স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণায় পুড়ল বাংলাদেশ

সুপ্রভাত ডেস্ক »

প্রত্যয় ছিল ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙার। শঙ্কা ছিল চাপে ভেঙে পড়ারও। শুরুতে সুমন রেজা গোল এনে দেওয়ার পর শঙ্কার মেঘটা সরে যেতে থাকল একটু একটু করে। পোস্টের নিচে আনিসুর রহমান জিকো ছিলেন বিশ্বস্ত দেয়াল হয়ে। কিন্তু জিকোর লাল কার্ডে বদলে গেল সবকিছু। ১৬ বছর পর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলার আশা জাগিয়ে স্বপ্নভঙ্গের হতাশা নিয়ে ফিরল বাংলাদেশ। খবর বিডিনিউজের।

মালদ্বীপের রাজধানী মালের রাশমি ধান্দু স্টেডিয়ামে বুধবার নেপালের বিপক্ষে ১-১ ড্র করে বাংলাদেশ। নবম মিনিটে দলকে এগিয়ে নেন উত্তর বারিধারার ফরোয়ার্ড সুমন। শেষ দিকে উজবেকিস্তানের রেফারি আখরল রিসকুলায়েভের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে পেনাল্টি থেকে সমতা ফেরান অঞ্জন বিস্তা।

আগামী ১৬ অক্টোবরের ফাইনাল খেলতে হলে জিততেই হতো বাংলাদেশকে। কিন্তু এই ড্রয়ে চার ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে রাউন্ড রবিন লিগ থেকে ছিটকে গেল অস্কার ব্রুসনের দল। ৭ পয়েন্ট নিয়ে প্রথমবারের মতো সাফের ফাইনালে উঠল নেপাল।

২০০৩ সালে প্রথম ও সবশেষ সাফের শিরোপা জেতা বাংলাদেশ ২০০৫ সালে সবশেষ খেলেছিল ফাইনাল। নেপালের বিপক্ষে ড্রয়ে সে অপেক্ষা আরও বাড়ল। গত চার আসরেই গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে পড়ার হতাশা সঙ্গী ছিল দলের।

চারটি পরিবর্তন এনে নেপাল ম্যাচের সেরা একাদশ সাজান ব্রুসন। কার্ডের কারণে ছিলেন না ইয়াসিন আরফাত। রহমত মিয়া, সোহেল রানা, মতিন মিয়ার জায়গা হয়নি। তাদের বদলে টুটুল হোসেন বাদশা, বিশ্বনাথ ঘোষ, রাকিব হোসেন, সুমনকে খেলান কোচ।

শুরুর দিকে বলের নিয়ন্ত্রণে নেপাল কিছুটা আধিপত্য করলেও দ্রুত গুছিয়ে ওঠে বাংলাদেশ। এরপরই ওই গোল। বাঁ দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা রাকিব হোসেন ফাউলের শিকার হলে ফ্রি কিক পায় বাংলাদেশ। জামালের ফ্রি কিকে নেপালের এক খেলোয়াড় মাথা ছোঁয়ালেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি। বক্সে ভালো অবস্থায় থাকা সুমন জাল খুঁজে নেন।

সাফের চলতি আসরে এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো ফরোয়ার্ড গোল পেলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১-০ গোলে জেতা ম্যাচে ডিফেন্ডার তপু বর্মন এবং শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে ১-১ ড্র ম্যাচে আরেক ডিফেন্ডার ইয়াসিন লক্ষ্যভেদ করেছিলেন।

একটু পর সাদউদ্দিনের শট বাইরে যায়। ২৩তম মিনিটে বিস্তার ফ্রি কিক অনেকটা লাফিয়ে ফিস্ট করে আটকান আনিসুর রহমান জিকো। দুই মিনিট পর বক্সের ডান দিক দিয়ে অরক্ষিত ফরোয়ার্ড সাদউদ্দিন তাড়াহুড়ো করে শট নেন। বল বেরিয়ে যায় দূরের পোস্টের অনেক বাইরে দিয়ে।

প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে আয়ুশ খালানের হেড ক্রসবারের উপর দিয়ে গেলে এগিয়ে থাকার স্বস্তি নিয়ে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে মাঝমাঠ দিয়ে আক্রমণে উঠেছিলেন রাকিব। কিন্তু ডিফেন্ডাররা পথ আগলে দাঁড়ানোর পর দুই পাশে থাকা সতীর্থকে বল না বাড়িয়ে নিজেই চেষ্টা করেন। বল উড়ে যায় অনেক উপর দিয়ে।

সমতায় ফিরতে মরিয়া নেপালের দুটি আক্রমণ ফিরিয়ে বাংলাদেশের ত্রাতা জিকো। ৫০তম মিনিটে আয়ুশের ফ্রি কিক পাঞ্চ করে ফেরানোর তিন মিনিট পর অনন্ত তামাংয়ের ব্যাক হেড বিপদমুক্ত করেন তিনি।

৫৫তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণের সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন সুমন। গায়ের সঙ্গে সেঁটে থাকা অঞ্জনকে গতি দিয়ে পরাস্ত করে বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন এই ফরোয়ার্ড। চিপ, লব করলে গোল হতে পারত, কিন্তু গোলরক্ষক বরাবর শট নিয়ে হতাশ করেন তিনি।

১০ মিনিট পর জিকো আবারও দলকে বাঁচান। এবার বসুন্ধরা কিংস গোলরক্ষক অনেকটা লাফিয়ে উঠে আটকান সতীর্থের ক্রসে নবযুগ শ্রেষ্ঠার হেড।

৮০তম মিনিট বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। বিপলু আহমেদের ব্যাক পাস নবযুগ ধরার আগেই ছুটে এসে বিপদমুক্ত করেন জিকো। কিন্তু তার ধাক্কায় পড়ে যান নেপালের ফরোয়ার্ড। জিকো সরাসরি লালকার্ড পাওয়ায় ১০ জনের দলে পরিণত হয়। পোস্ট সামলানোর দায়িত্ব ওঠে আশরাফুল ইসলাম রানার কাঁধে।

ভারতের বিপক্ষে ম্যাচেও এমন পরিস্থিতিতে পড়েছিল বাংলাদেশ। একজন কম নিয়েও ওই ম্যাচে ইয়াসিনের গোলে ঘুরে দাঁড়ানোর দারুণ গল্প লিখে ড্র করেছিল দল। এ ম্যাচেও তাই আশা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের দুই মিনিট বাকি থাকতে বদলে যায় দৃশ্যপট।

বক্সে হেড করতে গিয়ে অনেকটা ফলো থ্রুয়ে পড়ে যান অঞ্জন। বেশ কয়েকবার রিপ্লে দেখানো হলেও সাদউদ্দিনের সঙ্গে তার তেমন কোনো সংঘর্ষ হতে দেখা যায়নি। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের স্তম্ভিত করে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। ঠিক দিকে ডাইভ দিলেও রানা আটকাতে পারেননি অঞ্জনের স্পট কিক।

বাকিটা সময় নির্বিঘেœ পার করে দিয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠার উৎসবে মাতে নেপাল। ২০১১, ২০১৩ ও ২০১৮ সালের আসরে সেমি-ফাইনাল খেলা এতদিন ছিল দলটির সেরা সাফল্য।

২০১৮ সালে নিজেদের মাঠেও এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল বাংলাদেশের। বাঁচা-মরার লড়াইয়ে নেপালের কাছে ২-০ গোলে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে গিয়েছিল দল। এবার ড্রয়ে শেষ হলো সব আশা।