নিজস্ব প্রতিনিধি, হাটহাজারী »
মেঘ-রোদ্দুর লুকোচুরি খেলায় হতাশ বঙ্গবন্ধু হেরিটেজ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর ডিম সংগ্রহকারীরা। মুষলধারে বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও বজ্রপাত হলেই হালদায় মা মাছ ডিম ছাড়ে। নদীতে মা মাছের আনাগোনা বাড়লেও এখনো ডিম ছাড়েনি। প্রতি বছর এপ্রিল-মে মাসের মাঝামাঝি থেকে জুন মাসের যে কোনো পূর্ণিমা ও অমাবস্যার কয়েকদিন আগে-পরে জোয়ার ও ভাটার সময় কার্প জাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল, কালি বাউস) মা মাছ হালদা নদীতে ডিম ছাড়ে। গত শুক্রবার পূর্ণিমার জো শুরু হয়েছে, মেঘের গর্জনসহ ভারিবর্ষণ হলেই ডিম ছাড়বে মা মাছ।
এদিকে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়বে এমন আশায় হালদার পাড়ে নির্ঘুম রাত কাঠাচ্ছেন ডিম সংগ্রহকারীরা। নৌকা আর বাঁশের ভেলার ওপর দাঁড়িয়ে জাল ফেলে ডিমের অপেক্ষায় রয়েছেন শত শত ডিম সংগ্রহকারীরা।
গতকাল রোববার বিকালে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়েনি। যদিও গত শুক্রবার থেকে নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে নড়াচড়ায় মা মাছের পেট থেকে খসে পড়া ৭ থেকে ৮টি করে ডিম উঠেছে জেলেদের জালে। তবে এটি নমুনা ডিমও নয়, অপরিপক্ক ডিম বলে দাবি হালদা বিশেষজ্ঞদের।
গত শুক্রবার শুরু হওয়া পূর্ণিমার জো শেষ হবে আগামী ১৮ মে। এর মধ্যে বজ্রপাতসহ মুষলধারে বৃষ্টি হলেই মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে বলে ধারণা করছে ডিম সংগ্রহকারীরা। এখন কেবল অপেক্ষা লাগাতার বজ্রসহ বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের। হালদা নদীর মা মাছ তথা জীববৈচিত্র্য রক্ষায় মাঠে রয়েছে হাটহজারী উপজেলা প্রশাসন। গত শনিবার রাতে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার সময় অভিযান পরিচালনা করে নৌকাসহ ৩০০টি বড়শি, মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম ও কেমিক্যাল জব্দ করেছে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন।
গতকাল রোববার বিকালে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহিদুল আলম সুপ্রভাতকে বলেন, মাছ ধরার প্রচেষ্টার দায়ে এক ব্যক্তিকে ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এসময় অবৈধভাবে মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
হালদা গবেষকদের ধারণা, চলতি প্রজনন মৌসুমের শেষ পর্যন্ত নদীর পরিবেশের স্থিতিশীলতা ও প্রাকৃৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বর্তমান পরিস্থিতির মতো বজায় থাকলে হালদায় কার্পজাতীয় অর্থাৎ রুই, কাতলা, মৃগেল, কালি বাউস মা মাছের ডিম ছাড়ার নজির তৈরি হতে পারে।
ডিম সংগ্রহকারী আশু বড়ুয়া বলেন, ভারী বৃষ্টি হলে নমুনা ডিম ছাড়তে পারে। এখন ডিম সংগ্রহকারীরা প্রস্তুত রয়েছেন। ডিমের অপেক্ষায় নদীতে অবস্থান করছেন তারা। প্রস্তুত রাখা হয়েছে মাটির কুয়াগুলো। হ্যাচারি গুলোও প্রস্তুত রয়েছে।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহিদুল আলম সুপ্রভাতকে বলেন, যে কোন সময় হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে। সেজন্য ডিম সংগ্রহকারীরা প্রস্তুত। পাশাপাশি হালদা নদীর উপর কঠোর নজরদারি চলছে। কেউ যেন মাছ শিকার করতে না পারে। হালদার মা মাছের ডিম এবং পোনাতে কেউ যেন ভেজাল দিতে না পারে সেদিকেও নজর রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।