নিজস্ব প্রতিবেদক »
বাজারে বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে পণ্যের দামে তেমন পরিবর্তন হয়নি। যোগান থাকাতেই শীতকালীন সবজির দাম একটু কম। তবে শাকসবজির সবজির দাম যেভাবে কমার কথা তা কমছে না বলে ক্রেতারা মন্তব্য করেন। অন্যদিকে অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম না কমায় এবং বাজারভেদে পণ্যের দামের পার্থক্য ব্যবসায়ীদের মনগড়া বলে দাবি করেন ক্রেতারা। এতে প্রশাসনের বাজার তদারকি করা জরুরি বলে মনে করছেন তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর রিয়াজউদ্দিন, বক্সিরহাট ও কাজীর দেউড়ি বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ পণ্যের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। কিছু সবজির দাম ওঠানামা করেছে।
নগরীর অন্যান্য বাজারের তুলনায় সবজি, মাছ ও মাংসের দাম কাজীর দেউড়ি বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে এ বাজার নিয়ে ক্রেতাদের রয়েছে অভিযোগ। এ ব্যাপারে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা সৈয়দ মুহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ সুপ্রভাতকে বলেন, ‘আমি নিয়মিত কাজীর দেউড়ি বাজারে আসি। এই বাজারে অন্যান্য বাজারের চেয়ে সব জিনিসের দাম একটু বাড়তি। যে আলু অন্য বাজারে ২০ টাকা তা এ বাজারে ৩০ টাকা। আরেক দোকানদার বেগুন বিক্রি করছে ৮০ টাকা কেজি ধরে। অন্যত্র যে সরপুঁটি মাছ কেজি ২০০ টাকা ক্রয় করি তা এখানে চারশো টাকায় বিক্রি করছে। একেক দোকানদার তাদের ইচ্ছামতো করে বিক্রি করছে। এসব বিষয়ে প্রশাসনের তদারকি প্রয়োজন।’
জামালখান থেকে আসা তাহমিনা ফেরদৌস কলি নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘এই বাজারে মাছ ও মাংসের দাম বাড়তি নেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য বাজারে যে গরুর মাংসের দাম সাড়ে সাতশো টাকা তা এখানে ৯০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর খাসির মাংস ১০০০ টাকার উপরে। এখানে ক্রেতাদেরকে তাদের মনের মতো করে দাম বলছে।’
ডেবারপাড় থেকে আসা মাসুদুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘অন্য বাজার থেকে কাজীর দেউড়ি বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় শাকসবজি, মাছ, মাংসের দাম বেশি।’
শাকসবজির বাজার প্রসঙ্গে কাজীর দেউড়ি বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো. দিদার বলেন, ‘আমরা রিয়াজউদ্দিন বাজার থেকে কিনে বিক্রি করি। আমাদের সবজিতে কোন ধরনের ফরমালিন ব্যবহার করা হয় না। তাছাড়া আমরা কেজিপ্রতি কয়েক টাকা লাভে বিক্রি করি।’
ভোক্তাদের দামবৃদ্ধির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ক্যাশমেমো দেখিয়ে বলেন, ‘আপনারা দেখুন, আমরা কেমন দাম বাড়তি নিচ্ছি। এখানে ভালো মানের সবজি বিক্রি করি। কাজেই একটু দাম হবেই।’
বাজারে প্রতি কেজি সবজির দাম- বেগুন ৪০ থেকে ৬০ টাকা, শিম ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, বরবটি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, েেঢঁড়স ৮০ টাকা, শশা ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও ঝিঙ্গা ১০০, করলা ১০০ এবং পটোল ৭০ টাকা, মূলা ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া শীতকালীন সবজির মধ্যে প্রতিটি ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, শালগম ২৫ টাকা, পেঁপে ২৫ টাকা, আলু (নতুন) ২৫ থেকে ৩০ টাকা ও পুরাতন আলু ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে বিদেশি সবজির মধ্যে ক্যাপসিকাম ১১০ টাকা, সবুজ কপি প্রতি পিস ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তাছাড়া কাঁচা মরিচ এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
স্থিতিতে মাছ-মাংস ও ডিমের দাম
বাজারে সাগরের মাছের যোগান বাড়লেও দাম কমেনি। প্রতি কেজি রূপচাঁদা ৬৫০ থেকে ১০০০ টাকা, বড় সাইজের ইলিশ (এক কেজির উপরে) ১১০০ থেকে ১৩০০ টাকা, কোরাল ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, মাইট্যা ৬৫০ টাকা, বড় পোয়া ৩৫০, ভোল পোয়া ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, রুই ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, টেংরা ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, পাবদা (প্রজেক্ট) ৪০০, কাপ্তাই লেকের পাবদা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, লইট্যা ১৫০ টাকা, চাষের কই মাছ ৪৫০, চাষের পাঙাস ১৮০ থেকে ২০০, শিং মাছ ৫০০ থেকে ৭০০, শোল ৬৫০ টাকা, চিংড়ি ১০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
মাছের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাজীর দেউড়ি বাজারের মাছ বিক্রেতা রুস্তম আলী বলেন, ‘এই বাজারের মাছে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় না। পচা মাছও বিক্রি করা হয় না। যার কারণে একটু দাম বেশি।’
এদিকে মাংসের বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০, লাল লেয়ার ২৫০ টাকা, দেশি মুরগি ৪৭০ টাকা, পাকিস্তানি সোনালি মুরগি ২৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেড় কেজি ওজনের দেশি হাঁস প্রতিটি ৮০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস প্রতি কেজি ৮৫০ টাকা এবং ছাগলের মাংস ৬৫০ ও খাসির মাংস কেজি ১০০০ টাকা। একই সঙ্গে লাল ডিম ডজন ১১৫ টাকা ও হাঁসের ডিম ১৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাজীর দেউড়ির মুরগি ব্যবসায়ী খাজা পোল্ট্রির স্বত্বাধিকারী আব্দুল হাকিম বলেন, এক মাসের ব্যবধানে মুরগির দাম কমেছে। গত মাসে সোনালি মুরগি ৩৭০ টাকার উপরে ছিল।
চালের দাম বেড়েছে
এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম কেজিতে ৩ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে। গতকালের খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৫৭ থেকে বেড়ে ৬০ টাকা, জিরাশাইল ৭৩ থেকে ৭৫ টাকা, নাজিরশাইল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, পাইজাম ৫০ টাকা, কাটারিভোগ ৮২ থেকে ৯০ টাকা, চিনিগুড়া ১১৮ থেকে ১২৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। তাছাড়া শীতকালীন বিন্নি চাউলের চাহিদাও বৃদ্ধিও কারণে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ১২৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
অপরিবর্তিত অন্যান্য পণ্যের দাম
অন্যান্য পণ্যের দামে কোনো পরিবর্তন হয়নি। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি মসুর ডাল ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা, ভারতীয় মসুর ডাল ১০০ থেকে ১০৫ টাকা, মটর ডাল ৬৫ টাকা, খেসারি ৭২ টাকা, মটর ৬৮ টাকা, ছোলা ৭৫ টাকা, পেঁয়াজ ৪২ থেকে ৪৫ টাকা, চায়না আদা ১৭০ টাকা ও বার্মার আদা ৮০ ও রসুন ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।