জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ উদ্বোধন
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে এক ডোজ কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাইয়ে চট্টগ্রামে গতকাল সকালে জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ উদ্বোধন করা হয়েছে।
নগরীর কাজির দেউড়ি সরকারি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্মসচিব ডা. এ এম পারভেজ রহীম। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার ফাইলেরিয়াসিস নির্মূল, কৃমি নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষুদে ডাক্তার কার্যক্রম রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার বাস্তবায়নে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এবার চট্টগ্রামে প্রায় ১৫ লাখ শিশুকে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও জেলা স্বাস্থ্য তত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়ার সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিটি করপো রেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আক্তার চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আসিফ খান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিটি করপোরেশনের জোনাল মেডিক্যাল অফিসার ডা. তপন কুমার চক্রবর্তী, কাজির দেউড়ি সরকারি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তপতী চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের স্বাস্থ্যশিক্ষা কর্মকর্তা সম্পদ দে, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্বাস্থ্যশিক্ষা কর্মকর্তা প্রবীর মিত্র ও স্যানিটারি ইন্সপেক্টর টিটু কান্তি পাল ।
এবার জেলার ১৪ উপজেলা ও মহানগরীর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় মিলে ৬ হাজার ৯৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিদ্যালয় বহির্ভূত ৫-১৬ বছর বয়সী ১৮ লাখ ২৭ হাজার ৫৩৭ জন শিশুকে একডোজ কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তারমধ্যে জেলার ১৪ উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় মিলে ৫ হাজার ৬৬২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিদ্যালয় বহির্ভূত ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৫৩৭ জন এবং নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের ১ হাজার ২৮৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিদ্যালয় বহির্ভূত ৩ লাখ ৫০ হাজার শিশু রয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এ বছর ৩০ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী চলমান থাকবে জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী। এসময়ে জেলার প্রত্যেক উপজেলা ও মহানগরের প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতির মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৫-১৬ বছর বয়সী বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থী, বিদ্যালয় বহির্ভূত সকল শিশুকে ক্ষুদে ডাক্তারদের মাধ্যমে এক ডোজ কৃমিনাশক ট্যাবলেট “মেবেন্ডাজল-৫০০ মিঃ গ্রাম” খাওয়ানো হবে। এটি চুষে খাবার ট্যাবলেট নয়, ভরা পেটে পানি দিয়ে গিলে খাওয়াতে হবে। কোন শিশু পুরো ট্যাবলেট গিলে খেতে অসমর্থ হলে তাকে জোর না করে ট্যাবলেট ভেঙে টুকরা টুকরা করে গিলে খাওয়ানো যেতে পারে। স্বাস্থ্যকর্মীরা নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যালয়গুলো পরিদর্শনের মাধ্যমে ক্ষুদে ডাক্তারদের কার্যক্রম তদারকি করবেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, ৫-১৬ বছর বয়সী সকল শিশুর কৃমি নিয়ন্ত্রণে আনার পাশাপাশি কৃমি রোগের মত সংক্রামক রোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা এ কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য। আমাদের দেশে কিছু কিছু মানুষ আছে যারা এখনো স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করেন না। খাবার আগে বা পরে, মলত্যাগের পর ভালোভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস আমাদের অনেকের মধ্যে নেই। এছাড়া অপরিষ্কার, সংক্রমিত খাবার, শাকসব্জি ও অবিশুদ্ধ সংক্রমিত পানির মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। অপরিচ্ছন্ন ও অসচেতনতাকে কৃমির প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ রোগের চিকিৎসায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কৃমির ওষুধ সেবন করতে হবে।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ডা. এ এম পারভেজ রহীম বলেন, কৃমিরোগ আমাদের দেশের একটি বহুল প্রচলিত স্বাস্থ্য সমস্যা। সব বয়সেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে তবে শিশুরাই এ ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের দেশের শিশুমৃত্যু হার বৃদ্ধির পেছনে এ রোগের ভূমিকা রয়েছে কিন্তু সচেতনতা এ রোগকে প্রতিহত করতে পারে। বিজ্ঞপ্তি