রাজু কুমার দে, মিরসরাই »
রয়েছে সুন্দর কয়েকটি অফিস কক্ষ। টিকেট কাউন্টার থেকে শুরু করে সব রয়েছে মিরসরাই রেলস্টেশনে। কিন্ত স্টেশন থাকলেও এখানে থামেনা কোন ট্রেন। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে স্টেশনটি। এদিকে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় স্টেশন থেকে চুরি হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রাংশ। ২০২৬-২০২৭ অর্থ বছরের চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও আবার থমকে গেছে উদ্যোগ।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ১৮৯৫ সালের ১ জুলাই কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ১৪৯ কিলোমিটার মিটারগেজ রেলপথ নির্মিত হয়েছিলো। আসাম বেঙ্গলে রেলওয়ের থাকাকালীন সেই ব্রিটিশ আমল থেকে এ স্টেশনগুলোতে নিয়মিত ট্রেন থামত। ফলে পুরো উপজেলার মানুষ ছিলো ট্রেননির্ভর। ভ্রমণ, সবজি, ফলমূল আমদানি-রফতনিসহ বিভিন্ন জরুরি কাজে ট্রেনই ছিল প্রিয় পরিবহন। একসময় এসব স্টেশন থেকে ভারত, পাকিস্তানে মালামাল আনা নেওয়া হতো। কিন্তু ২০০৮ সালে আয় কমে যাওয়া ও লোকবল সংকটের কারণে স্টেশনটি বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে মিরসরাই সদর রেল স্টেশন উন্নয়ন কার্যক্রম শেষে দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকা এই স্টেশনটি চালু হবার জন্য রেল স্টেশনের আধুনিক সিগন্যালিং, নতুন ডিজিটাল কক্ষ নির্মাণ, লাইন সংস্কারসহ বিভিন্ন আধুনিকায়ন কাজ শেষ করা হয়। কিন্তু চালুর উদ্যোগে পেড়ে ভাটা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, স্টেশনের কক্ষগুলোতে গরু-ছাগল পালন, জুয়ার আসর, মাদকসেবীর আড্ডাসহ নানা অনিয়ম চলছে। স্টেশনটি বন্ধ হওয়ায় ফলে নষ্ট হচ্ছে রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম। বেদখল হয়ে রয়েছে অনেক জায়গা। রেলস্টেশনে কোন কর্মকর্তা কর্মচারী ও পাহারাদার চোখে পড়েনি। চুরি হচ্ছে যন্ত্রাংশ। অনেক স্টেশনের সামনে ধানসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্য শুকাচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা বৃদ্ধ আবুল কাশেম বলেন, আমরা ট্রেনের মাধ্যমে শাকসবজি ও ফলমূল দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করতাম। কিন্তু ১৫ বছর ধরে স্টেশনটি বন্ধ থাকায় কৃষক ও চাকরিজীবীরা বিপাকে পড়েছে। তাই দ্রুত স্টেশনটি চালু করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চিনকি আস্তানা স্টেশন মাস্টার সিরাজুল ইসলাম বলেন, মিরসরাই রেল স্টেশনটি খুব তাড়াতাড়ি চালু হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। চালুর উদ্দেশ্যে স্টেশনে অনেক উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। একটা স্টেশন বন্ধ থাকলে তার পরবর্তী স্টেশনটির সাথে প্রপার সিগন্যাল পাওয়া যায় না। যার ফলে ট্রেন নিদিষ্ট গতিতে চলাচল করতে পারে না।
বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রাম (পূর্ব) মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেন, মূলত লোকবল স্বল্পতায় দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ এই স্টেশনটি বন্ধ রয়েছে। স্টেশনের গুরুত্ব বিবেচনা করে বন্ধ হওয়া বিভিন্ন স্টেশন চালু হওয়ার কথা রয়েছে। আশা করছি তারই ধারাবাহিকতায় মিরসরাই স্টেশনটি পর্যায়ক্রমে চালু হবে। তবে কবে নাগাদ চালু হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।