সুপ্রভাত ডেস্ক :
শুধু করোনা নয়, আদতে ভাইরাসের সুপ্ত আগ্নেয়গিরির উপরে বসে রয়েছে মানুষ। যে-কোনও মুহূর্তে তার বিস্ফোরণ হতে পারে। এমনটাই জানাচ্ছেন বিজ্ঞানী-গবেষকেরা। তারা বলছেন, মানুষের স্বাস্থ্যকে অন্য প্রাণী জগৎ, উদ্ভিদ জগৎ বা সামগ্রিক পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখার সময় চলে গিয়েছে। বরং এই চারটি বিন্দুর মধ্যে সংযোগ তৈরি করতে না-পারলে ভবিষ্যতে ভাইরাস সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) ‘সাউথ-ইস্ট এশিয়া রিজিয়ন অফিস’-এর ‘কমিউনিকেবল ডিজিজেস’-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর রাজেশ ভাটিয়া জানাচ্ছেন, এই মুহূর্তে প্রায় সাড়ে দশ লাখ অচেনা ভাইরাস রয়েছে মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণী জগতে। তাদের মধ্যে কমপক্ষে সাত লক্ষ ভাইরাসই যে-কোনও রোগ সংক্রমণে সক্ষম। এর মধ্যে মাত্র ২৬০টি ভাইরাসকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। তার কথায়, মানুষের স্বাস্থ্য ও পশুপাখিদের স্বাস্থ্যের সমস্যাকে আলাদা করে দেখলে হবে না। ‘ওয়ান হেলথ’ নীতির মাধ্যমে রোগকে চিহ্নিত করতে হবে এবং সংক্রমণের শুরুতেই তা আটকাতে হবে। না-হলে বন্যজন্তুর মধ্যে এরকম আরও অনেক করোনাভাইরাস রয়েছে, যে গুলি থেকে যে কোনও সময়ে বড় ধরনের সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, গত চার দশকের সার্স-কোভ, মার্স, অ্যাভিয়ান ফ্লু, কেরলের নিপা ভাইরাস, সার্স-কোভ-২ সবই প্রাণিবাহিত রোগ। সংক্রমণের প্রথম ধাপে সংশ্লিষ্ট ভাইরাসকে চিহ্নিত করার ব্যর্থতাই সংক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে চলেছে। ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কি ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজি বিভাগের গবেষক মারিয়া সোদারলুন্ড ভেনার্মো এ বিষয়ে বলেন, ‘ভাইরাসের টাইম বোমার উপরে বসে রয়েছি আমরা। তার বিস্ফোরণ আটকাতে উহানের মতো বন্যপ্রাণী কেনাবেচার সব বাজার বন্ধ করতে হবে। বিশেষ করে বাদুর, ইঁদুরজাতীয় যে কোনও প্রাণী এবং হনুমান শিকার করা ও তা খাওয়া বন্ধ করা প্রয়োজন। না হলে আরও মহামারির আশঙ্কা রয়েছে।’ কেরলের নিপা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেওয়া তথা বর্তমানে কেরল সরকার গঠিত কোভিড-১৯ রোধে বিশেষজ্ঞ দলের অন্যতম সদস্য অনুপ কুমার বলেন, ‘মানুষের স্বাস্থ্য ও অন্য প্রাণিদের স্বাস্থ্যজনিত গবেষণার ক্ষেত্রে সমন্বয় গড়ে তুলতে না পারলে অনেক রোগের চিকিৎসা অধরাই থেকে যাবে।’ অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস’-এর বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান, ইমিউনোলজিস্ট ইন্দিরা নাথের কথায়, কোভিড-১৯ একটা জিনিস পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছে যে ‘ওয়ান হেলথ’ নীতিকে আর অস্বীকার করা যাবে না। রাষ্ট্রপুঞ্জেও বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে।
রাজেশ ভাটিয়ার কথায়, ‘গত চার দশক ছিল ভাইরাসের দশক। গত ৪০ বছরে নতুন ১৮টি প্যাথোজেনকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। ১২টি নতুন ভাইরাস কোনও না কোনও জন্তু থেকে এসেছে। আরও ১২টি ভাইরাসকে মনে করা হচ্ছে, বিশ্বজনীন মহামারির ক্ষেত্রে তারা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে।’
ফলে ভাইরাসের সুপ্ত আগ্নেয়গিরির বিপর্যয় কাটানোই এখন একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
খবর : আনন্দবাজার’র।
ফিচার দেউড়ি