বিবিসি »
বিমান হামলা করে একজন শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যার শোধ নিতে হামলার ক্রমবর্ধমান আশংকার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন দ্রুতই ইসরায়েলে হামলা করতে পারে ইরান।
সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে ওই হামলার ইসরায়েল বিষয়টি স্বীকার না করলেও ব্যাপকভাবে এই ধারণাই তৈরি হয়েছে যে ওই হামলার পেছনে তাদেরই হাত আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা সিবিএস নিউজকে বলেছেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি বড় ধরনের হামলা শিগগিরই হতে পারে।
ইসরায়েল বলেছে দেশটি নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সক্ষম।
ইরানের উদ্দেশ্যে মি. বাইডেন বলেছেন, ‘হামলা করো না’।
“আমরা ইসরায়েলের সুরক্ষায় নিবেদিত। আমরা ইসরায়েলকে সমর্থন করবো। ইসরায়েলের সুরক্ষায় সহায়তা করবো এবং ইরান সফল হবে না”।
ইরান হামাসকে সমর্থন যোগায়, যারা গাজায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এছাড়া পুরো অঞ্চল জুড়েই প্রক্সি গ্রুপকে সহায়তা করে দেশটি। এর মধ্যে আছে লেবাননের হেজবুল্লাহ, যারা প্রায়শই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা করে।
শুক্রবার হেজবুল্লাহ জানিয়েছে, তারা লেবানন থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে কয়েক ডজন রকেট নিক্ষেপ করেছে।
ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ এর একজন মুখপাত্র বলেছেন প্রায় চল্লিশটির মতো মিসাইল ও দুটি বিস্ফোরক ড্রোন ছোঁড়া হয়েছিলো। তবে ক্ষয়ক্ষতির কোন খবর পাওয়া যায়নি এবং পাল্টা কোন পদক্ষেপের কোন ইঙ্গিতও পাওয়া যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা সিবিএস টেলিভিশনকে বলেছেন ইরানের দিক থেকে যে কোন হামলা থেকে আত্মরক্ষায় আলাদা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
বিবিসির নিরাপত্তা বিষয়ক সংবাদদাতা ফ্রাঙ্ক গার্ডনার বলেছেন ইরান ইচ্ছে করেই মধ্যপ্রাচ্য ও ওয়াশিংটনকে অনুমানের মধ্যে রাখছে।
গত পহেলা এপ্রিল দামেস্কে কনস্যুলেটে প্রাণঘাতী হামলার পর ইরানের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলো পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। ইসরায়েল মনে করে লেবানন ও সিরিয়ায় নিজেরা আড়ালে থেকে ইরান যে অস্ত্র সরবরাহ করে তাদের সমর্থিত গ্রুপগুলো সেটি ওই কনস্যুলেট ভবন থেকেই পরিচালিত হতো।
এটা একটি অ্যাকশন বা অবস্থান ধরে রাখার প্রক্রিয়া। শক্ত করে আঘাত করো এবং ইসরায়েল তার বিধ্বংসী শক্তি দিয়ে তার জবাব দিবে। আবার হালকা ভাবে গেলে ইরানকে দুর্বল ও অকার্যকর হিসেবে দেখানোর ঝুঁকি তৈরি হবে ইরানের জন্য।
কৌশলগত দিক থেকে যখন পুরো অঞ্চলের সবাই সতর্ক এবং কী ঘটতে পারে তা যখন যুক্তরাষ্ট্র বলেই যাচ্ছে তখন এখনি কোন জবাব দেয়াটা ইরানের জন্য কোন অর্থ বহন করে না।
তেহরান ও কোম (ইরানের শিয়া মুসলিমদের পবিত্র শহর) এর বাস্তববাদীরা ধৈর্য ধরতে আহবান জানাবেন। কিন্তু সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির মতো বাজপাখি চাইবেন দৃঢ় জবাব দিতে।
তবে ইরান একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ চায় না। উপসাগরীয় অঞ্চলে তার প্রতিবেশীরাও তা চায় না। সেখানকার সরকারগুলো ইতোমধ্যেই ইরানকে ধৈর্য ধরার আহবান জানিয়েছে।
এখন প্রশ্ন হলো কাদের চাওয়া পূর্ণ হবে- বাজপাখি নাকি ঘুঘু।
ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার কারণে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া ইসরায়েলে ভ্রমণের বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে। জার্মানি তাদের নাগরিকদের ইরান ছাড়তে বলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর তাদের কূটনীতিক ও পরিবারবর্গকে তেল আবিব, জেরুসালেম ও বিরসেবা ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে বলেছে।
এসব সতর্কতার মধ্যে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্যদের সাথে বৈঠক করেছেন।
কিছু ইসরায়েলি বলেছেন ইরানের সম্ভাব্য হামলা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন নন।
“আমরা জানি যে আমরা শত্রু দ্বারা পরিবেষ্টিত- উত্তরে, দক্ষিণে, পূর্বে ও পশ্চিমে,” জেরুসালেমের একটি মার্কেটে ড্যানিয়েল কসম্যান বলছিলেন বার্তা সংস্থা এএফপিকে।
“আমরা ভীত নই, আমি তোমাকে বলতে পারি। দেখো মানুষজন বাইরে বেরুচ্ছে”।
তিনদিনের পানি ও খাদ্য এবং দরকারি ঔষধ সঞ্চিত রাখার যে নির্দেশনা তার বাইরে ইসরায়েল সরকার জনগণের উদ্দেশ্যে নতুন কোন নির্দেশ জারি করেনি।
তবে ইসরায়েলের বেতার খবর দিয়েছে যে স্থানীয় কর্তৃপক্ষগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করাসহ সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
গত সপ্তাহে দেশটির সেনাসদস্যদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে এবং এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম আরও জোরদার করা হয়েছে।
দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলার ঘটনায় তের জন নিহত হয়েছিলো। এর মধ্যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদি সহ কয়েকজন সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তা রয়েছেন। তিনি সিরিয়া ও লেবাননে সক্রিয় ইরানের কুদস ফোর্সের সিনিয়র একজন কমান্ডার।
ইসরায়েল এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেনি। তবে তারাই এ হামলার পেছনে রয়েছে বলে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয়।
বেশ কয়েকটি দেশের কর্মকর্তারা হামলা থেকে ইরানকে বিরত রাখার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদের এ আশঙ্কা এ হামলা আঞ্চলিক যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটাতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন চীন, সৌদি আরব ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে কথা বলেছেন ইরানের ওপর তাদের প্রভাব কাজে লাগাতে রাজি করানোর জন্য।
ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের কমান্ডারের সাথে আলোচনার পর শুক্রবার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন হুমকি দু দেশের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করেছে। “আমরা জানি কীভাবে জবাব দিতে হয়”।
ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামাসের হামলার পর গাজায় যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। হামাসের হামলায় বারশ মানুষ নিহত হয় এবং আড়াইশ জনকে হামাস জিম্মি করে।
ইসরায়েল বলছে এখনো ১৩০ জন জিম্মি হয়ে আছে এবং এর মধ্যে ৩৪ জন মৃত।
অন্যদিকে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে ৩৩৬০০ মানুষ গাজায় ইসরায়েলের অভিযানে নিহত হয়েছে যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
এ সংঘাতের মধ্যে ইসরায়েলকে তার উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে প্রায় প্রতিদিনই গুলি বিনিময় করতে হচ্ছে হেজবুল্লাহর বিরুদ্ধে। ইরান সমর্থিত এই গ্রুপটি ইরাক ও ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে এবং ইরাক ও সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলোতে হামলার চেষ্টা করে।
ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরাও লোহিত সাগরে জাহাজে হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। একটি জাহাজ ডুবিয়ে দেয়ার ঘটনাও দেখা গেছে। এর জেরে ইয়েমেনে হুতি অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।