কতটা?
হারুনুর রশিদ : আনোয়ারা প্রান্তে পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালী সড়কের সাথে যুক্ত হওয়ার রোডটির নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এই সংযোগ সড়ক অন্তর্ভূক্ত করেই টানেল প্রকল্পের দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার।
সুপ্রভাত : নির্ধারিত সময়ে কাজটি শেষ করতে কতটুকু আশাবাদী?
হারুনুর রশিদ : কোভিড পরিস্থিতির কারণে কাজ করতে কিছুটা সমস্যা হলেও আমরা তা পুষিয়ে নিয়েছি। চীনে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ প্রস্তুত করে নিয়ে এসে এখানে যুক্ত করা হয়। তাই কোভিড পরিস্থিতিতেও আমরা তেমন পিছিয়ে ছিলাম না। আশা করছি নির্ধারিত সময় ২০২২ সালে ডিসেম্বরেই প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করতে পারবো।