নিজস্ব প্রতিনিধি, চকরিয়া »
চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের গয়ালমারা পয়েন্টে রেললাইন সন্নিকট এলাকায় পাহাড় কেটে মাটি লুটের মহোৎসব চলছে। স্থানীয় ১০ জনের একটি পাহাড় খেকোচক্র রেললাইনের উন্নয়ন কাজে নিয়োজিত কতিপয় লোকজনের যোগসাজশে চালাচ্ছে পরিবেশ বিধ্বংসী এই কারবার। এ কারণে নতুন করে বিরানভূমিতে পরিণত হচ্ছে ওই এলাকার বনবিভাগের চুনতি রেঞ্জের হারবাং অভয়ারণ্য বনাঞ্চলের দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কয়েকটি পাহাড়। পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে সদ্য চালু হওয়া দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেললাইনের পাটাতন। রেললাইনের সন্নিকট এলাকা থেকে মাটি কাটার কারণে যে কোন সময় পাটাতন খুলে গিয়ে রেল চলাচলে বড়ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় পরিবেশ সচেতন মহলের অভিযোগ, সপ্তাহের বেশিদিন আগে শুরু করা সরকারি বনাঞ্চলের পাহাড় কাটার মহোৎসব টেকাতে স্থানীয় বনবিভাগ কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তর আইনি কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, পাহাড় কেটে মাটি লুটের ঘটনায় জড়িত রয়েছেন স্থানীয় ১০/১২ জনের একটি সিন্ডিকেট চক্র। তারা স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার কওে এ পরিবেশ বিধ্বংসী কাজ চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ স্থানীয় পরিবেশ সচেতন লোকদের।
শনিবার হারবাং ইউনিয়নের গয়ালমারা এলাকায় গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হারবাং ভান্ডারীরডেবা এলাকার মোহাম্মদ শফির ছেলে মোজাম্মেল হক, গয়ালমারা এলাকার তুরা আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলী, করমমুহুরী পাড়া এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে আলমগীর, ভান্ডারীরডেবা এলাকার নুরুল আমিনের ছেলে নবাব মিয়া, গয়ালমারা এলাকার মোহাম্মদ মুছার ছেলে হেলাল উদ্দিন, মোহাম্মদ তফসির, ভান্ডারীরডেবা এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে মোহাম্মদ আলী, কালা সিকদারপাড়ার জসিম উদ্দিনের ছেলে জাহেদুল ইসলাম লিটন ও নুনাছড়ি এলাকার ইসলাম সওদাগরের ছেলে গিয়াস উদ্দিনের নেতৃত্বে রেললাইনের কাজে জড়িত স্কেভেটরের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আঁতাত করে পাহাড়ের মাটি কেটে ট্রাকে করে লুটে নিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, কিছুদিন ধরে পাশের পাহাড় কেটে মাটি নিয়ে রেললাইনের দুইপাশের এপ্রোচ অংশ ভরাট ও ড্রেন নির্মাণ কাজ করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশনের লোকজন। সেজন্য সেখানে একটি স্কেভেটর গাড়ি এনে মাটি কেটে তুলে নিয়ে এপ্রোচ অংশে বসানো হচ্ছে। এরপর সেখানে বসানো হবে ঘাস।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা রেললাইনের এপ্রোচ অংশের জন্য মাটি কাটা শুরু করলে স্থানীয় ১০ জনেন ওই সিন্ডিকেট গোপনে আঁতাত করে স্কেভেটর গাড়িচালক ও সুপারভাইজারের সঙ্গে। দিনে স্কেভেটরটি রেললাইনের নির্ধারিত কাজ করলেও রাতের বেলায় অভিযুক্ত সিন্ডিকেট চক্রের হয়ে পাহাড় কেটে মাটি লুট করা হচ্ছে। যদিও ঘটনাটি জানেন না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশনের কর্মকর্তারা। এভাবে প্রতি রাতে ওই এলাকা থেকে ৫০ থেকে ৬০ ট্রাক মাটি লুটে নিচ্ছে ওই চক্রের লোকজন।
অবশ্য ইতোমধ্যে মাটি কাটার ঘটনাটি নিশ্চিত হয়ে দু’দিন আগে রাতের বেলায় সেখানে অভিযান পরিচালনা করেছেন চুনতি অভয়ারণ্য রেঞ্জ অফিসার মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে বনকর্মীরা। ধাওয়া দিয়েও সেইদিন জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি বনকর্মীরা।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের চুনতি অভয়ারণ্য রেঞ্জ অফিসার মাহমুদ হোসেন বলেন, আমরা গয়ালমারা এলাকায় পাহাড় কেটে মাটি লুটের খবর পেয়ে শনিবার রাতে সেখানে অভিযান চালিয়েছি। খবর পেয়ে লুটেরা চক্রের লোকজন পালিয়ে যায়। এখন সেখানে গতিরোধ দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সেখানে আমরা টহল তৎপরতা জোরদার করেছি।
বিষয়টি প্রসঙ্গে রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন এর ডেপুটি প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান বলেন, প্রকল্পের হারবাং গয়ালমারা এলাকায় আমাদের লোকজন রেললাইনের এপ্রোচ অংশ ভরাট ও ড্রেন নির্মাণ কাজ করছেন। মূলত রেললাইনের নিচ থেকে মাটি তুলে তা এপ্রোচ অংশে বসানো হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বনবিভাগের রেঞ্জ অফিসার, বিট অফিসারসহ ইতোমধ্যে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। এসময় সবাই দেখেছে, আমাদের স্কেভেটর গাড়ি আমাদের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে স্থানীয় একটা মহল মাটি লুটের অপচেষ্টা চালিয়েছে বলে আমরাও শুনেছি। কিন্তু আমাদের স্কেভেটর দিয়ে বহিরাগত লোকজনের আঁতাতে পাহাড় কাটা হচ্ছে না। এ ধরনের ঘটনায় জড়িত প্রমাণপেলে আমরা আইনি পদক্ষেপ নেব।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, রেললাইন এরিয়ার পাহাড় কেটে মাটি লুটের ঘটনায় বনবিভাগ কিংবা অন্য কোন সংস্থা আমাকে জানায়নি। তারপরও পাহাড় কাটা চলতে থাকলে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হবে।