বাদ পড়বেন রাজনৈতিক পরিচয়ধারী ও বিতর্কিতরা
নিজস্ব প্রতিনিধি, হাটহাজারী >
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি এক মাসের বেশি আগে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। বিলুপ্তির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সাবেক আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে আহ্বায়ক ও সাবেক মহাসচিব আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদী সদস্যসচিব করে বয়োজ্যেষ্ঠ আরও ৩ সদস্য নিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি গঠনের এক মাস অতিবাহিত হওয়ার পর সংগঠনটির কার্যক্রম নিয়ে ফের শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন।
হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির পরিধি বাড়ানো হবে। নতুন করে ৫-৭ জন নেতা যুক্ত করে কমিটি ১০-১২ সদস্যের করা হবে বলে এমন পরিকল্পনার বিষয়টি একটি সূত্র নিশ্চিত করলেও ভিন্ন এক সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক পরিচয়ধারী ও বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে খুব শিগগিরই ঘোষণা করা হবে নতুন কমিটি। এক্ষেত্রে প্রয়াত আল্লামা আহমদ শফীর পুত্র মাওলানা আনাস মাদানীর অনুসারীদের কয়েকজন হেফাজতের নতুন কমিটিতে ঠাঁই পেতে পারেন।
হেফাজতের শীর্ষ পদে থাকা এক নেতা নাম প্রকাশ না করা শর্তে সুপ্রভাতকে বলেন, বিতর্কিত নেতাদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরাসরি রাজনৈতিক দলের পদে আছেন এমন কাউকে খসড়া কমিটিতে রাখা হয়নি।
ওই খসড়া কমিটিতে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির এবং আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদীকে মহাসচিব হিসেবে রাখা হয়। ওই কমিটির বর্তমান পরিধি ৩০-৩৮ সদস্যবিশিষ্ট হতে পারে। অচিরেই এ নতুন কমিটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে। তবে তৈরি করা খসড়া কমিটি নিয়ে হেফাজত সংশ্লিষ্টরা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি নন।
নতুন কমিটিতে হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আমির প্রয়াত আল্লামা শফীর অনুসারী বেশ কয়েকজনকে রাখা হবে নতুন কমিটিতে। কিন্তু তাদের নাম এখনও স্পষ্ট করে কেউ জানাতে পারেননি। গত বছরের ১৫ নভেম্বর জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির করে ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট হেফাজতের কমিটি ঘোষণা করা হয় সেখানে হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির আহমদ শফীর অনুসারী কাউকে রাখা হয়নি। পরে রাখার কথা থাকলেও তা শেষ পর্যন্ত হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে আল্লামা শফি’র পুত্র আনাস মাদানীর মোবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে মাওলানা আনাস মাদানীর এক অনুসারী জানান, তাদের সঙ্গে আহ্বায়ক কমিটির কোন নেতা এখনও পর্যন্ত যোগাযোগ করেননি। নতুন কমিটিতে তাদের রাখা হলে তারা থাকবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব আসলে পরে তা আমাদের জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
সূত্র জানিয়েছে, নতুন কমিটির খসড়ায় মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মাওলানা সালাউদ্দিন নানুপুরী, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান, মাওলানা মুহিব্বুল হক (সিলেট), মাওলানা উবায়দুর রহমান মাহবুব (বরিশাল) সহ কয়েকজনকে নায়েবে আমির হিসেবে রাখা হয়েছে। এছাড়া যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে রয়েছেন মাওলানা সাজিদুর রহমান (বি-বাড়িয়া), মাওলানা আবদুল আউয়াল (নারায়ণগঞ্জ) ও মাওলানা আরশাদ রহমানী।
এদিকে কমিটি থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন সদ্যবিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, নাছির উদ্দিন মুনির, খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, সহকারী মহাসচিব হাসান জামিল, প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়জী, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মুফতি হারুন ইজহারসহ নানা ইস্যুতে বিতর্কে জড়িয়ে পড়া হেফাজতের নেতারা।
একইভাবে আল্লামা আহমদ শফীর হত্যা মামলার অভিযুক্ত নেতাদেরও বাদ দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। এছাড়া সদ্যবিলুপ্ত কমিটিতে একক আধিপত্য বিস্তারকারী ‘রাবেতা’ ও ‘জমিয়ত’ সিন্ডিকেটও ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
কমিটি নিয়ে হেফাজত নেতাদের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা যোগাযোগ রাখছে। তবে কবে নাগাদ এই বর্ধিত কমিটি ঘোষণা হবে তা নিশ্চিত করে বলেনি সংশ্লিষ্ট সূত্র।
প্রসঙ্গত, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে সহিংসতার ঘটনায় অন্তত ১৭ জনের প্রাণহানি হয়। এসব সহিংসতার পেছনে জড়িত থাকার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ পর্যন্ত ১৫৪টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় হেফাজতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই মামলাগুলোর তদন্ত করছে পুলিশ, ডিবি, সিআইডি ও পিবিআই।
এর মধ্যে হেফাজতের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়েল রিসোর্টে নারীসহ জনতার হাতে ধরা পড়েন। এতে নতুন করে বিতর্কের মুখে পড়ে হেফাজত।